দেশে ক্রমশ বেড়েই চলেছে করোনা ভাইরাস প্রভাব। এই আবহে মোদী সরকারের প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা কে বিজয় রাঘবনের সঙ্গে সঙ্গে কথা বললেন অমিতাভ সিনহা। দেশের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো থেকে কোভিডের বাড়বাড়ন্ত, সাক্ষাৎকারে উঠে এল সেই সকল প্রসঙ্গই।
কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের এমন তীব্রতা কিন্তু সকলকে অবাক করে দিয়েছে। প্রথম দাপটের পর এমন খারাপ পরিস্থিতির জন্য কি দেশ আলাদা করে প্রস্তুতি নিয়েছে?
এটা ঠিক যে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের তীব্রতা সকলকে অবাক করে দিয়েছে। করোনা ভাইরাসের প্রথমে পূর্বাভাসগুলি ছিল মারাত্মক। কিন্তু সেই সময় ভারতে তুলনামূলকভাবে কম তীব্রতা ছিল। লকডাউন, সামাজিক দূরত্ব, মাস্ক ব্যবহারের কঠোর নিয়ম বিধি পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে সংক্রমণ বেশ কিছুটা আটকানো সম্ভব হয়েছিল। এরপর কেন্দ্র ও রাজ্যগুলি অবকাঠামো পুনর্নির্মাণের জন্য একাধিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল। ভ্যাকসিন নিয়েও আমরা যথেষ্ট আশাবাদী ছিলাম। তবে এক্ষেত্রে একটি বিষয় জানিয়ে রাখা ভাল যে কোভিডের দ্বিতীয় ঝড় যে এত তীব্রতর হবে বিশ্বের বিশেষজ্ঞরাও তা জানাতে পারেননি এর আগে। এর তিনটি কারণ রয়েছে। এক ভাইরাসের মিউট্যান্ট তৈরি, দুই জনসাধারণের নিয়ম বিধি লঙ্ঘন, তিন জনগণের মধ্যে কোভিড সংবেদনশীলতা।
কিন্তু এত বড় বিপর্যয় আসতে চলেছে এর কোনও পূর্বাভাস পাওয়া যায়নি তা কীভাবে সম্ভব?
ফেব্রুয়ারিতেও যে তথ্য আমাদের হাতে এসেছে সেখানে করোনা সংক্রমণ একেবারে কম আসছে এমনটাই দেখা গিয়েছে। কারণ যারা আক্রান্ত হয়েছে তাঁদের দেহে অ্যান্টিবডি তৈরি হতে শুরু করেছিল। এবার যেটা হয়েছে ভাইরাসের নতুন মিউট্যান্টগুলির সঙ্গে শরীরে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডিরা খাপ খাওয়াতে পারছে না। তবে ৮ মাস বাদে তাঁদের শরীরে ৮০ শতাংশ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কিন্তু থাকছে। এই দ্বিতীয় ঢেউয়ের পিছনে অনেক কারণ রয়েছে। প্রথম ধাপে আমরা পুরোপুরি সচেতন ছিলাম। সেই সময় মৃত্যুর হারও কম ছিল।
এখন ব্যর্থতার প্রেক্ষিতে যে সমালোচনা হচ্ছে কী জবাব দেবেন? অনেক বিজ্ঞানীরা কিন্তু সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু আমরা কেন তা নিয়ে ভাবিনি?
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছিলেন। আমরা সচেতন ছিলাম। সেরোসার্ভে অনুযায়ী ভ্যাকসিনেশন শুরু হলে পরিস্থিতিই নিয়ন্ত্রণে আসবে এমনটাই বলা হয়েছিল। এক্ষেত্রে R-noughtভ্যালু খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই ভ্যালু থেকে জানা যাচ্ছে যে এই ভাইরাস কতটা সংক্রমক। পুরো বিষয়টি ধ্বংসাত্মক দিকে চলে গিয়েছে। দ্বিতীয় ঢেউয়ের ক্ষেত্রে কিন্তু সাবধানতা অবলম্বন এবং ভ্যাকসিনেশনের উপরও জোর দেওয়া হয়।
কিন্তু রুখতে পারা গেল কোথায়?
এই সময়ে অনেক ভুল, মিথ্যে তথ্য ও বিজ্ঞানকেও ভুল ভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছিল। বেশিরভাগ সকলেই তা বিশ্বাস করেছিল। যেমন হার্ড ইমিউনিটির তথ্য ইত্যাদি। এর ফলে তা জ্নসাধারণের আচরণের উপরও প্রভাব ফেলেছিল। মাস্ক বিধি, সামজিক দূরত্ব সব উঠে যাচ্ছিল। এর ফলে সংক্রমণ যতটা কমে আসছিল এর ফলে আরও বৃদ্ধি পেয়ে পরিস্থিতি খারাপ হয়ে গেল। করোনার প্রথম পর্যায়ে দেশের হাসপাতালগুলি ও স্বাস্থ্যসেবা পরিকাঠামো ঠিক করার কাজ শুরু হয়েছিল। যেই মুহুর্তে করোনা কমে আসছে এমন ইঙ্গিত আসে তখন জরুরি ভিত্তিতে কাজও বন্ধ হয়ে যায়। এক বছরের মধ্যে জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার চরম উন্নতি করা তো বাস্তবে প্রায় অসম্ভব কাজ। এক বছরে ২০ থেকে ৫০ শতাংশ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা যেতে পারে মাত্র। তবে প্রতিরোধের অন্যান্য পদক্ষেপগুলি ভবিষ্যতে বিবেচনা করা উচিত।
করোনার তৃতীয় ঢেউ কী আসবে? সেই পর্যায় কি আমরা আদৌ সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারব?
এই জাতীয় সঙ্কট মোকাবিলার ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার প্রয়োজন। একই সময়ের মধ্যে সব ক্ষেত্রকে পাঁচগুণ কিংবা দশগুণ বৃদ্ধি সম্ভব নয়। সচেতনতা এবং প্রাথমিক প্রশিক্ষণ সহ বিপুল সংখ্যক লোকেরও প্রয়োজন হয়। সেই বিষয়গুলি মাথায় রেখেই এগোনো হচ্ছে।
এই মুহুর্তে অক্সিজেন সঙ্কট দেশের মূল চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে। সে বিষয়ে কী ভাবছেন?
করোনা রুখতে যা যা করণীয় আমরা করছি। সেই অনুশীলন বা প্রয়োগ করা খুব সহজ নয়। অন্যান্য অনেক দেশেই অক্সিজেন সঙ্কট চলছে। আমত্রা চেষ্টা করছি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাগুলি যাতে সঠিকভাবে নেওয়া যায়। যথাসাধ্য কাজ করছি সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন