গুজরাটের 'মোরবি সেতু' দুর্ঘটনার তদন্তে গঠিত এসআইটি তাদের প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দিয়েছে। সম্প্রতি, রাজ্য 'গ্রামোন্নয়ন দফতর' পাঁচ সদস্যের কমিটির রিপোর্ট নিয়ে ইতিমধ্যেই মোরবি পুরসভার সঙ্গে আলোচনা করেছে। এসআইটির প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে আগেই ছিঁড়ে গিয়েছিল ২২টি তার, ঝালাইয়ে নষ্ট হয়েছিল সেতুর ভারসাম্য! সিটের রিপোর্টে আরও জানানো হয়েছে, প্রত্যেকটি প্রধান কেবল সাতটি স্টিলের তার দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল। এই সাতটি তার তৈরির জন্য মোট ৪৯টি তার ব্যবহার করা হয়েছিল। এই ৪৯টি তারের মধ্যে ২২টিতে জং ধরা ছিল, যা দেখে অনুমান করা হচ্ছে দুর্ঘটনা ঘটার আগেই এই তারগুলি ছিঁড়ে গিয়েছিল। দুর্ঘটনার চার মাস পর সিটের রিপোর্টেই উঠে এল চাঞ্চল্য়কর তথ্য।
২০২২ সালের ডিসেম্বরে গুজরাট সরকার গঠিত এসআইটির প্রাথমিক তদন্তে, মোরবি সেতু দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কিত অনেক বিষয় সামনে এসেছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, মোরবি ব্রিজ দুর্ঘটনার মূল কারণ 'জং ধরা ক্যাবল ও পুরনো সাসপেন্ডার'। মরবি সেতু দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ১৩৫ জন।
প্রাথমিক রিপোর্টে আর কী বেরিয়ে এল?
মরবি সেতু দুর্ঘটনার বিষয়ে তৈরি পাঁচ সদস্যের এসআইটির প্রাথমিক প্রতিবেদনে জানা গেছে যে ১৮৮৭ সালে মাচ্ছু নদীর উপর সেতুতে স্থাপিত দুটি প্রধান তারের মধ্যে একটি একেবারেই জরাজীর্ণ অবস্থায় ছিল। রিপোর্টে বলা হয়েছে ইতিমধ্যেই এই তারের প্রায় অর্ধেকই দুর্ঘটনার সময়ের আগেই ছিঁড়ে যায়। গত বছরের ৩০ অক্টোবর দুর্ঘটনার আগেই ব্রিজের বেশির ভাগ তারগুলি ছিঁড়ে গিয়েছিল। SIT-এর তদন্তে জানা গিয়েছে, সেতুর সামনের দিকের মেইন ক্যাবল ভেঙে যাওয়ার কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসআইটি রিপোর্ট অনুসারে, সংস্কার কাজের সময়, পুরানো সাসপেন্ডারগুলি (স্টিলের রডগুলি যা প্ল্যাটফর্মের ডেকের সাথে তারগুলিকে সংযুক্ত করে) নতুন রডগুলির সঙ্গে ঝালাই করা হয়েছিল।
মাচ্ছু নদীর ওপরই ছিল এই ঝুলন্ত সেতু। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে যা পরিচিত ‘ঝুলতো পুল’ নামে। ১৮৭৯ সালে ব্রিটিশ জমানায় এই সেতু তৈরি হয়। মোরবির তৎকালীন শাসক স্যার বাঘাজি ঠাকুরের জমানায় এই পুল তৈরি হয়েছিল। বাঘাজি ঠাকুর, স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে ঠাকুর সাহেব নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি ১৮৫৮ থেকে ১৯২২ সাল পর্যন্ত মোরবি শাসন করেন। স্যার বাঘাজির পরিকল্পনাতেই মোরবি শহর তৈরি হয়। যার মধ্যে রয়েছে দেশের প্রথম আর্ট ডেকো প্রাসাদ। গ্রিন চক নামে ইউরোপীয় স্থাপত্যের নকশায় শহরের প্রাণকেন্দ্রে তৈরি একটি চারকোণা কেন্দ্র।
মোরবি শহরের সরকারি ওয়েবসাইট বলছে, ঝুলন্ত সেতুটির ২৩৩ মিটার লম্বা। চওড়ায় ১.২৫ মিটার। এটা শহরের দরবারগড় প্রাসাদ ও লাখধিরজি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজকে যুক্ত করেছে। এই সেতু মোরবি শহরের পর্যটনের অন্যতম আকর্ষণ। এর তৈরির কৌশল দীর্ঘদিন ধরেই পর্যটকদের বিস্মিত করেছে। জেলার ওয়েবসাইট অনুযায়ী এই সেতুটি ‘মোরবির শাসকদের প্রগতিশীল এবং বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার’ সাক্ষী। দুই বছর আগে এই ঝুলন্ত সেতু বন্ধ হয়ে যায়। কোনওরকম ফিটনেট সার্টিফিকেট ছাড়াই গত ২৬ অক্টোবর খোলা হয়েছিল।
মোরবি সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় ওরেভা গ্রুপকে। এসআইটি গত বছরের 20 অক্টোবর মোরবি সেতু দুর্ঘটনার বিষয়ে একাধিক ত্রুটির উল্লেখ করেছে। সেতু মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার ক্ষেত্রেও ওরেভা গ্রুপের গাফিলতির কথা রিপোর্টে উঠে এসেছে।
মোরবি পুরসভার জেনারেল বোর্ডের অনুমতি ছাড়াই অজন্তা ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেডের ওরেভা গ্রুপকে মোরবি ব্রিজ পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দিয়েছিল। এই সংস্থাটি ২০২২ সালের মার্চ মাসে সেতুটি মেরামতের জন্য বন্ধ করে দেয় এবং ২৬ অক্টোবর কোনও অনুমতি ছাড়াই সেতুটি জনসাধারণের জন্য খুলে দেয়।