প্রতিবেদক- কাউনাইন শেরিফ এম
১০ জানুয়ারি থেকে দেশবাসীদের একাংশকে দেওয়া হবে করোনার 'সতর্কতামূলক' ডোজ। স্বাস্থ্যকর্মী ও একেবারের সামনের সারির কোভিড যোদ্ধারা এই ডোজ পাবেন বলে শনিবারই জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এই ডোজ কীভাবে দেওয়া হবে? আগামী কয়েকদিনে এর নীলনকশা প্রকাশ করতে পারে স্বাস্থ্যমন্ত্রক। কেমন হবে এই ডোজ? দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে স্বাস্থ্যমন্ত্রকের এক আধিকারিক জানিয়েছিলেন যে, দু'টির পর করোনার পরবর্তী ডোজটিও আরেকটি টিকাই হবে। যদিও এর চরিত্র আগের দু'টি ডোজের তুলনায় ভিন্ন। তাই বুস্টার ডোজের তকমা না দিয়ে ওই ডোজকে 'সতর্কতামূলক' শট বলে প্রচার করা হচ্ছে। নিছক তৃতীয় ডোজ না হয়ে পরবর্তী ডোজটি হতে পারে একেবারে নতুন একটি ভ্যাকসিন ডোজ।
শনিবার পর্যন্ত ৬০ বছরের বেশি বয়সী ১২.০৪ কোটি দেশবাসী কোভিডের প্রথম টিকা পেয়েছেন। এই বয়সীদের সম্পূর্ণ টিকাকরণ হয়েছে বা দু'টি ডোজই পেয়েছেন ৯.২১ কোটি। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, স্বাস্থ্যকর্মীদের ১.০৩ কোটি জন কোভিডের প্রথম টিকা পেয়েছেন। সম্পূর্ণ টিকাকরণ হয়েছে ৯৬ লক্ষের। এছাড়া সামনের সারির কোভিড যোদ্ধাদের মধ্যে ১.৮৩ কোটি প্রথম ডোজ ও ১.৬৮ দু'টি ডোজই সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ এখনও পর্যন্ত ১১ কোটির উপর টিকাপ্রাপ্ত 'সতর্কতামূলক' ডোজ নেওয়ার যোগ্য।
সূত্রের খবর, একই ডোজ তিনবার দেওয়ার কোনও কারণ নেই। একই ডোজ তিনবার দিলে তাতে ভাইরাস পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় হবে না। ফলে প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে যাঁরা কোভ্যাক্সিন বা কোভিশিল্ডের দু'টি ডোজ পেয়েছেন তাঁদের একই টিকার তৃতীয় ডোজ দেওয়া হবে না।
সূত্র জানাচ্ছে যে, 'সতর্কতামূলক' ডোজটি পৃথক ক্ষেত্রের হবে। যার পুরোটা জানা যাবে আগামী মাসে। তৃতীয় ডোজের ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে, হায়দরাবাদের ফার্মা কোম্পানি বায়োলজিক্যাল ই -র করোনা টিকা Corbevax। এটি একটি RBD প্রোটিন সাব ইউনিট ভ্যাকসিন। সংক্রমণের প্রতিরোধমূলক ক্ষমতা বাড়াতে এই ভ্যাকসিন শুধুমাত্র ভাইরাসের অ্যান্টিজেনিক অংশগুলি ধারণ করে। ৩০ কোটি Corbevax ডোজ সংরক্ষণের জন্য কেন্দ্র ইতিমধ্যেই বায়োলজিক্যাল ই-কে ১৫০০ কোটি টাকার অগ্রিম অর্থ দিয়েছে। সূত্র জানিয়েছে যে, Corbevax আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
Corbevax পরেই 'সতর্কতামূলক' ডোজের তালিকায় রয়েছে সেরাম ইন্সটিটিউটের কোভোভ্যাক্স। এটি রিকম্বিন্যান্ট ন্যানো পার্টিকেল প্রোটিন-ভিত্তিক কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক নোভাভ্যাক্স এবং এসআইআই ইতিমধ্যে ফিলিপিন্সে এই ভ্যাকসিন জরুরিভিত্তিতে ব্যবহারের অনুমোদন পেয়েছে।
'সতর্কতামূলক' ডোজের তৃতীয় ভ্যাকসিনটি হতে পারে ভারত বায়োটেকের ইন্ট্রানাসাল ভ্যাকসিন। বিশেষজ্ঞরা দাবি করেছেন সূচের মাধ্যমে শরীরে প্রতিষেধক প্রবেশ করানোর থেকে বেশি কার্যকরী নাকে স্প্রে। কারণ এতে প্রতিষেধক সরাসরি ফুসফুস, নাক, গলা-সহ শ্বাসনালীতে পৌঁছবে। যা করোনা থেকে বাড়তি সুরক্ষা দেবে বলেই দাবি। সূত্রের খবর, জানুয়ারির দ্বিতীয় পর্যায় থেকে এই ভ্যাকসিন বাজারে আসবে।
তৃতীয় ডোজের ক্ষেত্রে তালিকায় চতুর্থ স্থানে রয়েছে পুণের জেনোভা বায়োফার্মাসিউটিক্যালসের তৈরি ভারতের প্রথম এম-আরএনএ কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন।
এর আগে, সরকার বলেছিল যে জেনোভা ছ'কোটি এম-আরএনএ ভ্যাকসিন ডোজ তৈরি করবে বলে আশা করা হচ্ছে। আরও গুরুত্বপূর্ণ হল যে, Pfizer এবং Moderna-এর m-RNA ভ্যাকসিনের তুলনায় জেনোভার m-RNA ভ্যাকসিন ভারতের ইমিউনাইজেশন ড্রাইভের কোল্ড স্টোরেজে (2-8 ডিগ্রি সেলসিয়াস) সংরক্ষণ করা যেতে পারে।
বিশ্বজুড়ে বিশেষজ্ঞরা বুস্টার ডোজ হিসেবে m-RNA ভ্যাকসিনের সুপারিশ করছেন। সেপ্টেম্বরে, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের বিভিন্ন সংমিশ্রণ থেকে বুস্টার ডোজের নথি পর্যালোচনার পর, ব্রিটেনের বিশেষজ্ঞরা প্রথমে ফাইজারের m-RNA ভ্যাকসিনকে বুস্টার ডোজ হিসাবে ব্যবহারের পরামর্শ দেন।
Read in English