Advertisment

মালগাড়ির সঙ্গে সংঘর্ষ, ওড়িশায় লাইনচ্যুত শালিমার করমণ্ডল এক্সপ্রেস, বহু হতাহতের আশঙ্কা

আহতদের বেশ কয়েকজনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Karmandal Express

শুক্রবার একটি পণ্যবাহী ট্রেনের সাথে সংঘর্ষের পর ওড়িশার বালাসোর জেলার বাহানাগা স্টেশনে শালিমার-চেন্নাই করমণ্ডল এক্সপ্রেস (১২৮৪১)-এর বেশ কয়েকটি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। দুর্ঘটনার বিষয়ে রেলের তরফে এখনও কোনও মন্তব্য করা না-হলেও অনেক যাত্রী আটকে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। চলছে উদ্ধারকাজ।

Advertisment

রেলের মুখপাত্র অমিতাভ শর্মা সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, 'সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ শালিমার-চেন্নাই করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ১০-১২টি বগি বালেশ্বরের কাছে লাইনচ্যুত হয়ে পাশের ট্র্যাকে পড়ে যায়। কিছুক্ষণ পরে, যশবন্তপুর থেকে হাওড়াগামী আরেকটি ট্রেন ওই কোচগুলোয় ধাক্কা মারে। তাতে যশবন্তপুর থেকে হাওড়াগামী ট্রেনেরও ৩-৪টি কোচ লাইনচ্যুত হয়েছে।'

publive-image

ঘটনার পরপরই বিশেষ ত্রাণ কমিশনার বালাসোরে ওড়িশা বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযানের জন্য ছুটে যাওয়ার নির্দেশ দেন। বালাসোরের জেলাশাসককেও ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর এবং সমস্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। দুর্ঘটনার জেরে ওই লাইনের বেশ কয়েকটি ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। হাওড়া থেকে দক্ষিণ ভারতগামী সব ট্রেনই বাতিল করা হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে মুম্বই-গোয়া বন্দে ভারত ট্রেনের উদ্বোধন। গোয়ার কর্মসূচি বাতিল করে ওড়িশায় আসছেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব।

তিনি মৃতদের পরিবারপিছু ১০ লক্ষ টাকা, আহতদের পিছু ২ লক্ষ টাকা আর অল্প আহতদের পিছু ৫০ হাজার টাকা এককালীন অনুদান ঘোষণা করেছেন। রেলমন্ত্রী মৃতদের পরিবারের প্রতি শোকজ্ঞাপন করেছেন। আর, দুর্ঘনায় আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন।

publive-image

এই ট্রেনে বাংলার বহু যাত্রী ছিলেন। সেই কারণে বিশেষ দল পাঠিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি ওড়িশা সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে অ্যাম্বুল্যান্সও পাঠিয়েছেন। মোট ২৫টি অ্যাম্বুল্যান্স, ১২ জন ডাক্তার এবং দু'জন মৃতদেহ বহনকারী বালাসোরে পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি, ওড়িশা সরকার এবং রেলের সঙ্গে সমন্বয় বজায় রাখছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী নিজে রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীকে উদ্ধারকাজ এবং গোটা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার দায়িত্ব দিয়েছেন। এর পাশাপাশি, দুটি কন্ট্রোল রুম নম্বরও চালু করেছে নবান্ন। নম্বর দুটি হল ০৩৩-২২১৪৩৫২৬ ও ০৩৩-২২৫৩৫১৮৫।

পাশাপাশি, ওড়িশা সরকারের কাছ থেকে অতিরিক্ত সাহায্যের আবেদন করা হয়েছে। ওড়িশা সরকার একটি জরুরি যোগাযোগ নম্বর চালু করেছে। নম্বরটি হল- ০৬৭৮২-২৬২২৮৬। আশেপাশের জেলাগুলো থেকেও দমকলের অতিরিক্ত দল, ডাক্তার এবং অ্যাম্বুল্যান্স পাঠানো হচ্ছে।

publive-image

এনডিআরএফের ২২ জনের একটি দল ইতিমধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে। এছাড়াও ৩২ জন সদস্যের একটি বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ঘটনাস্থলে রয়েছে। ৪৭ জন আহতকে বালাসোর মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এছাড়াও ১৩২ জন আহতকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সোরো, গোপালপুর, ক্ষান্তপদ হাসপাতাল এবং প্রাথমিক চিকিৎসাকেন্দ্রে। রেলের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে রয়েছেন।

publive-image

ওড়িশার মুখ্যসচিব প্রদীপ জেনা জানিয়েছেন, ৬০টি অ্যাম্বুল্যান্স ঘটনাস্থল থেকে আহত যাত্রীদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কাজ চালাচ্ছে। বালাসোর এবং কটকের মেডিক্যাল কলেজগুলোকে আহত যাত্রীদের পরিষেবা দেওয়ার জন্য সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এই দুর্ঘটনা সম্পর্কে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, 'ওড়িশার বালাসোরে একটি পণ্যবাহী ট্রেনের সঙ্গে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের সংঘর্ষের ঘটনায় গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আশ্বস্ত করেছেন যে উদ্ধারকাজে তৎপরতা পুরোদমে বজায় আছে। ওড়িশা সরকারও প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে। আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছি যাতে ভারতীয় রেলওয়ে এবং ওড়িশা সরকারের যৌথ প্রচেষ্টায় আহত যাত্রীদের দ্রুত ত্রাণ পাওয়া সম্ভব হয়।'

সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেন দুর্ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি টুইট করেছেন, 'ওড়িশায় ট্রেন দুর্ঘটনায় মর্মাহত। এই মুহুর্তে আমার চিন্তা শোকাহত পরিবারগুলোর প্রতি। আহতরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক।' প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, তিনি রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের সঙ্গে কথা বলেছেন। আর, পরিস্থিতি সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজ নিয়েছেন। শোকপ্রকাশ করেছেন ওড়িশার বাসিন্দা রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুও।

ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক শুক্রবার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন যে শনিবার সকালে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবেন। নবীন সাংবাদিকদের বলেন, 'আমি এই মর্মান্তিক রেল দুর্ঘটনার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছি। আগামিকাল সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করব।'

শুক্রবার দুপুর ৩টে ২০ মিনিট নাগাদ করমণ্ডল এক্সপ্রেস হাওড়ার শালিমার থেকে রওনা হয়েছিল। যেভাবে তিনটে ট্রেন এক লাইনে চলে এসেছিল, তাতে রেলের পরিকাঠামো এবং যাত্রী নিরাপত্তা ইতিমধ্যে প্রশ্নের মুখে পড়েছে।

Passenger Train Accident Orissa
Advertisment