Advertisment

মুর্শিদাবাদের মিলন শেখ এখন করোনা ঠেকানোর অন্যতম ভরসা

গত বছর ডিসেম্বর মাসে মিলন ও আরও দশজনকে এরনাকুলাম জেলা প্রশাসন নতুন দায়িত্ব দিয়েছে। এঁদের কাজ হবে অভিবাসী শ্রমিকদের মধ্যে সংযোগকারী হিসেবে কাজ করা।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Coronavirus, Migrant Labour

মিলন শেখের কাঁধে এখন অনেক দায়িত্ব

মুর্শিদাবাদের মিলন শেখ কাজের খোঁজে পৌঁছে গিয়েছিল ২৫০০ কিলোমিটার দূরে, কেরালার কোচিতে। মিলন স্কুল ড্রপ আউট। মিলন তখন নাবালকও বটে। তখন তার উদ্দেশ্য ছিল অল্প দিনের মধ্যে কিছু রোজগার করে নিয়ে পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়া। কিন্তু, এক দশক হয়ে গিয়েছে, মিলনের ফেরা হয়নি। এখন তার বয়স ২৪। সে নিজের এলাকার অভিবাসী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করে চলে অবিরত। অভিবাসীদের সমস্যা বোঝার চেষ্টা করে, তাদের অধিকারের জন্য লড়ে যায়, পাশাপাশি নিজের বেঁচে থাকবার জন্য সেলাইয়ের কাজ করে।

গত বছর ডিসেম্বর মাসে মিলন ও আরও দশজনকে এরনাকুলাম জেলা প্রশাসন নতুন দায়িত্ব দিয়েছে। এঁদের কাজ হবে অভিবাসী শ্রমিকদের মধ্যে সংযোগকারী হিসেবে কাজ করা। 'অতিথি দেব ভবো' প্রকল্পের আওতায় এই দায়িত্বভার তাঁদের কাঁধে পড়েছে। এ প্রকল্পের পরিকল্পনা সাদাসিধে- স্থানীয় সরকার তাঁদের নেতৃত্ব ও বহুভাষিক যোগাযোগ ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে অতিথি শ্রমিকদের সঙ্গে আরও কার্যকরী যোগাযোগ গড়ে তুলতে চায়।

Advertisment

করোনা ঠেকাতে গোমূত্র বিক্রি, বাংলায় গ্রেফতার ১

কেরালায় বাইরে থেকে আসা শ্রমিকের সংখ্যা, কোনও কোনও হিসেবে ২৫ লক্ষের উপর। সম্ভাব্য সমস্ত ঝুঁকির ক্ষেত্রে এঁদের কাজে লাগানো হবে। সে রাজ্যে কড়া নাড়ছে করোনাভাইরাস সংক্রমণ। জেলা প্রশাসন চাইছে মিলন ও অন্যান্যরা অভিবাসীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির কাজে লাগুন। তাঁর মত লোকজন সামনে থাকলে প্রশাসনের যে অভিবাসী শ্রমিকদের মধ্যে কোভিড ১৯ সংক্রমণ আটকানোর প্রকল্প, তাতে সাহায্য হবে।

প্রকল্পের নোডাল অফিসার অখিল ম্যানুয়েল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, "আমরা চাই অভিবাসীদের সঙ্গে যোগাযোগের যে অভাব রয়েছে, তা কমে আসুক। ফলে সংযোগকারী কর্মীদের প্রশিক্ষণের অঙ্গ হিসেবে বিভিন্ন সরকারি দফতর, যথা স্বাস্থ্য, শ্রম, পুলিশ ও আইনবিভাগের শিবির পরিচালিত হচ্ছে।"

কোভিড ১৯ প্রাদুর্ভাবের মধ্যে, এই সংযোগকারী কর্মীদের বিশেষ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি বিষয়ে। ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যরক্ষায় করণীয় ও না-করণীয়র তালিকাও করে দেওয়া হয়েছে জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের বিধি মোতাবেক। যেহেতু বেশিরভাগ শ্রমিকই নোংরা ও বদ্ধ জায়গগায় বাস করেন, তাঁদের স্বাস্থ্যের বিষয়টি অতি গুরুত্বপূর্ণ। নাহলে যে কোনও সময়ে তাঁদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে।

ম্যানুয়েল আরও বলেন, "আমরা ওঁদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করতে চাই না। যেহেতু ওঁদের অনেকেই লিখতে বা পড়তে পারেন না, ফলে লিখিত বার্তা দিয়ে লাভ নেই। সে কারণে আমরা বাংলা, ওড়িয়া, অসমিয়া, হিন্দি ও তামিল ভাষায় অডিও মেসেজ তৈরি করেছি এবং সেগুলি সংযোগকারী শ্রমিকদের মাধ্যমে ওঁদের কাছে পৌঁছে দিতে চাইছি। ওঁদের মধ্যে ভয় দূর করতে আমরা অনেকটাই সফল।"

গরম পড়লে করোনাভাইরাস সংক্রমণ কমবে, এমন কোনও প্রমাণ নেই

>মিলন স্বীকার করে নিয়েছেন যে বাসস্থানের সমস্যাই ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ। কয়েক বছর ধরে বিষয়টা পাল্টাচ্ছে কিন্তু পেরুমবাভুর বা মুভাত্তুপুজা এলাকায় অভিবাসীদের থাকার জায়গা গুলো অপরিচ্ছন্ন বিভিন্ন বাড়ি, যাতে এঁরা গাদাগাদি করে থাকেন। বিভিন্ন সরকার এঁদের পরিচ্ছন্ন বাসস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বটে, কিন্তু সে সব কাগজে কলমেই মূলত থেকে গিয়েছে।

মিলন বলছিলেন, "আমরা ভাড়ায় যে বাড়িগুলো পাই সেগুলো ভাল নয়। কোনও ঠিকঠাক বাথরুম নেই, মাথার উপর একটা ছাদ রয়েছে শুধু। বাড়িওলা আছে শুধু ভাড়া নিতে। আমরা কীভাবে আছি, তাতে ওদের কিছু আসে যায় না। আমাদের যেহেতু খুব বেশি সুযোগ নেই, সে কারণে এরকম জায়গাতেই থাকতে হয়।" মিলন লেবার কন্ট্রাক্টরের কাজও করেন। মালয়ালম ভাষা বলেন স্বচ্ছন্দে, সৌজন্য বিগত দিনের সুপার স্টার প্রেম নাজির ও মধু।

এই করোনাসময়ে, মিলনকে অনেকে আতঙ্কিত হয়ে ফোন করছেন, জিজ্ঞাসা করছেন বাড়ি ফিরে যাবেন কিনা। তিনি বললেন, "ভয়ের ব্যাপার তো রয়েইছে। এই মুহূর্তে এখানে তেমন কাজ নেই বলেও অনেকেই চলে যাচ্ছে।"

প্রশাসন এই সংযোগকারীদের তাঁদের কাজের জন্য মহার্ঘ ভাতা দিচ্ছে। প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া হয়েছে যাতে অভিবাসী শ্রমিকরা জনস্বাস্থ্য কেন্দ্রে পৌঁছতে কোনও বাধার মুখে না পড়েন। "আমরা বলেছি, ভাল করে নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত ধুতে, আর জ্বর বা কাশি হলে সরকারি হাসপাতালে যেতে। চিকিৎসা ও ওষুধের কোনও খরচ লাগবে না, ফলে চিন্তা করার কিছু নেই।"

coronavirus Murshidabad
Advertisment