বাড়ির বাইরে পা না রাখতে আবেদন জানাচ্ছেন অনাবাসী ভারতীয়রা। নিজেদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তাঁরা শেয়ার করেছেন সোশাল মিডিয়ায়। করোনা আক্রান্ত পশ্চিমের উন্নত দেশগুলোর বেহাল দশার কথা তুলে ধরেছেন এইসব অনাবাসীরা। পরিবার ছেড়ে তাঁরাও আজ আতঙ্কিত হয়ে ওইসব দেশে গৃহবন্দি হয়ে রয়েছেন। আর ঘরে বসে ভাবছেন বাবা, মা, বন্ধু-বান্ধব তথা দেশের কথা।
পিঙ্কি সরকার। থাকেন ইতালিতে। সেখানে শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত। তাঁর অভিজ্ঞতা অত্যন্ত মর্মান্তিক। পিঙ্কি বলছেন, "ঠিক একমাস আগে কানে আসে ইতালিতে মাত্র একজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। আমরা তখন ভেবেছিলাম চায়না (চিন) অনেক দূরে, ফলে এখনে ভাববার কিছু নেই। সবে নর্থ ইতালিতে ধরা পড়েছে তো। আমি থাকি সাউথ ইতালিতে। ভেবেছিলাম কেউ একটা ভ্যাকসিন বের করবে ঠিক। স্কুল, কলেজ ছুটি দিয়েছিল। বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতেও গিয়েছিলাম। এরপর বাড়িতে থাকতে বলল সরকার। যেটা এখন করছে ভারত। একমাস পরে ইতালিতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৪০ হাজারের ওপর। সবাই এটাকে হালকাভাবে নিয়েছিল। কিন্তু পরিণাম হল ভয়ঙ্কর। ভারতে আমার বাব-মা ও বন্ধুবান্ধবদের জন্য চিন্তা হচ্ছে"। পিঙ্কির কাতর আবেদন, "একবারেই অবহেলা করবেন না। কে কী বলছে, শুনবেন না"।
চৈতলী দত্ত কলকাতার সোনারপুর এলাকার বাসিন্দা। তিনি ১৫ বছর ধরে রয়েছেন লন্ডনে। ইন্ডিয়ান পাসপোর্ট আছে তাঁর। তাঁর কথায়, কখনও নাগরিকত্ব বদলের কথা ভাবেননি। চৈতালীর বক্তব্য, "একবার ভেবেছিলাম কলকাতা চলে যাই। এখানকার অবস্থা ভাল নয়। খুব খারাপ অবস্থা না হলে টেষ্ট করতে পারছে না মানুষ। ভারতের নাগরিকরা সাঙ্ঘাতিক সুবিধা পান। লন্ডন অনেক কিছু দিলেও স্বাস্থ্য পরিষেবা ভাল নয়। ভেবেছিলাম, চলেই যাই। কিন্তু পরে ভাবলাম, আমি যখন ট্রাভেল করব, তখন আমি পজিটিভ হয়ে গেলে অন্যদের মধ্যেও তা ছড়িয়ে পড়বে। তাই সিদ্ধান্ত বদলে ফেললাম। তবে দেশে যে ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা দেখছি, তাতে অবাক হচ্ছি...লন্ডনের অবস্থা খুব খারাপ। আস্তে আস্তে সব বন্ধ হয়ে গিয়েছে এখানে। ইন্ডিয়ার জনসংখ্যার ঘনত্ব খুব বেশি। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলবে। বিভিন্ন দেশ থেকে আসছেন সবাই। তাঁরা নিয়ম মানছেন না। তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত"।
আমেরিকার ফ্লোরিডাতে আছেন কলকাতার বিকিরাম চক্রবর্তী। ভারতবাসীর কাছে তাঁর আবেদন, "আপনারা বাঁচতে চাইলে সিরিয়াস হন"। বিকিরাম বলছেন, "আমি ইউরোপে বিভিন্ন দেশ তথা পশ্চিমী দেশগুলো দেখছি। রাজনৈতিক দল বলে কোনও কথা নেই। ঘরে থাকুন। এই ভাইরাস আটকানোর একটাই রাস্তা। এখনও সময় আছে। বিশ্ব জনসংখ্য়ায় আমাদের দেশ দ্বিতীয়। একজন বাঙালী হিসাবে অনুরোধ করছি, ঘর থেকে বেরবেন না। কন্ট্রোল করার একটাই উপায়"। তাঁর আক্ষেপ, ছুটি থাকলেও তিনি বাড়ি ফিরতে পারছেন না।
ইতালি, আমেরিকার মতো উন্নত দেশ জার্মানির হালও খুব খারাপ। রাকেশ রাজপুত থাকেন জার্মানীর ফ্রঙ্কফ্রুটে। ঘরে খাবার শেষ হয়ে যাওয়ায় ৬দিন বাদ বেরিয়েছেন বাইরে। তাঁর অভিজ্ঞতা, দুসপ্তাহ আগে জার্মানি, ইাতালি, ফ্রান্স লকডাউন করেছিল। আপনারাও ঘরেই থাকুন। ঘরের বাইরে বেরবেন না। আমি আজ ৬দিন পর বেরলাম খাবার নিতে। আমাদের দেশে জনসংখ্যা অনেক। কেউ যদি ভাবেন আমি যুবক, আমার শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা আছে, তা ভুল। ঘরে থাকাই এখন বড় দেশভক্তি। ঘরে বসে টিভি, মোবাইল দেখুন। যে ভুল ইটালি, ফ্রান্স, জার্মানি করেছে তা আপনারা করবেন না"।
সোসাল মিডিয়া খুললেই করোনা সংক্রান্ত নানা তথ্য, নানা ভিডিও, নানা গুজবও চোখে পড়ছে। আটকে থাকা অনাবাসী ভারতীয়রাও আজ আতঙ্কিত। বিদেশে থাকায় তাঁরা করোনার করাল রূপ অনেক বেশি চাক্ষুস করেছেন, তাই তাঁরা চিন্তিত মাতৃভূমি নিয়ে। এ লড়াই বাঁচার লড়াই। সচেতন হোন।