ভারত এবার লকডাউন তুলে নিচ্ছে, এরকম সময়ে দেশের বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট জনস্বাস্থ্য ও কমিউনিটি মেডিসিন বিশেষজ্ঞ - যাঁদের মধ্যে কোভিড নিয়ে আইসিএমআর রিসার্চ গ্রুপের দুজন সদস্যও রয়েছেন,সরকারের এই অতিমারী মোকাবিলা নীতির সমালোচনা করেছেন। একই সঙ্গে মহামারী বিশেষজ্ঞদের সিদ্ধান্ত প্রণয়ণে শামিল না করার বিষয়েও মুখ খুলেছেন তাঁরা।
ইন্ডিয়ান পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশন, ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অফ প্রিভেনটিভ অ্যান্ড সোশাল মেডিসিন এবং ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অফ এপিডেমিয়োলজিস্টসের এক যোথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “দেশের বহু সংখ্যার মধ্যে যখন গোষ্ঠী সংক্রমণ ছড়িয়ে গিয়েছে সে পর্যায়ে কোভিড-১৯ নিশ্চিহ্ন করা যাবে, এমন প্রত্যাশা করা বাস্তবোচিত নয়।”
সরকার এখনও বলে আসছে যে গোষ্ঠী সংক্রমণ হয়নি, এদিকে সংক্রমিতের সংখ্যা শনিবার ১৭৩৭৬৩-তে পৌঁছিয়েছে। শনিবার ৭৯৬৪টি নতুন সংক্রমণ ধরা পড়েছে, যা এ যাবৎ সর্বোচ্চ। তবে প্রথমবারের জন্য সক্রিয় সংক্রমণের সংখ্যা কমেছে। শুক্রবার এই ধরনের রোগীর সংখ্যা ছিল ৮৯৯৮৭, শনিবার তা কমে দাঁড়িয়েছে ৮৬৪২২-এ।
এই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “ভারতের জাতীয়ক্ষেত্রে লকডাউন ২৫ মার্চ ২০২০ থেকে, ৩০ মে ২০২০ পর্যন্ত অতীব কঠোর ভাবে পালিত হয়েছে, তা সত্ত্বেও এই পর্যায়ে কোভিড ১৯ এক্সপোনেনশিয়ালি বৃদ্ধি পেয়েছে... এই ভয়াবহ লকডাউন সম্ভবত কোনও একটি প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠানে সর্বাপেক্ষা খারাপ পরিস্থিতির সিমুলেশন মডেলে থেকে উদ্ভূত... পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ প্রমাণ করেছে এই মডেলটি একেবারেই কার্যকর নয়। যদি ভারত সরকার যেসব মহামারী বিশেষজ্ঞের রোগ সংক্রমণ সম্পর্কে এই মডেলারদের তুলনায় বেশি জ্ঞান রয়েছে, তাঁদের সঙ্গে পরামর্শ করতেন, তাহলে সম্ভবত এর চেয়ে বেশি উপকার হত…”
এই বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন এইমসের সেন্টার ফর কমিউনিটি মেডিসিনের প্রধান ডক্টর শশী কান্ত, ও বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটির কমিউনিটি মেডিসিনের প্রাক্তন অধ্যাপক ও প্রধান ডক্টর ডি সি এস রেড্ডি। এই দুজনেই গত ৬ এপ্রিল কোভিড ১৯এর উপর নজরদারি নিয়ে আইসিএমআর যে বিশেষ গোষ্ঠী তৈরি করেছিল, তার সদস্য। ডক্টর রেড্ডি এই গোষ্ঠীর প্রধানও বটে।
সানডে এক্সপ্রেসের তরফ থেকে যোগাযোগ করা হলে ডক্টর শশী কান্ত বলেন, “আমি বিবৃতিটি সম্পর্কে জানি, আমি এতে স্বাক্ষর করেছিস এবং এতে যা বলা হয়েছে, তার সঙ্গে আমি সহমত।” ডক্টর রেড্ডি বলেন, “আমি এই বিবৃতি সম্পর্কে ওয়াকিফহাল। এই বিবৃতি আমাদের মধ্যে ছড়ানো হয়েছিল, এবং যখনই কোনও প্রশ্ন উঠেছে, আমরা তা স্পষ্ট করে নিয়েছি।” এই বিবৃতিতে সই করেছেন হেলথ সার্ভিসের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল ডক্টর অনিল কুমার, এইমসের কমিউনিটি মেডিসিনের অধ্যাপক ডক্টর পুনীত মিশ্র, এবং এইমসের সেন্টার ফর কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের সহ অধ্যাপক ডক্টর কপিল যাদব।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, "পরিযায়ী পরিস্থিতির মোকাবিলায় যা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সংক্রমণ ছড়ানো প্রতিরোধের ক্ষেত্রে তাও চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে।"
বিবৃতিতে জনস্বাস্থ্য, রোগ প্রতিরোধ বিশেষজ্ঞ, সমাজবিজ্ঞানীদের নিয়ে কেন্দ্রীয়, রাজ্য ও জেলা স্তরে প্যানেল তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যার মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য ও মানবিক সংকট উভয় ধরনের সমস্যাকেই মোকাবিলা করা যাবে।