করোনাকে থামাতে ভ্যাকসিন নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছেই বিশ্বে। ভারতেও আগামী কয়েকমাসের মধ্যেই পাওয়া যাবে কোভ্যাকসিন এমনটাই জানান হয়েছে। আর সেই আবহের মাঝেই করোনা পরীক্ষার জন্য সহজলভ্য একটি যন্ত্র আবিষ্কার করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিলেন ভারতীয় গবেষক মনু প্রকাশ।
যে হারে দেশে এবং পশ্চিমবঙ্গেও করোনার দাপট বেড়ে চলেছে, সেই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে স্বল্পমূল্যে করোনা পরীক্ষা করা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই পরীক্ষার সংখ্যাও আরও বৃদ্ধি করা যাবে। সেই ভাবনা রেখেই এক পকেটযন্ত্র আবিষ্কার করেছেন মনু। যেই যন্ত্র ব্যবহারে লাগবে কোনও বিদ্যুৎ। বিশ্বের প্রত্যন্ত জায়গাতেও এই যন্ত্রের মাধ্যমে করোনা পরীক্ষা করা সম্ভব, এমনটাই মনে করে মনু।
কী এই যন্ত্র?
বৈজ্ঞানিক ভাষায় একে বলে সেন্ট্রিফিউজ। একটি মেশিন যেখানে টেস্টটিউব বসিয়ে একটি নির্দিষ্ট ঘূর্ণনমাত্রায় তা ঘোরানো হয়। এর ফলে তরলের ভারী উপাদানগুলি টেস্ট টিউবের তলায় চলে আসে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, রক্ত পরীক্ষার সময় এই পদ্ধতির মাধ্যমে রক্তরস এবং রক্তকণিকাকে আলাদা করা হয়। করোনাভাইরাস পরীক্ষার ক্ষেত্রে রোগীর থেকে লালারস নিয়ে তা এই নয়া সেন্ট্রিফিউজ মেশিনে দেওয়া হবে। দেখা গিয়েছে এই পদ্ধতির মাধ্যমে লালারস থেকে আলাদা হয়ে আসছে কোভিড-১৯ ভাইরাসের জিনোম।
এই পরীক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল যন্ত্রটি চালাতে কিন্তু কোনওরকম বিদ্যুতের প্রয়োজন হয় না। স্ট্যান্ডফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্যান্য গবেষকদের নিয়ে এই যন্ত্র বানিয়েছেন মনু প্রকাশ। নাম দিয়েছেন "হ্যান্ডিফিউজ"। বিজ্ঞানী জানান যে এই যন্ত্র সহজেই ব্যবহার করতে পারবেন ক্লিনিকের কর্মীরা এবং বিজ্ঞানীরাও। রোগীর দেহে করোনা ভাইরাস আছে কি না তা সহজেই ল্যাম্প (LAMP) <যার পুরো নাম- লুপ মেডিয়েটেড আইসোথার্মাল অ্যাপ্লিফিকেশন> পদ্ধতি এই যন্ত্রে ব্যবহার করে সহজেই সনাক্ত করতে পারবেন।
কীভাবে কাজ করে এই যন্ত্র দেখুন
(1/n) Excited to share Handyfuge-LAMP; a low-cost & electricity-free centrifugation for isothermal SARS-CoV-2 detection in saliva. With COVID19 cases increasing globally, diagnostics needs to be accessible to everyone - including resource limited regions https://t.co/3T5qaEWFp9 pic.twitter.com/2Zhj6MH2dj
— PrakashLab (@PrakashLab) July 3, 2020
বিজ্ঞানী মনু প্রকাশ জানান যে এই যন্ত্র ব্যবহার করতে কোনও বিশেষ ধরণের যন্ত্রপাতি, উপাদান কিছুই লাগবে না। পরীক্ষার ফলাফলের সময়ও দ্রুততার সঙ্গে প্রকাশ করা যাবে। আর ভারতের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে একেবারে স্বল্প মূল্যে এই পরীক্ষা করা যাবে। দেশে যেভাবে পাল্লা দিয়ে ফের বাড়ছে করোনা ভাইরাস সেই প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে এই যন্ত্র এমনটাই মত ওয়াকিবহাল মহলের।
(3/n) If you would like to try it, here is the visual summary of every step of the way; with centrifugation steps linked below. pic.twitter.com/9WasJoj0Xl
— PrakashLab (@PrakashLab) July 3, 2020
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে সাধারণ সেন্ট্রিফিউজ যন্ত্র এবং নয়া আবিষ্কৃত যন্ত্র হ্যান্ডিফিউজ যন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য কোথায়? প্রকাশিত গবেষণাপত্রে জানান হয়েছে যে ল্যাম্প পরীক্ষার মাধ্যমে সেন্ট্রিফিউজ মেশিন ব্যবহার করে নিষ্ক্রিয় লালারস থেকে ইনহিবিটর উপাদান বাদ দেওয়া হত। এই কাজ করতে প্রতি মিনিটে ২০০০বার ঘুরত মেশিন (বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় যাকে ২০০০ রোটেশন পার মিনিট বা আরপিএম বলা হয়ে থাকে)। যেখানে দরকার বিদ্যুতের এবং খরচও ব্যয়সাপেক্ষ। এক্ষেত্রে হাতে ঘোরালেই চলবে এই হ্যান্ডফিউজ মেশিনটি। যেখানে একবার ঘোরালে নিজে থেকেই একাধিকবার ঘুরবে এই যন্ত্র।
কতটা কার্যকর এই যন্ত্র তা খতিয়ে দেখতে আরও অনেক রোগীর থেকে নমুনা নিয়ে কাজ চালাবেন তাঁরা, এমনটাই জানিয়েছেন মনু প্রকাশ। কীভাবে সব নিয়ম মেনে ল্যাবের বাইরে বসেও করোনা পরীক্ষাকে আরও সফল করে তোলা যায় তা নিয়েই চিন্তামগ্ন ভারতের বিজ্ঞানী মনু।
Read the full story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন