গোয়াতে পর্যটন কেন্দ্রে কাজ করতেন মনোজ কুমার। দৈনিক আয় ছিল ৬০০ টাকা। কিন্তু লকডাউনে শেষ সব সঞ্চয়। গত মাসেই বিয়ে করেছিলেন। লকডাউনে সব বন্ধ হওয়ায় ঋণ নিয়ে চালাতে হচ্ছে জীবন। মনোজ বলেন, "খাওয়া কমিয়ে দিয়েছি। এক কাপড়েই চলার চেষ্টা করছি। কবে স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাব জানি না। চিন্তায় শেষ হয়ে যাচ্ছি।"
দেশে সম্পূর্ণ লকডাউন জারি না হলেও একাধিক রাজ্যে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউন করেছে। এর ফলে ফের অন্ধকার নেমেছে অসংখ্য পরিযায়ী শ্রমিকদের জীবনে। এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে বাড়ছে দারিদ্য। মনোজ কুমারদের মতো শ্রমিকদের সংখ্যাই বেশি। ফলে ফের মন্দার মুখে পড়তে চলেছে অর্থনীতি।
চলতি বছরের মার্চ মাসে সরকার দেশীয় পণ্যে ৮ শতাংশ সংকোচন দেখেছিল। ১৯৫২ সালের পর যা এই প্রথম। যদিও মনে করা হচ্ছিল যে বেকারত্ব কমতে পারে, সঞ্চয়ও বৃদ্ধি পেতে পারে। কিন্তু কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের দাপটে সব তছনছ। S&P Global Ratings জানাচ্ছে ১১% বৃদ্ধি থেকে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধি হতে পারে ৯.৮%।
আরও পড়ুন, দেশে টানা ৪ দিন ৪ লক্ষের বেশি সংক্রমিত, দৈনিক মৃত্যু ফের ৪ হাজারের বেশি
২০২০ সালেই চরম ক্ষতির মুখ দেখেছিল দেশ। জিডিপি নেমেছিল তলানিতে। যদিও করোনা ক্ষত সাড়িয়ে ক্রমশ স্বাভাবিক হতে শুরু করেছিল দেশ। কিন্তু গত এক মাসে পরিস্থিতি ফের অবনতির পথেই ফিরছে। অর্থনীতিবিদদের মতে কোভিড -১৯ প্রাদুর্ভাব ভারতের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে বাধা সৃষ্টি করবে।
মনোজ কুমারের মতো টিকাদার শ্রমিকরা চুক্তি ছাড়াই কাজ করে দিনমজুরির ভিত্তিতে। রাজনীতিক কিংবা সরকার এদের জীবনের ভার কারুর দায়িত্বে পরে না। প্রতিদিনের ব্যয় মেটানোর পরে, তাদের স্বাস্থ্যসেবা এবং ওষুধের জন্য খুব সামান্য পরিমাণ সাহায্য পেয়ে থাকে তাঁরা। ভারতে এই শ্রেণির সংখ্যা অনেকটাই।
তাই পরিবারের সঞ্চয় হ্রাস হওয়ার অর্থ দারিদ্র্যর পথে একধাপ এগিয়ে যাওয়া। মতিলাল ওসওয়াল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের অর্থনীতিবিদ নিখিল গুপ্তের সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ডিসেম্বরের মধ্যে এই প্রান্তিকে জিডিপি-র ২২.১% নেমেছে ভারতের প্রতিটি বাড়ির সঞ্চয়। পরিসংখ্যানে বেকারত্বও বেড়েছে। আগামী দিনে করোনা অনেক প্রাণ হয়তো কাড়বে, কিন্তু এর চেয়েও ভয়ের পেটে খিদের টান।