করোনার বাড়বাড়ন্তে কার্যত ভেঙে পড়েছে দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা। অক্সিজেনের হাহাকার মহারাষ্ট্র-সহ একাধিক রাজ্যে। এই আবহে আগামী জুনের প্রথম সপ্তাহে করোনায় দৈনিক মৃতের সংখ্যা পেরোতে পারে ২৩০০! এমনই আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে ল্যানসেট কোভিড ১৯ কমিশনের এক রিপোর্টে। দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণের হার অনেক বেশি। তবে উপসর্গহীন কিংবা মৃদু উপসর্গের রোগীর সংখ্যা প্রচুর বাড়ায় প্রথম দফার তুলনায় হাসপাতালে ভর্তির হার এবং মৃত্যুর হার এখনও পর্যন্ত তুলনামূলক কম। তবে সংক্রমণ বৃদ্ধির হারই বাড়াচ্ছে দুশ্চিন্তা। গত কালের পরিসংখ্যান ছাপিয়ে দৈনিক সংক্রমিতের সংখ্যা ২ লক্ষ ১৭ হাজার ৩৫৩। দৈনিক মৃতও ১২০০ ছুঁইছুঁই।
‘ম্যানেজিং ইন্ডিয়া’জ় সেকেন্ড কোভিড ১৯ ওয়েভ: আর্জেন্ট স্টেপস’ শীর্ষক ওই রিপোর্টে করোনার দ্বিতীয় দফার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সেখানে জানানো হয়েছে, ‘টিয়ার টু’ এবং ‘টিয়ার থ্রি’ শহরে সংক্রমণের প্রভাব পড়বে সবচেয়ে বেশি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিকাকরণের উপরেই জোর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে ওই রিপোর্টে। যার অঙ্গ হিসেবে শুধু ৪৫-এর বেশি বয়সি নয়, তরুণ প্রজন্মকেও টিকার আওতায় আনার কথা বলা হয়েছে। চলতি বছরের ১১ এপ্রিল পর্যন্ত ৪৫ বছরের বেশি বয়সিদের মধ্যে ২৯.৬% প্রতিষেধকের একটি বা দু’টি ডোজ় পেয়েছেন। টিকার উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি জিনোম সিকোয়েন্সের উপরেও জোর দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
এর পাশাপাশি দেশ জুড়ে বা রাজ্য জুড়ে লকডাউনের পরিবর্তে স্থানীয় স্তরে লকডাউন, দূরত্ব-বিধি পালনের উপরে জোর দিতে বলা হয়েছে। ১০ জনের বেশি জমায়েতে নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে ল্যানসেটের রিপোর্টে। দেশে করোনার প্রথম দফায় সংক্রমিতের ৭৫ শতাংশই ছিল ৬০ থেকে ১০০ জেলায়। কিন্তু দ্বিতীয় দফার ক্ষেত্রে মোট করোনায় আক্রান্তের ৭৫% ২০ থেকে ৪০টি জেলায়।
এদিকে, নয়া গতিতে দেশে রোজই বেড়েই চলেছে করোনা সংক্রমণ। দৈনিক সংক্রমিতের সংখ্যা ফের ২ লক্ষের গণ্ডি পেরোল। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের রিপোর্ট অনুসারে গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২ লক্ষ ৩৪ হাজার ৬৯২ জন। সুস্থতার হার অনেরটাই কম। একদিনে দেশে সুস্থতার হার ১ লক্ষ ২৩ হাজার ৩৫৪ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৩৪১ জনের। এখনও পর্যন্ত যা দেশে সর্বোচ্চ।
এখনও পর্যন্ত দেশে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১ কোটি ৪৫ লক্ষ ২৬ হাজার ৬০৯। করোনাকে হারিয়ে এখনও পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন মোট ১ কোটি ২৬ লক্ষ ৭১ হাজার ২২০। ভারতে অ্যাক্টিভ কেসের সংখ্যা ১৬ লাখ ৭৯ হাজার ৭৪০। করোনায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা ১ লক্ষ ৭৫ হাজার ৬৪৯।
দেশে মোট টিকাকরণ হয়েছে ১১ কোটি ৯৯ লক্ষ ৩৭ হাজার ৬৪১ জনের। এখনও পর্যন্ত নমুনা সংগ্রহের সংখ্যা ২৬ কোটি, ৪৯ লক্ষ ৭২ হাজার ২২। গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা সংগ্রহ হয়েছে ১৪ লক্ষ ৯৫ হাজার ৩৯৭।