COWIN অ্যাপ থেকে ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের মারাত্মক অভিযোগ সামনে আসতেই উত্তাল দেশ। প্রশ্নের মুখে সাইবার নিরাপত্তা। একাধিক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে করোনা টিকা নেওয়ার জন্য যারা কো-উইন অ্যাপে নাম নথিভুক্ত করিয়েছিল, তাদের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হয়ে গিয়েছে টেলিগ্রামে।
কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রক যদিও দাবি করেছে, টেলিগ্রামে যে তথ্য ফাঁস হয়েছে তা অনেক পুরনো। সেই সঙ্গে মন্ত্রকের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, তবে এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত চালানো হচ্ছে। সেই সঙ্গে টেলিগ্রামের থেকেও এ সংক্রান্ত রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রক। ২০২১ সালেও কো-উইন হ্যাক করা হয়েছে বলে এক অভিযোগ ঘিরে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। দেশে কোভিড টিকাকরণের জন্য কো-উইন অ্যাপে নাম নথিভুক্ত করা ছিল বাধ্যতামূলক। এবার সেই অ্যাপ থেকেই ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের মত ভয়ঙ্কর অভিযোগ। তবে সরকারের তরফে দাবি করা হয়েছিল, কো-উইন থেকে কোনও ব্যক্তির তথ্য ফাঁস হয়নি।
এদিকে ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস সংক্রান্ত বিষয়ে তদন্তে, কম্পিউটার ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম (CERT-In) - নোডাল সাইবার সিকিউরিটি এজেন্সি - অন্তত ১১ টি রাজ্য সরকারের সঙ্গে ইতিমধ্যেই আলোচনা করছে, যে সকল রাজ্যগুলি কোভিড ১৯ এর সময় তাদের নিজস্ব ডেটাবেস তৈরি করেছিল। সংস্থাটি এই রাজ্যগুলির ডেটাবেস থেকে সম্ভাব্য কোন ফাঁস হতে পারে তা খতিয়ে দেখছে। কর্ণাটক এবং কেরালা ১১টি রাজ্যের মধ্যে রয়েছে বলে জানা গেছে, বাকি রাজ্যগুলির বিষয়ে এখনও কোনও তথ্য সামনে আসেনি।
এবিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের এক সিনিয়ার আধিকারিক জানিয়েছেন, “কিছু রাজ্য মহামারী চলাকালীন তাদের সম্পূর্ণ ডাটাবেস তৈরি করেছিল কন্টেনমেন্ট জোন এবং বাসিন্দাদের টিকা দেওয়ার মতো বিষয়গুলি ট্র্যাক করতে। রাজ্যগুলির কিছু স্বাস্থ্যকর্মীদেরও সেই ডেটাতে অ্যাক্সেস থাকতে পারে, যা কিছু ক্ষেত্রে স্থানীয় ডিভাইসে সংরক্ষণ করা হয়েছিল।
CERT-In এই ডাটাবেসগুলি খতিয়ে দেখার কাজ করছে। স্থানীয় ডিভাইসে সংরক্ষিত তথ্য সুরক্ষিত রয়েছে কিনা সেই বিষয়ে সংস্থা তদন্ত চালাচ্ছে। প্রাথমিক আলোচনার সময়, কর্ণাটক এবং কেরালা ইঙ্গিত দিয়েছে যে তারা মহামারী চলাকালীন কন্টেনমেন্ট জোনগুলি নিরীক্ষণের জন্য তাদের নিজ নিজ ডাটাবেস তৈরি করেছিল। CERT-In মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম টেলিগ্রামের সঙ্গেও এই বিষয়ে যোগাযোগ করেছে। যদি ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হয়ে থাকে তাহলে এর পিছনে থাকা ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য। কিন্তু মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম এজেন্সিকে বলেছে, পরিষেবাটি অ্যাক্সেস করার জন্য একটি ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (VPN) ব্যবহার করছিল, যার কারণে তাদের পরিচয় বা অবস্থান নির্ণয় করা কঠিন।
এই সপ্তাহের শুরুতে, CoWIN অ্যাপ থেকে ব্যক্তিগত ডেটা ফাঁস নিয়ে রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে স্বাস্থ্য মন্ত্রক CERT-In কে তদন্তের দায়িত্ব দেয়। এই বিষয়ে একটি রিপোর্ট পেশের কথাও বলে কেন্দ্র। CERT-In আগামী সপ্তাহে মন্ত্রণকের কাছে তার রিপোর্ট তুলে ধরবে। যদিও স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানায় যে CoWIN সিস্টেমে ব্যক্তিগত তথ্য পর্যাপ্ত সুরক্ষার সঙ্গে রয়েছে এবং তা সম্পূর্ণরূপে নিরাপদ" সেই সঙ্গে রিপোর্টটিকে ভুল বলেও দাবি করে কেন্দ্র। রাজীব চন্দ্রশেখর, ইলেকট্রনিক্স এবং আইটি প্রতিমন্ত্রী দাবি করেন, CERT-In রিপোর্টের ভিত্তিতে তদন্ত চালাচ্ছে। তবে ডেটা লিকের যে বিষয়টি সামনে এসেছে সেটি কোনভাবেই COWIN অ্যাপের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়"। এদিকে, টিএমসি সাংসদ ডেরেক ও'ব্রায়েন কলকাতার সাইবার ক্রাইম ব্রাঞ্চে অভিযোগ দায়ের করেছেন, পাশাপাশি এই বিষয়টির তদন্ত দাবি করেছেন।