করোনাভাইরাস সম্পর্কে চিনের সরকারি হুঁশিয়ারি জারি হওয়ার আগেই দুনিয়াকে প্রথম সতর্কবার্তা দেন যে চিনা ডাক্তার, সেই লি ওয়েনলিয়াংয়ের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার এই ভাইরাসেই আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। তাঁর মৃত্যুতে ক্ষোভে এবং রাগে ফেটে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়া। টুইটারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন বা WHO) তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে একটি টুইট করেছে।
অন্যদিকে, জাপানে সঙ্গরোধ (quarantine) করা প্রমোদ তরীতে নভেল করোনাভাইরাস দেখা দিয়েছে আরও ৪১ জন যাত্রীর মধ্যে, যার ফলে এই জাহাজে আক্রান্তের সংখ্যা বর্তমানে ৬১। সংক্রামিত যাত্রীদের সংখ্যায় এই অকস্মাৎ বৃদ্ধি জাহাজটির দুই সপ্তাহের quarantine চলাকালীন হয়েছে। জাহাজটিতে আপাতত ৩,৭০০ জন যাত্রী রয়েছেন।
চিনের স্বাস্থ্য আধিকারিকরা শুক্রবার জানিয়েছেন, সরকারি হিসেবে করোনাভাইরাস মহামারীতে এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৩৬, এবং নিশ্চিত সংক্রমণের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৩১ হাজার। মহামারীর জেরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে, এবং চিনের বাইরে আক্রান্তের সংখ্যা এই মুহূর্তে ২০০-র বেশি। এখন পর্যন্ত অধিকাংশ মৃত্যুই ঘটেছে চিনের হুবাই প্রদেশে, যদিও হংকং এবং ফিলিপিনস থেকে একটি করে মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। ভারতে এখন পর্যন্ত কেরালায় তিনজনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
চিনের রাজধানী বেইজিং থেকে করোনাভাইরাস মহামারীতে মৃত এবং আক্রান্তদের সম্পর্কে সঠিক তথ্য দেওয়া হচ্ছে না, এই মর্মে বৃহস্পতিবার তাইওয়ানের সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে চিন। এর আগে তাইওয়ান নিউজ জানায়, "জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ WeChat-এর পরিচালক সংস্থা Tencent সম্ভবত অনিচ্ছাকৃত ভাবেই মৃত এবং আক্রান্তদের সম্ভাব্য সঠিক সংখ্যা প্রকাশ করেছে, যা সরকারি সংখ্যার চেয়ে অবিশ্বাস্য রকমের বেশি। Tencent-এর ওয়েব পেজে দেখা যাচ্ছে, চিনে উহান ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১৫৪,০২৩ জন, যা সেই সময়ের সরকারি সংখ্যার প্রায় দশগুণ... সবচেয়ে ভয়ের কথা, মৃতের সংখ্যা দেখানো হয়েছে ২৪,৫৮৯, যেখানে সেদিনের সরকারি সংখ্যা ছিল ৩০০।"
ব্রিটেন, জার্মানি, এবং ইতালি থেকে নতুন করে করোনাভাইরাস সংক্রমণের খবর পাওয়া গিয়েছে, যার ফলে ইউরোপে আক্রান্তদের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩১।
মহামারীর কেন্দ্রবিন্দু উহান শহর থেকে ফিরেছে জাপানের চতুর্থ চার্টার্ড বিমান, যাতে ছিলেন ১৯৮ জাপানি নাগরিক এবং তাঁদের চিনা স্বামী অথবা স্ত্রী। জাপানের মুখ্য ক্যাবিনেট সচিব ইয়োশিহিদে সুগা শুক্রবার সাংবাদিকদের জানান, এখন পর্যন্ত চিন থেকে ফেরত আসা কারোর মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কোনো উল্লেখযোগ্য উপসর্গ দেখা দেয় নি। এঁদের সকলকেই প্রথমে হাসপাতালের নজরদারিতে রাখা হবে, এবং পরে কোয়ারান্টিন করে রাখা হবে রাজধানী টোকিয়োর কাছে একটি সরকারি আবাসনে। বর্তমানে জাপানে আক্রান্তের সংখ্যা ৮৬, যা কিনা চিনের বাইরে সর্বোচ্চ।
এদিকে টয়োটা মোটর কর্প শুক্রবার জানায়, ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চিনে অবস্থিত তাদের সমস্ত কারখানায় উৎপাদন বন্ধ থাকবে। বিশ্বের একাধিক মোটর প্রস্তুতকারক কোম্পানি করোনাভাইরাসের প্রকোপে উৎপাদন বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। স্রেফ টয়োটা কোম্পানিরই ১২টি গাড়ি এবং গাড়ির যন্ত্রপাতি তৈরির কারখানা রয়েছে চিনে।