লকডাউন জনিত কর্মহীন দিনে কলকাতার নিউ মার্কেটে থরে থরে সাজানো সাইকেল ভ্যান। ছবি: পার্থ পাল, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
দেশের অন্তত সাতটি রাজ্য, যেগুলিতে নভেল করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা ১,৩৬৭ - অর্থাৎ ভারতের মোট ৪,২৮১ আক্রান্তের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ - সোমবার এই আভাস দেয় যে ১৪ এপ্রিল ২১ দিনের রাষ্ট্রীয় লকডাউন উঠে গেলেও কিছু জায়গায় নিষেধাজ্ঞা জারি রাখবে তারা।
Advertisment
তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও আগেই জানিয়েছিলেন যে তাঁর রাজ্যে তিনি লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর পক্ষপাতী। এবার মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, আসাম, ছত্তিসগড় এবং ঝাড়খণ্ডও ইঙ্গিত দিয়েছে যে আগামী মঙ্গলবার লকডাউন পুরোপুরি তুলে দিচ্ছে না তারা।
পশ্চিমবঙ্গ অবশ্য এ বিষয়ে সরকারিভাবে এখনও কিছু জানায় নি। আজ নবান্নে এক সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "লকডাউন উঠবে কিনা জানি না, উঠলেও হুড়মুড় করে সকলে আসতে থাকবেন, তখন সেটাও সঙ্কটজনক হবে।" তবে লকডাউনের মধ্যেই বুধবার থেকে ফুলের বাজার খুলে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন মমতা। ফুলবাজারের পাশাপাশি কিসান মান্ডি, কৃষকবাজার খোলা রাখারও বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
আসাম, যেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২৬, লকডাউন ঘোষিত হওয়ার পর কেউ রাজ্যে প্রবেশ করতে চাইলে একটি রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
মহারাষ্ট্রে আক্রান্তের সংখ্যা এখন পর্যন্ত ৭৪৮, যা দেশে সর্বোচ্চ। সেখানে মুম্বই এবং পুণে ও সংশ্লিষ্ট এলাকা সহ আরও কিছু 'হটস্পটে' বাড়তে পারে লকডাউনের মেয়াদ। উত্তরপ্রদেশে আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, দিল্লির তবলিগি জামাত সমাবেশের ফলে রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এক ধাক্কায় (৩০৫ জনের মধ্যে ১৫৯ জন) বেড়ে যাওয়ায় ফলে "আপাতত লকডাউন তোলা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে"।
রাজস্থান (২৭৪) "বেশি ঝুঁকিপ্রবণ এলাকায়" নিষেধাজ্ঞা বজায় রেখে "ধাপে ধাপে" লকডাউন থেকে বেরোনোর পন্থা খুঁজছে। ওদিকে ছত্তিসগড়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বঘেল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখে জানিয়েছেন, আন্তঃরাজ্য সফরের ওপর নিষেধাজ্ঞা যাতে বজায় রাখা হয়, নাহলে আক্রান্তের সংখ্যা ব্যাপক হারে বাড়ার সম্ভাবনা।
রেলের কামরাকে আইসোলেশন ওয়ার্ড বানানোর কাজ চলছে পুণের কাছে এক কোচ মেরামতি কারখানায়। ছবি: অরুল হরিজন, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
এদের মধ্যে ব্যতিক্রম মধ্যপ্রদেশ (১৬৫), যেখানকার মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান জানিয়েছেন, ১৫ এপ্রিল থেকে পূর্বঘোষণা মতোই শুরু হবে গম সংগ্রহের প্রক্রিয়া।
হায়দরাবাদে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রশেখর রাও বলেন, "ভাইরাসের বিস্তার রুখতে লকডাউন ছাড়া আর কোনও হাতিয়ার নেই আমাদের কাছে। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন জানাচ্ছি। আমি এই পদক্ষেপকে সম্পূর্ণ সমর্থন করি। অর্থনীতি ছ'মাস বা এক বছর পরেও মেরামত হতে পারে, কিন্তু জীবন চলে গেলে তো আর ফেরত আনা যায় না।" তিনি একটি রিপোর্ট উদ্ধৃত করে বলেন, জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে ভারতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা তুঙ্গে উঠবে বলে অনুমান।
মহারাষ্ট্রের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রাজেশ টোপে বলেন তাঁর রাজ্যে "সাবধান থাকতে হবে মুম্বই এবং পুণে এলাকায়, যেহেতু এই দুই জায়গায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশি... কেউ যেন মনে না করেন যে ১৫ এপ্রিল থেকে পুরোপুরি উঠে যাবে লকডাউন"।
গুয়াহাটিতে আসামের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেন, "লকডাউন যখনই উঠুক, আসামে প্রবেশ করতে ইচ্ছুক, এমন ব্যক্তিদের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে আমাদের। সাময়িকভাবে পাকাপাকি বাসিন্দাদের জন্যও আইএলপি জাতীয় কিছুর প্রয়োজন হতে পারে।"
প্রসঙ্গত, আইএলপি (ILP বা Inner Line Permit) হলো সেই নথি যা নাগাল্যান্ড, অরুণাচল প্রদেশ, মিজোরাম, এবং মণিপুরে প্রবেশ করতে হলে প্রয়োজন পড়ে। এর উদ্দেশ্য হলো এইসব রাজ্যে বহিরাগতদের প্রবেশের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখা।
শর্মা এই প্রক্রিয়াকেই "এন্ট্রি পারমিট" বলে অভিহিত করে বলেন, একসঙ্গে হাজার হাজার মানুষ রাজ্যে ফিরতে চাইলে কোয়ারান্টাইনের জায়গা দেওয়া নিয়ে সমস্যা হতে পারে। তাঁর মতে, ব্যাচে ব্যাচে ফিরতে হবে রাজ্যের বাসিন্দাদের।
ধাপে ধাপে তোলা হবে লকডাউন, লখনৌয়ে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এই ঘোষণা করার একদিনের মধ্যেই উত্তরপ্রদেশ সরকারের তরফে রাজ্যবাসীকে বলা হয় "আরও কিছুদিন অপেক্ষা করার প্রস্তুতি" নিতে। অতিরিক্ত মুখ্যসচিব অবনীশ অবস্থি বলেন, "গত তিন-চার দিনে তবলিগি জামাত সমাবেশের জেরে ১৫৯ জন আক্রান্তের খবর পাওয়া গিয়েছে। এই সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার ফলে রাজ্যে এক ধাক্কায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে।"
লকডাউনের মাঝেই রমরম করে চলছে বারাসাতের বাজার। ছবি: শশী ঘোষ, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন বলেন, রাজ্যে এখন পর্যন্ত চারজন করোনা আক্রান্ত, তবে লকডাউন তখনই উঠবে যখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্পর্কে নিশ্চিত হবে সরকার - "নাহলে ধীরেসুস্থে চলব আমরা"।
সোরেন আরও বলেন, "লকডাউন উঠলে রাজ্যে ফিরবেন প্রায় ৬ লক্ষ শ্রমিক... তবে সৌভাগ্যক্রমে ঝাড়খণ্ডের ৮০ শতাংশই গ্রামাঞ্চল, যা ইতিমধ্যেই বিচ্ছিন্ন, এবং জনবসতির ঘনত্বও বেশি নয়। আমাদের কাছে একমাত্র রাস্তা হলো COVID-19 সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানো। এবং সবরকম চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে তৈরি থাকা।"
মধ্যপ্রদেশে ২৫৬ টি সংক্রমণ এবং ১৪টি মৃত্যু সত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রী চৌহান গম সংগ্রহ প্রক্রিয়া সংক্রান্ত একটি ভিডিও কনফারেন্সে বলেছেন, "১৪ এপ্রিল লকডাউন উঠে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।" তিনি আরও বলেন যে "৩১ মে'র মধ্যে এই প্রক্রিয়া শেষ করার জন্য আরও কিছু সংগ্রহ কেন্দ্র খোলা উচিত", তবে এও বলেন যে ইন্দোর, ভোপাল এবং উজ্জয়িনী জেলার শহরাঞ্চলে ভিড় এড়ানোর স্বার্থে এখনই গম সংগ্রহ শুরু করা হবে না।
ছত্তিসগড়ে মুখ্যমন্ত্রী বঘেল প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন যেন "বিস্তারিত আলোচনার" পরেই ১৪ এপ্রিলের পর আন্তঃরাজ্য সফরের অনুমতি দেওয়া হয়। রাজ্যে ১০ জন করোনা আক্রান্তের মধ্যে আটজনকেই মুক্তি দেওয়া হয়েছে, একথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বঘেল লিখেছেন, "১৪ এপ্রিলের পর যদি সারা দেশে ট্রেন, বিমান, এবং আন্তঃরাজ্য সড়ক পরিবহণ শুরু হয়ে যায়, তবে অন্যান্য রাজ্য থেকে COVID-19 আক্রান্ত মানুষের এ রাজ্যে প্রবেশ করার সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে নতুন সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে রাজ্য।"
আমাদের নিউজলেটার সদস্যতা!
একচেটিয়া অফার এবং সর্বশেষ খবর পেতে প্রথম হন