সহবাসকালীন (লিভ-ইন) সহমতের ভিত্তিতে যৌন সম্পর্ক ধর্ষণ নয়। সাম্প্রতিক এক মামলার শুনানিতে এই পর্যবেক্ষণ সুপ্রিম কোর্টের। বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েও লিভ-ইনে যৌন সম্পর্কে যদি সহমত থাকে, সেটাও ধর্ষণ বলে বিবেচিত নয়। এমনটাই জানিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত। লিভ-ইনে থাকা ২ তথ্য-প্রযুক্তি কর্মীর মামলার প্রেক্ষিতে সোমবার এ কথা বলেছে সুপ্রিম কোর্ট। এমনকি বিয়ের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গে সহমতে হওয়া যৌন সম্পর্ক ধর্ষণ বলে বিবেচিত নয়। সেদিন শুনানিতে এই পর্যবেক্ষণ দিয়েছে প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদের বেঞ্চ।
মামলার সূত্রে জানা গিয়েছে, বহুদিন লিভ-ইনে ছিলে দুই তথ্য-প্রযুক্তি কর্মী। বিয়ের প্রতিশ্রুতিতে তাঁদের মধ্যে যৌন সম্পর্ক হয়। প্রায় ৫ বছর ধরে একসঙ্গে থাকার পর তাঁদের সম্পর্কে টানাপড়েন তৈরি হয় এবং সম্পর্ক ভেঙে যায়। পরবর্তীকালে ওই যুবক অন্য এক তরুণীকে বিয়ে করেন। কিন্তু সেই তরুণের প্রাক্তন লিভ-ইন পার্টনার তাঁর বিরুদ্ধে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধর্ষণের মামলা দায়ের করেন।
সেই মামলার শুনানি চলছে প্রধান বিচারপতি বোবদে, বিচারপতি এ এস বোপান্না এবং ভি রামাসুব্রহ্মমণিয়মের বেঞ্চে।বেঞ্চের বক্তব্য, ‘বিয়ের মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া যেমন ঠিক নয়। বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা ভঙ্গ করাও উচিত নয় কোনও মহিলারও। কিন্তু তার অর্থ এই নয়, দীর্ঘদিন ধরে সহবাস এবং সহমতের ভিত্তিতে যৌন মিলনকে ধর্ষণ বলে দেগে দেওয়া যায়।’
ওই তরুণের আইনজীবী বিভা দত্ত মাখিজা আদালতে যুক্তি দেন, ‘সহমতের ভিত্তিতে যৌন সম্পর্ককে যদি ধর্ষণ হিসেবে ধরা হয়, এবং তার জেরে কেউ যদি গ্রেফতার হন, সেটা বিপজ্জনক প্রবণতা হয়ে উঠতে পারে।‘ উল্টো দিকে অভিযোগকারিণীর আইনজীবী আদিত্য বশিষ্ঠের পাল্টা সওয়াল, ‘ওই যুবক গোটা বিশ্বের সামনে ঘোষণা করেছেন তাঁরা স্বামী-স্ত্রীর মতো থাকছেন এবং একটি মন্দিরে বিয়ে করেছেন। কিন্তু পরবর্তীকালে সেই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছেন এবং তাঁর মক্কেলকে শারীরিক নিগ্রহ ও আর্থিক শোষণ করেছেন।‘
সওয়াল-জবাব শেষে ওই যুবককে ৮ সপ্তাহের জন্য গ্রেফতারিতে সুরক্ষাকবচ দিয়ে আগাম জামিন মঞ্জুর করেছে শীর্ষ আদালত। ২০১৮ সালে এই ধরনেরই ২টি মামলাতেও প্রায় একই ধরনের পর্যবেক্ষণ ছিল শীর্ষ আদালতের। ওই ২ মামলায় বলা হয়েছিল, কোনও মহিলা স্বেচ্ছায় কোনও পুরুষের সঙ্গে একত্রে স্বামী-স্ত্রীর মতো থাকলে সহমতের ভিত্তিতে যৌন সম্পর্ক এবং ধর্ষণের মধ্যে পার্থক্য করা কঠিন। ধর্ষণ এবং সহমতের ভিত্তিতে যৌন সম্পর্কের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে বলেও মামলায় উল্লেখ করেছিল সুপ্রিম কোর্ট।