সোমবার ভারতে করোনাভাইরাসে (COVID-19) আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১১৪। এর মধ্যে রয়েছেন ১৭ জন বিদেশি। রবিবার এ দেশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ২৬। যা গত কয়েকদিনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। নতুন করে সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে উড়িষ্যা, লাদাখ, জম্মু-কাশ্মীর, এবং কেরালা থেকে। উড়িষ্যায় এই প্রথম করোনার প্রবেশ ঘটল। আক্রান্ত এক ৩৩ বছর বয়সী ব্যক্তি, যাঁর ইতালিতে ভ্রমণের ইতিহাস রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, দেশবাসীর স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখতে "কোনোরকম খামতি নেই" সরকারের তরফে।
ওদিকে দিল্লি সরকার ৫০ জনের বেশি মানুষের সমাবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এবং ভুবনেশ্বর ও কটকের সমস্ত মল ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে উড়িষ্যা সরকার।
এ পর্যন্ত ভারতে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ২ জনের। সেরে উঠেছেন ১৩ জন। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তথ্যানুসারে, এ দেশে মহারাষ্ট্রে করোনা আক্রান্তের সংখ্য়া সবচেয়ে বেশি (২৬)। এরপরই তালিকায় রয়েছে কেরালা। সে রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্য়া ২২। এছাড়াও, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, এবং রাজস্থানের বেশ কয়েকজন বাসিন্দার রক্তেও মারণ ভাইরাসের জীবাণু মিলেছে। ইতিমধ্যেই, বিশ্ব স্বাস্থ্য় সংস্থা করোনা ভাইরাসকে অতিমারী (pandemic) বলে ঘোষণা করেছে। দেশে ৪২ হাজার মানুষকে করোনা আক্রান্ত সন্দেহে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
কোভিড-১৯ আতঙ্কে কাঁপছে বিশ্বও। ইতালি ও ইরানে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা। এই অবস্থায় দু'দেশে আটকে পড়া ভারতীয়দের ফিরিয়ে এনেছে এয়ার ইন্ডিয়ার বিশেষ বিমান। ইতালির মিলান থেকে ২১৮ জন ভারতীয়কে নিয়ে দিল্লিতে ফেরে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান। এঁদের মধ্যে ২১১ জন পড়ুয়া। তাঁদের ইতিমধ্যেই কোয়ারান্টাইনে রাখা হয়েছে। ইরান থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে ২৩৪ জনকে। তাঁরা জয়সলমীরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ওয়েলনেস সেন্টারে রয়েছেন।
বিদেশমন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী ভি মুরলীধরন টুইটে জানিয়েছেন, "২১১ জন পড়ুয়া সহ মোট ২১৮ জনকে মিলান থেকে দিল্লিতে আনা হয়েছে। তাঁরা প্রত্যেকে ১৪ দিন কোয়ারান্টাইনে থাকবেন। এই বিড়ম্বনার মধ্যেও বিশ্বের যে প্রান্তেই ভারতীয়রা রয়েছেন, তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনতে ভারত সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।" বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর টুইটে লেখেন, "ইরান থেকে ২৩৪ জন ভারতীয়কে দেশে ফেরানো হয়েছে। এর মধ্যে ১৩১ জন পড়ুয়া ও ১০৩ জন তীর্থযাত্রী।"
ভারতে করোনা মোকাবিলায়, গত বুধবার থেকে আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত সমস্ত ভিসা স্থগিতের নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। একমাসের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সীমান্তও। কয়েকটি চেকপোস্ট ছাড়া ইন্দো-বাংলাদেশ ও ইন্দো-নেপাল-মায়ানমার, এবং ভুটান সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিমান ও স্থলবন্দরে জারি রয়েছে স্ত্রিনিং-এর ব্যবস্থা। এছাড়া, অধিকাংশ রাজ্যেই জমায়েত এড়াতে স্কুল কলেজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বাংলাতেও একই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। দেশের সমস্ত ক্রীড়ানুষ্ঠান আপাতত বন্ধ করা হয়েছে।
করোনা মোকাবিলায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জি কিষাণ রেড্ডি বলেছেন, "আধা সেনা, বিএসএফ, সিআরপিএফ ও আইটিবিপি-কে কোয়ারান্টাইন প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ৩১ মার্চ পর্যন্ত দেশি বা বিদেশিদের নিয়ে সফরের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে মুম্বই পুলিশ। অন্ধ্রপ্রদেশের পুরসভা ও পঞ্চায়েত ভোট আপাতত ছয় সপ্তাহ পিছনোর ঘোষণা করেছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন