করোনা কাঁপুনি ধরাচ্ছে বাণিজ্যনগরীতে। ফের লাগাম ছাড়া সংক্রমণে বিধ্বস্ত মুম্বই। মঙ্গলবার মুম্বই শহরে পাঁচশোরও বেশি করোনা আক্রান্তের হদিশ মিলেছে। স্বভাবতই নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। ফের এক দফায় করোনা পরীক্ষায় জোর দিতে নির্দেশ বৃহন্মুম্বই পুরসভার কমিশনার ইকবাল সিং চাহালের। এরই পাশাপাশি শহরে করোনার টিকাকরণ অভিযানও দ্রুত হারে পরিচালনার পরামর্শ কমিশনারের।
এদিকে বুধবার সংক্রমণ ছাড়াল হাজারের গন্ডি। মুম্বইয়ের ধারাভির সংক্রমণও বাড়াচ্ছে উদ্বেগ। ইতিমধ্যেই ধারাভিতে নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১০ জন। মোট করোনা সক্রিয় রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৭৩৯। অন্যদিকে শুধুমাত্র মুম্বইতে সংক্রমণ বেড়েছে ৬৮ শতাংশ। ইতিমধ্যেই রাজ্যে করোনা সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৪০৩২। তার মধ্যে ২৯৭০ জনই মুম্বইয়ের বাসিন্দা। পরিসংখ্যান অনুসারে গত এক মাসে মহারাষ্ট্রে অ্যাকটিভ আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে তিনগুণ।
কোভিডের এই বাড়বাড়ন্ত নিয়ে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সঙ্গে কথা বলার সময় রাজ্যের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব ডঃ প্রদীপ ব্যাস বলেছেন, "মানুষের মধ্যে করোনা নিয়ে ভয়ভীতি অনেকটাই কমে গেছে, তারা একে অপরের সঙ্গে কোভিড বিধি না মেনেই মেলামেশা করছেন যার ফলেই সংক্রমণ বেড়েছে হুহু করে"। সেই সঙ্গে নতুন সংক্রমণের কারণ হিসাবে ওমিক্রনের নয়া প্রজাতিকেও দুষেছেন তিনি। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান অনুসারে ৩১ মে পর্যন্ত রাজ্যে মোট ১৬,৩৬,৩২০ জন কোভিডের বুস্টার ডোজ গ্রহণ করেছেন। কোভিড টাস্ক ফোর্সের অন্যতম সদস্য ডাঃ প্রদীপ আওয়াতে বলেন, " এখনও অনেকেই বুস্টার ডোজ গ্রহণ করেননি ফলে করোনা ফের রাজ্যে তার আধিপত্য জানান দিচ্ছে"।
করোনার সংক্রমণ দেশে ছড়ানোর পর মহারাষ্ট্রেই তা সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক আকার নিয়েছিল। করোনায় মৃত্যু মিছিল দেখেছে মারাঠাভূমি। একটা সময়ে মাত্রাতিরিক্ত সংক্রমণে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিল বাণিজ্যনগরী মুম্বই। কাতারে-কাতারে মানুষ ফি দিন করোনায় কাবু হয়েছেন মুম্বইয়ে। যদিও পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে সংক্রমণ কমতে থাকায় স্বাভাবিক হয় পরিস্থিতি।
তবে গত কয়েকদিন ধরে নতুন করে মুম্বই শহরে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। উদ্বেগও চরমে উঠেছে। গতকাল পাঁচশোরও বেশি মানুষ মুম্বই শহরে নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। স্বভাবতই ঘুম উড়েছে বৃহন্মুম্বই পুরনিগমের। পুরনিগমকের কমিশনার ইকবাল সিং চাহাল কর্মীদের সংক্রমণ মোকাবিলায় আরও বেশি সতর্ক থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ”বর্ষা আসার ঠিক আগেই করোনার এই সংক্রমণ-বৃদ্ধি উদ্বেগজনক। আমাদের সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির জন্য পরিকল্পনা করে এগোতে হবে।”
যুদ্ধকালীন তৎপরতার ভিত্তিতে এবার মু্ম্বই শহরে করোনা পরীক্ষার সংখ্যা আরও বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এরই পাশাপাশি টেস্টিং ল্যাবগুলিকেও সক্রিয় থাকার পরামর্শ কমিশনারের। শহরের ১২-১৮ বছর বয়সী শিশুদের দ্রুত টিকাকরণের আওতায় আনার এবং প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য বুস্টার ডোজ প্রয়োগে সবরকম তৎপরতা নিতেও পুরনিগমের কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
একটা সময় সংক্রমণ শিখরে পৌঁছেছিল বাণিজ্যনগরী। অসুস্থদের চিকিৎসায় তড়িঘড়ি মালাডের জাম্বো হাসাপতালকে তৈরি রাখা হয়েছিল। এবার সেই জাম্বো হাসপাতালটিকে সক্রিয় রাখার পরামর্শ কমিশনারের। হাসপাতালটিতে যাতে পর্যাপ্ত সংখ্যায় কর্মীদের নিযুক্ত রাখা হয় সেব্যাপারে আগেভাগে সব রকম ব্যবস্থা করে রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
এছাড়াও বিএমসির স্বাস্থ্য বিভাগের আধিকারিক থেকে শুরু করে সব কর্মীদেরও করোনা মোকাবিলায় উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। শহরের সরকারি হাসপাতালগুলির পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালগুলিকেও পরিস্থিতি মোকাবিলায় তৈরি থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
Read full story in English