রাজ্যের মন্ত্রীর বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগ করা সরকারি ঠিকাদারের রহস্যমৃত্যু। ঘটনা ঘিরে তোলপাড় কর্নাটকে। মঙ্গলবার সকালে কর্নাটকের উদুপির একটি হোটেলে ওই ঠিকাদারের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, এদিন সকালে উদুপির শাম্ভবী হোটেল থেকে সন্তোষ পাটিল নাম বছর চল্লিশের ওই ঠিকাদারের দেহ উদ্ধার হয়েছে। ওই ব্যক্তি আত্মহত্যা করেছেন বলেই প্রাথমিক তদন্তে অনুমান পুলিশের।
মৃত সন্তোষ পাটিল সম্প্রতি বিজেপি শাসিত কর্নাটকের গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী কে এস ঈশ্বরাপ্পার বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগ এনেছিলেন। মৃত ঠিকাদারের অভিযোগ ছিল, বিজেপি নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী কে এস ঈশ্বরাপ্পা এক বছর ধরে সরকারি কাজের জন্য বিল পাশের ক্ষেত্রে টাকা চেয়ে তাঁকে হয়রানি করছিলেন। এমনকী মৃত পাটিল আরও জানিয়েছিলেন, তাঁর কিছু হলে ঈশ্বরাপ্পাকেই দায়ী করা উচিত।
মঙ্গলবার সকালেই কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী বাসভরাজ বোম্মাইকে ওই ঠিকাদারের 'নিখোঁজ' হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে জানানো হয়েছিল। যদিও মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন এ বিষয়ে তাঁর কাছে কোনও তথ্য নেই। এদিকে, মৃত ঠিকাদার সন্তোষ পাটিল নিজেকে 'হিন্দু বাহিনী' নামে একটি ডানপন্থী সংগঠনের জাতীয় সম্পাদক হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী গিরিরাজ সিংকেও তিনি কর্নাটকের মন্ত্রী ঈশ্বরাপ্পার বিরুদ্ধে নালিশ জানিয়েছিলেন। ঈশ্বরাপ্পা এবং তাঁর সহযোগীরা 'কমিশনের' জন্য তাঁকে হয়রানি করছেন বলে অভিযোগ করেছিলেন সন্তোষ। যদিও ঈশ্বরাপ্পা পাল্টা দাবি করে জানিয়েছিলেন যে তিনি পাটিলকে চেনেনই না।
জানা গয়েছে, প্রধানমন্ত্রী,কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রীকে চিঠিতে পাটিল লিখেছিলেন, তিনি এবং আরও ছ'জন ঠিকাদার মিলে ২০২১-এর মে মাসে বেলাগাভি জেলার হিন্দালা পঞ্চায়েতে রাস্তার কাজ করেছিলেন। কিন্তু সেই কাজের জন্য তাঁরা টাকা পাননি। মৃত সন্তোষ পাটিলের দাবি ছিল, ঠিকাদাররা ওই প্রকল্পের জন্য ৪ কোটি টাকা খরচ করলেও সেই টাকা পাননি। টাকা পাওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের হেলদোলহীন মানসিকতার জন্য তাঁদের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ জানিয়েছিলেন পাটিল।
আরও পড়ুন- একের পর এক পড়ুয়া করোনা আক্রান্ত, নয়ডা-গাজিয়াবাদে বন্ধ স্কুল
কর্নাটক সরকারের মন্ত্রী ঈশ্বরাপ্পা-সহ পদস্থ কয়েকজন সরকারি আধিকারিকের নামে বিস্ফোরক অভিযোগ এনেছিলেন মৃত সন্তোষ পাটিল নামে ওই ঠিকাদার। তাঁর অভিযোগ ছিল, সরকারি কর্তারা বকেয়া মোট বিলের ৪০ শতাংশ কমিশন চাইছেন। পাটিলের দাবি ছিল, তিনি তাঁর অভিযোগ নিয়ে বিজেপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছিলেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে গত ১১ মার্চ লেখা চিঠিতে সন্তোষ লিখেছিলেন, ''আমি খুব টেনশনে আছি। পাওনাদাররা প্রচন্ড চাপ দিচ্ছে। ওঁরাই আমাকে সুদে টাকা দিয়েছিলেন। যদি এই টাকা ও ওয়ার্ক অর্ডার এখনই না পাই, তবে আমার নিজের জন্য আরও কোনও বিকল্প নেই।''
কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে সরাসরি কর্নাটকের মন্ত্রী ঈশ্বরাপ্পাকে দায়ী করে পাটিল লেখেন, ''আমাদের রাজ্যের RDPR বিভাগের মন্ত্রী কে এস ঈশ্বরাপ্পা আমাকে ১২-০২-২০২১ তারিখে রাস্তার কাজ শেষ করতে বলেছিলেন। আমরা আনুমানিক ৪ কোটি টাকা খরচ করে ১০৮টিরও বেশি কাজ শেষ করেছি। এক বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গিয়েছে। আজ পর্যন্ত আমরা তাঁর কাছ থেকে বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনও ওয়ার্ক অর্ডার বা এক টাকাও পাইনি।''
Read full story in English