BF.7, যার দৌলতে ফের কোভিড আতঙ্ক সারা বিশ্বে দানা বেঁধেছে, জানা গিয়েছে ইতিমধ্যে ভারতেও এই নয়া স্ট্রেনে আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে। সুত্রের খবর অনুসারে জানা গিয়েছে ওমিক্রন সাব-ভেরিয়েন্ট BF.7-এ দুই আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে ভারতেও। প্রথমটি সেপ্টেম্বরে ওড়িশায় এবং দ্বিতীয়টি নভেম্বরে গুজরাটে সনাক্ত করা হয়েছে।চিনে করোনা সংক্রমণের বাড়বাড়ন্তের পিছনে আছে ওমিক্রনের শাখা BF.7। অবশ্য প্রথমবার না। এর আগে অক্টোবরে এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। চরিত্র বদলে এই সাব ভেরিয়েন্ট হয়ে উঠেছে আরও ভয়ংকর। একসঙ্গে ১৮ জনের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ছে সংক্রমণ। তার রূপবদলের ফলেই এখন নাজেহাল বিশ্ব। এমনটাই জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে চিনের প্রতিদিন ২,০০০ জন করে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। আক্রান্তদের স্যাম্পেল টেস্ট করে দেখা গিয়েছে, বেশিরভাগই BF.7 দ্বারা সংক্রমিত। ২০১৯-এ চিনেই প্রথম করোনা ধরা পড়েছিল। তারপর বারবার চরিত্র বদলাতে দেখা গিয়েছে এই ভাইরাসকে। বিশেষজ্ঞরা এনিয়ে বারবার সতর্ক করে দিয়েছেন বিশ্ববাসীকে। তাঁরা বারবার জানিয়েছেন, করোনা কিন্তু পুরোপুরি শেষ হয়ে যায়নি। রূপ বদলে ফিরে আসতে পারে। হতে পারে আরও চেয়েও বেশি সংক্রামক।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, করোনার এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে সংক্রামক রূপ হল এই নয়া স্ট্রেন। এত দ্রুত তা ছড়ায় যে টিকাতেও এর সংক্রমণ থেকে নাগরিকদের সুরক্ষা দিতে পারছে না চিন। এটা আসলে ওমিক্রনের BA.5.2.1.7 রূপ। একেই সংক্ষেপে BF.7 বলা হচ্ছে।করোনার এই নতুন ভাইরাস বা ওমিক্রনের উপশাখা BF.7-এর উপসর্গ আলাদা কিছু নয়। করোনার প্রথম সময় থেকে যা যা উপসর্গ ছিল সেগুলোই। অর্থাৎ, জ্বর হওয়া, কাশি হওয়া, সর্দি হওয়া, নাক দিয়ে জল গড়ানো। বিশেষজ্ঞদের একাংশের আশঙ্কা এই অতিসংক্রামক করোনার জন্য আগামী কয়েক মাসের মধ্যে বিশ্বে লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।
করোনার প্রকোপ বাড়ার পর ভারত সরকারও সতর্কতা জারি করেছে। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ব্রাজিল, চীন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সাম্প্রতিক কোভিড কেস বৃদ্ধির মধ্যে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মান্ডাভিয়া বুধবার (২১ ডিসেম্বর) পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন । চিন, জাপান, আমেরিকায় কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। মঙ্গলবার চিনে প্রায় ৩ হাজার নতুন আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার জাপানে ১ লাখ ৮৫ হাজারেরও বেশি নতুন আক্রান্তের হদিশ মিলেছে। জাপানে ২৩১ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আমেরিকায় একদিনে আক্রান্তের সংখ্যা ২০ হাজারের বেশি । একদিনে মৃত্যু হয়েছে ১১৭ জনের।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী আসন্ন উৎসবের মরসুমের সকলকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে। রাজ্যগুলিকে সতর্ক করে তিনি বলেন, ‘কোভিড এখনও শেষ হয়নি। আমি সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগকে সতর্ক থাকতে এবং মনিটরিং জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছি। আমি জনগণকে কোভিড ভ্যাকসিন নিতেও আহ্বান জানাচ্ছি’। ডঃ মনসুখ মান্ডাভিয়া ভারতীয় SARS-CoV-2 INSACOG নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ভেরিয়েন্টগুলি ট্র্যাক করার জন্য ইতিবাচক কেস সনাক্ত করার জন্য জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের নজরদারি ব্যবস্থা জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছেন।
চিনে কোভিড-১৯-এর বাড়বাড়ন্তের জন্য দায়ী ওমিক্রনের সাব-ভেরিয়েন্ট BF.7-এর তিনটি কেস ভারতেও রিপোর্ট করা হয়েছে। বুধবার সরকারি সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। কর্মকর্তারা বলেছেন যে গুজরাট বায়োটেকনোলজি রিসার্চ সেন্টার ভারতে প্রথম BF.7 কেস সনাক্ত করেছে। গুজরাট থেকে এখন পর্যন্ত নয়া স্ট্রেনে ২ জনের আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে, অপরটি ওড়িশা থেকে রিপোর্ট করা হয়েছে।