করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বেসামাল ভারত। প্রশ্নের মুখে দেশের চিকিৎসা পরিষেবা। অক্সিজেন থেকে অ্যাম্বুলান্স, হাসপাতালের শয্যার জন্য হাহাকার রব। এই পরিস্থিতিতে ভারত সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম। করোনাকালে কুম্ভ মেলার অনুমতি, কয়েকটি রাজ্যে নির্বাচনের ঘোষণার উল্লেখ করে ভারতে সংক্রমন বৃদ্ধির দায় কার্যত মোদী সরকারের উপরই চাপাচ্ছে নিউইয়র্ক টাইম, গার্ডিয়ান, লে মনডের মতো সংবাদ পত্রগুলো। যাকে 'একতরফা' ব্যাখ্যা বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় সরকার। আন্তর্জাতিক সাংবাদ মাধ্যমের মুখ বন্ধ করতে মরিয়া মোদী-শাহরা। ভারতের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের ব্যাখ্যা কিভাবে মোকাবিলা করতে হবে সম্প্রতি রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে তার রূপরেখাও বাতলে দিয়েছেন খোদ বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
ভারত সরকার করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গ মোকাবিলায় মোটেই প্রস্তুত ছিল না। দিল্লির হাসপাতালের বাইরে আ্যাম্বুলান্সে অপেক্ষারত সংক্রমিত রোগীদের ছবি তুলে ধরে সে কথাই সম্প্রচার করছে বিদেশি সংবাদ মাধ্যমগুলো। ফলে ভারত সরকারের প্রতি পৃথিবীব্যাপী নেতিবাচক মানসিকতা গড়ে উঠছে বলে আশঙ্কা এ দেশের কেন্দ্রীয় সরকারের। যার মোকাবিলায় বৃহস্পতিবার বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন বিদেশমন্ত্রী। বৈঠকে উপস্থিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শীর্ষ আধিকারিকের থেকে পাওয়া খবর অনুসারে, মূলত দুটি বিষয় নিয়ে বার্তা দিয়েছেন এস জয়শঙ্কর।
ভয়াবহ অবস্থা প্রতিরোধে ভারতকে সহায়তায় বহু দেশ হাত বাড়িয়েছে। অনেকেই সাহায্য করতে ইচ্ছুক। এক্ষেত্রে বিদেশ থেকে কিভাবে করোনা ভ্যাকসিন, অক্সিজেন, ওষুধ সহ নানা সাহায্য ভারতে মসৃণভাবে পৌছেন সম্ভব? রাষ্ট্রদূতদের সেইসব জিজ্ঞাস্যের জবাব আলোচনার শুরুতেই স্পষ্ট করে দেন বিদেশমন্ত্রী।
পরে, করোনা মোকাবিলায় ভারতের অবস্থান নিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর মোকাবিলার পথ বাতলে দেন এস জয়শঙ্কর। রাষ্ট্রদূতদের হতাশ না হয়ে ভারত সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করার কথা বলেছেন তিনি। সরকারি আধিকারিকের কথা অনুসারে, জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সম্পর্কে কোনও বিশেষজ্ঞই তেমনভাবে আগাম সতর্ক করেননি। গত বছরই দেখা দিয়েছে করোনার থাবা উন্নত দেশগুলোতে কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিল। সুতরাং এটা শুধু ভারতে সংগঠিত কোনও বিপর্যয় নয়।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে যে, দেশে অক্সিজেনের ঘাটতি রয়েছে। ফলে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের মৃত্যুর সংখ্যাও। এপ্রসঙ্গে বিদেশমন্ত্রীর ব্যাখ্যা, অক্সিজেনের ঘাটতি নেই। কিন্তু ভৌগলিক কারণেই তা দেশের সর্বত্র সঠিক সময় পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। পরে বিশেষ উড়ান ও ট্রেনে করে অক্সিজেন পৌঁছে দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া গিয়েছে। এছাড়া ভারতে করোনা বৃদ্ধির জন্য পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনকে দায়ী করা হলেও তা মানতে নারাজ কেন্দ্র। মোদী সরাকের পাল্টা দাবি, তাহলে কেন দিল্লি বা মহারাষ্ট্রে সংক্রমণ বাড়ল?
ভারতে কোভিডের 'সুপার স্প্রেডার' বলা হচ্ছে কুম্ভ মেলাকে। এছাড়া ভোটে মোদী-শাহর ব়্যালিতে স্বাস্থ্যবিধি উধাওয়ের বিষয়টিও ভারতে করোনার প্রকোপ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ বলে বিবেচিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমেও এই দুই বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। যদিও কুম্ভ মেলার বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে মুখ খোলেননি বিদেশমন্ত্রী। এমনকি এইসব নিয়ে বৈঠকে যোগদানকারী কোনও রাষ্ট্রদূতও কোনও কথা বলেনি।
কেন বারতের চাহিদা পূরণের আগেই বিদেশে ভ্যাকসিন পাঠাল কেন্দ্র? দেশজুড়ে টিকার আকালকে কেন্দ্র করে মোদী সরকারকে বিঁধছে বিরোধী দলগুলো। এপ্রসঙ্গেও বৈঠকে কেউ কোনও কথা বলেননি বলে খবর।
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন