'ছেলেদের সঙ্গে কেন দেখা করতে দেওয়া হল না?' প্রশ্ন এনকাউন্টারে মৃতদের পরিবারের।
'আমি ওকে ছাড়া থাকতে পারব না। ওকে যেখানে মারা হয়েছে আমাকেও সেখানে নিয়ে গিয়ে গুলি করে দাও।' হাপুস নয়নে কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলছিল বছর আঠারোর যুবতী। হায়দরাবাদ ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্তের স্ত্রী মেয়েটি। এনকাউন্টারে স্বামীর মৃত্যু খবর আসতেই নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেনি অন্তসত্ত্বা তরুণী।
Advertisment
শুক্রবার ভোররাতেই এনকাউন্টারে মৃত্যু হয় হায়দরাবাদ ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের চার অভিযুক্তের। ঘটনার পুনর্নির্মানের সময় পিস্তল ছিনতাই করে পুলিশকেই আক্রমণ করে তারা। পরে পালানোর চেষ্টা করে। আত্মরক্ষার্থেই তাই গুলি চালাতে হয়েছে পুলিশকে। সেই সংঘর্ষেই মৃত্যু হয়েছে চার হেফাজতপ্রাপ্ত অভিযুক্তের।
এনকাউন্টারে মৃতের স্ত্রীর কান্না থামছে না। আর সন্তানের মৃত্যুর খবরে তার মা বলছেন, 'আমাদেরকে কিছু সময় দেওয়া উচিত ছিল। ১৪ দিনের হেফাজত শেষে ওর সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হবে বলে আমাদের বলা হয়েছিল। কেউ কেউ আগেই বলেছিল ওকে মেরে দেওয়া হবে। আমাদেরকে জানালে মারার আগে ওর সঙ্গে শেষ দেখা করে আসতাম।' ছেলের বিরুদ্ধে ঘৃণ্য অভিযোগ উঠেছে। তা জেনেও মৃত চেন্নাকেশাভুলুর মায়ের প্রশ্ন, 'সত্যি কী মারার খুব প্রয়োজন ছিল? ওকে জেলে রাখা যেত। কুকুরের খাবার দেওয়া হত।'
Advertisment
এনকাউন্টারের খবরে শিউরে উঠেছিলেন এই হত্যাকাণ্ডে আরেক অভিযুক্ত মা। ছেলের মৃত্যর খবরে জ্ঞান হারিয়েছিলেন তিনি। তাঁর কথায়, 'আমি ছেলেকে হারিয়েছি। গ্রামবাসীরা আর কী বলবেন? আমরা খুবই গরিব। ছেলের আত্মার শান্তি কামনা করা ছাড়া আমাদের কিছুই করার নেই।' ছেলের এই পরিণতির জন্য বাকি তিন অভিযুক্তকেই গালমন্দ করছিলেন বৃ্দ্ধা।
জনরোষ আঁচ করতে পেরেই কী এনকাউন্টার করা হল হায়দরাবাদকাণ্ডের চার অভিযুক্তকে? প্রশ্ন তুলেছেন বহু মানুষ। অশ্রুভেজা চোখে সেই প্রশ্নই করে বসলেন হায়দরাবাদ ধর্ষণ ও হত্যায় আরেক অভিযুক্ত ও এনকাউন্টারে নিহতের বাবা রাজাপ্পা। তিনি বলেন, 'আমার ছেলেকেই কেন এভাবে মারা হল?' একই ঘটনার চতুর্থ অভিযুক্তের বাবা জানতে চান, 'কেন তাহলে শেষ দেখাটুকু করতে দেওয়া হল না?'
শুক্রবার রাতেই মেহেবুবনগর হাসপাতাল থেকে চার অভিযুক্তেরই দেহ হাতে পেয়েছে তাদের পরিবার। উল্টো ছবি নির্যাতিতার পরিবারে। এনকাউন্টারে অভিযুক্তদের মৃত্যুর খবরে সন্তুষ্ট নির্যাতিতা পশু চিকিৎসকের বাবা। খবর প্রকাশ্যে আসতেই পুলিশকে কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। কিন্তু, মেয়েকে ফিরে না পাওয়ার যন্ত্রণা নিয়েই বাকি জীবন কাটাতে হবে তাদের। আক্ষেপ ঝরে পড়ছিল তাঁর কথায়।