গাম্বিয়ার পর এবার ভারতীয় কাশির সিরাপ খেয়ে বহু শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছে উজবেকিস্তান। উজবেকিস্তান দাবি করেছে একটি ভারতীয় ওষুধ কোম্পানির তৈরি কাশির সিরাপ খাওয়ার পর সেদেশে মৃত্যু হয়েছে ১৮ শিশুর।
গাম্বিয়া ঘটনার পর, এটি দ্বিতীয় বড় ঘটনা যখন কাশির সিরাপ প্রস্তুতকারী একটি ভারতীয় সংস্থার বিরুদ্ধে এই বড়সড় অভিযোগ আনা হয়েছে। এ বিষয়ে ভারত এবং উজবেকিস্তান নিজ নিজ পর্যায়ে তদন্ত শুরু করেছে। পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে ধারাবাহিকভাবে ব্যাখ্যাও দেয়া হচ্ছে। উভয় দেশের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে বিবৃতিও জারি করা হয়েছে। আধিকারিকরা জানিয়েছেন যে ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি মেরিয়ন বায়োটেকের নয়ডা অফিসের পরিদর্শন করা হয়েছে এবং আরও ছয়টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
উজবেকিস্তানের স্বাস্থ্য মন্ত্রক দাবি করেছে যে মারা যাওয়া ১৮ শিশু নয়ডার মেরিয়ন বায়োটেকের তৈরি কাশির সিরাপ 'ডক-১ ম্যাক্স' খেয়ে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। এই বিষয়টি সামনে আসার পর, ভারতের ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল উজবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রকের কাছে ঘটনার বিষয়ে আরও তথ্য চেয়েছেন। উত্তর ভারতের সেন্ট্রাল ড্রাগ রেগুলেটরি টিম এবং স্টেট ড্রাগ রেগুলেটরি টিম যৌথভাবে ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থার পরিদর্শনের পাশাপাশি ওষুধের নমুনাও সংগ্রহ করে। মন্ত্রক জানিয়েছে, ল্যাব টেস্টিংয়ের রিপোর্টে কাশির সিরাপে রাসায়নিক ইথিলিন গ্লাইকল পাওয়া গেছে।
ওষুধ প্রস্তুতকারী ভারতীয় সংস্থা ম্যারিয়ন বায়োটেকের তরফে হাসান হ্যারিস বলেছেন উভয় দেশের সরকারই বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে । সেন্ট্রাল ড্রাগ স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন (CDSCO) স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডাঃ মনসুখ মান্ডাভিয়ার নির্দেশ অনুসরণ করে ২৭ ডিসেম্বর থেকে উজবেকিস্তানের জাতীয় ওষুধ নিয়ন্ত্রকের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছে। বর্তমানে কাশির সিরাপ উৎপাদন বন্ধ রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে কোম্পানির পক্ষ থেকে বলা হয়, “আমাদের দিক থেকে কোনো সমস্যা নেই এবং তদন্তেও কোন সমস্যা নেই। আমরা গত ১০ বছর থেকে কাজ করছি। সরকারের রিপোর্ট আসার পর আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব। তবে এই মুহূর্তে ওষুধ উৎপাদন বন্ধ রাখা রয়েছে। কর্মকর্তারা বলেছেন যে উজবেকিস্তানে যে 'কাশির সিরাপ' থেকে মৃত্যুর ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে সেটি ভারতে বিক্রি হয় না। অর্থাৎ, ভারতে এই নিয়ে কোনও বিপদ নেই, এই ওষুধটি কেবল রপ্তানি হয়। বিদেশ মন্ত্রকের তরফে এক ব্রিফিংয়ে এই বিষয়ে বলা হয়েছে যে আমরা এই বিষয়ে মিডিয়া রিপোর্ট দেখেছি। উজবেকিস্তানের সংস্থাগুলি বিষয়টি তদন্ত করছে, তবে সেখানে আমাদের দূতাবাসের কাছ থেকে যাবতীয় তথ্য চেয়ে পাঠিয়েছি।
এর আগে, স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছিল যে ম্যারিয়ন বায়োটেক উত্তরপ্রদেশ ড্রাগ কন্ট্রোলার থেকে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা এবং রপ্তানির উদ্দেশ্যে "Doc1 Max" সিরাপ এবং ট্যাবলেট তৈরি করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এই কাশির সিরাপটির নমুনা নেওয়া হয়েছে এবং পরীক্ষার জন্য চণ্ডীগড়ের রিজিওনাল ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরিতে (আরডিটিএল) পাঠানো হয়েছে।
উজবেকিস্তানের এই অভিযোগের আগে, এই বছরের শুরুতে গাম্বিয়ায় ৭০ শিশুর মৃত্যু ঘিরে উত্তাল হয় পরিস্থিতি। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তরফে হরিয়ানার মেইডেন ফার্মাসিউটিক্যালসের তৈরি কাশির সিরাপ এই মৃত্যুর সঙ্গে সম্পর্কিত। এর পরে ভারতের ড্রাগস কন্ট্রোলার জেনারেল (ডিসিজিআই) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে (ডব্লিউএইচও) জানায়, উপযুক্ত তদন্ত ছাড়াই ভারতে তৈরি চারটি কাশির সিরাপের গাম্বিয়ায় শিশু মৃত্যুর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।