মহারাষ্ট্র, দিল্লি, কেরলের পাশাপাশি বাংলাতেও চোখ রাঙাচ্ছে কোভিড-১৯। লাফিয়ে বাড়ছে অ্যাকটিভ আক্রান্তের সংখ্যাও। শনিবার স্বাস্থ্যমন্ত্রকের দেওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা (Corona Virus) আক্রান্ত হয়েছেন ১২ হাজার ১৯৩ জন। যার মধ্যে শুরু বাংলাতেই সংক্রমিত ১৯৯ জন। রবিবারের আপডেট অনুসারে সংক্রমণ কিছুটা কমলেও সক্রিয় রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে দেশ জুড়ে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রকের ডেটা অনুসারে গত ২৪ ঘন্টায় দেশ জুড়ে নতুন করে কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়েছেন ১০হাজার ১১২ জন। সেই সঙ্গে অ্যাকটিভ কেসের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৬৭হাজার ৮৬ জন। গতকালের তুলনায় একদিনে কিছুটা কমেছে মৃতের সংখ্যা। স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তথ্য অনুসারে দেশে একদিনে মারণ ভাইরাসের বলি হয়েছেন ২৯ জন। পাশাপাশি রাজধানী দিল্লিতে একদিনে আক্রান্তের সংখ্যাটা ভয় ধরাবে। গত ২৪ ঘন্টায় দিল্লিতে সংক্রমিত হয়েছেন ১৫১৫জন । সেখানে মহারাষ্ট্রে একদিনে ৮৫০ জন নয়ুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এই মুর্হূতে দেশে সুস্থতার হার ৯৮.৬৬ শতাংশ। একই সঙ্গে দৈনিক ইতিবাচক হার ৭.০৩ শতাংশ যেখানে সাপ্তাহিক ইতিবাচক হার ৫.৪৩ শতাংশ রেকর্ড করা হয়েছে।
৭০ হাজারের দোড়গোড়ায় সক্রিয় রোগীর সংখ্যা, দেশে নয়া স্ট্রেনে দাপটে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি। এর মাঝেই কেন্দ্রের দাবি অতিমারি এখনও শেষ হয়নি। আটটি রাজ্যকে করোনা পরিস্থিতির ওপর নিবিড়ভাবে নজর রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তালিকায় রয়েছে কোন কোন রাজ্য? যে আটটি রাজ্যকে সতর্ক করে কেন্দ্র চিঠি দিয়েছে সেগুলি হল উত্তরপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র, কেরালা, কর্ণাটক, হরিয়ানা এবং দিল্লি।
কেন্দ্র আটটি রাজ্যকে ক্রমবর্ধমান কোভিড পরিস্থিতির উপর নিবিড় নজর রাখতে বলেছে। কেন্দ্রের তরফে লেখা এক চিঠিতে স্বাস্থ্য সচিব রাজেশ ভূষণ লিখেছেন, “মহামারী এখনও শেষ হয়নি, এবং আমাদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে, সম্ভাব্য সব ধরণের ঝুঁকি এড়াতে সতর্ক থাকা একান্তভাবেই প্রয়োজন”। মিঃ ভূষণ বলেন, ‘সংক্রমণের জেরে হাসপাতালে ভর্তির হার এবং মৃত্যুর হার কম রাজ্যগুলিকে সতর্ক থাকতে হবে। স্থানীয়স্তরের সংক্রমণকে রুখতে সব ধরণের পদক্ষেপ নেওয়া একান্ত জরুরি’। রাজ্যগুলিকে জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের জন্য পাঠানো ইতিবাচক নমুনার সংখ্যা বাড়ানোর জন্য বলা হয়েছে। দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রী সৌরভ ভরদ্বাজ সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে বলেছেন, দিল্লিতে বেশ কিছুদিন সংক্রমণ উর্ধ্বমুখী। পরিস্থিতির ওপর কড়া নজর রাখা হচ্ছে আশা করা হচ্ছে আগামী দিনে এই সংক্রমণ কিছুটা কমতে পারে”।
নয়া স্ট্রেনের দাপটেই বাড়বাড়ন্ত করোনা ভাইরাসের। উপসর্গ (Symptoms) মৃদু হলেও প্রাণ হারাচ্ছেন প্রবীণ ব্যক্তিরা, সেই সঙ্গে যাদের কো-মর্বিডিটি (Co-Morbidity) আছে এমন মানুষ অর্থাৎ যাঁদের হৃদপিণ্ড, কিডনি, ফুসফুস, যকৃতের রোগ আছে তাঁদের ক্ষেত্রে আরও সাবধানতা মেনে চলার নির্দেশ জারি করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক।
রিপোর্ট অনুসারে বলা হয়েছে, যারা এই নয়া স্ট্রেনের কবলে পড়ছেন তাদের মধ্যে ১-২ দিন ধরে জ্বর, গলা ব্যথা, মাথাব্যথা, ডায়রিয়ার মতো উপসর্গ ছাড়াও শরীরে প্রচণ্ড ব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। XBB.1.16 বা Arcturus ভেরিয়েন্ট তরুণদের অনেক বেশি সংক্রমিত করছে। এনিয়ে বিশেষ ভাবে সাবধানতা মেনে চলার কথা বলেছেন চিকিৎসকরা। তাদের কথায়, XBB.1.16 বা Arcturus ভেরিয়েন্ট অল্পবয়সীদের সংক্রামিত করছে এমন আবহে কোভিড বিধি মেনে চলা বাধ্যতামূলক।
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন এখনও যারা বুস্টার ডোজ গ্রহণ করেননি বিশেষ করে যদি আপনি অন্য কোন রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে সংক্রমণ থেকে বাঁচতে “টিকার বুস্টার ডোজ সংক্রমণের ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে দিতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস , দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ (CKD), করোনারি আর্টারি ডিজিজ (CAD), রোগীদের ইমিউনোসপ্রেসিভ ওষুধ ইত্যাদির ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত, এবং বুস্টার ডোজ সহ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে টিকা নেওয়া উচিত।
শুধু ভারত নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়াজুড়েই বাড়ছে কোভিড সংক্রমণ। এদিকে বাড়তে থাকা করোনা নিয়ে ইতিমধ্যেই বিবৃতি দিয়েছে WHO, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে করোনার এই বাড়বাড়ন্তের পিছনে রয়েছে XBB.1.16 ভ্যারিয়েন্ট। ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ) সোমবার দেশের জনগণকে ক্রমবর্ধমান কোভিড সংক্রমণের মধ্যে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেছে যে তাদের যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখা উচিত।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছে ওমিক্রন XBB.1.16 ভেরিয়েন্ট। ক্রমশ মিউটেশনের মাধ্যমে নিজেকে আরও বেশি সংক্রামক করে তুলছে ওমিক্রনের এই ভেরিয়েন্ট। গত ১৫ মাসে ভারতে ওমিক্রনের চারশো নতুন সাব-ভেরিয়েন্টকে শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে, সমস্ত ভেরিয়েন্টের ৯০ শতাংশ হল XBB৷ XBB.1.16।