‘খালিস্তানপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপ প্রচার থেকে প্রাইভেট আর্মি’, ইতিমধ্যেই সামনে এসেছে অমৃতপালের ভয়ঙ্কর কাণ্ডকারখানা। অমৃতপাল সিংকে ধরতে গত শুক্রবার থেকেই তল্লাশি জারি রেখেছে পাঞ্জাব পুলিশ। শনিবার তার মার্সিডিজ গাড়ি ফেলে পালিয়ে যায় অমৃতপাল। পাঞ্জাব পুলিশ তাকে কয়েক কিলোমিটার ধাওয়া করলেও পাঞ্জাব পুলিশের নজর এড়িয়ে উধাও হয়ে যায় এই খালিস্তানি নেতা। এর মাঝেই অমৃতপাল ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের কাছ থেকে ৪০ কোটির টাকার বেশি সন্দেহজনক লেনদেনের সন্ধান পেয়েছে পাঞ্জাব পুলিশ।
পুলিশ সূত্রের খবর, ওয়ারিস পাঞ্জাব দে-এর অন্তত পাঁচ সদস্যের একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ২০১৬ সাল থেকে সাত বছরে ছড়িয়ে ৪০ কোটি টাকারও বেশি সন্দেহজনক লেনদেনের সন্ধান মিলেছে। অমৃতপাল সিং এখনও পলাতক। তদন্তকারী সংস্থার এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক বলেছেন, 'কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে দিল্লি সীমান্তে কৃষক আন্দোলনের সময় প্রাণ হারিয়েছেন এমন কিছু পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার নামে টাকা নেওয়া হয়েছে।' এ ছাড়া অন্য একটি মামলার তদন্তে ধর্মীয় কর্মকাণ্ড প্রচারের নামে টাকা নেওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান। সূত্রের খবর, অমৃতপালের ঘনিষ্ঠ সহযোগী দলজিৎ সিং কালসির কাছ থেকে ৩৫ কোটি টাকারও বেশি উদ্ধার করেছেন তদন্তকারী দলের সদস্যরা। লেনদেন হয়েছে অন্তত ১২টি দেশ থেকে। অমৃতপালের আর্থিক লেনদেনের ওপরও নজর রাখার চেষ্টা করছে তদন্তকারী সংস্থাগুলি।
পাঞ্জাবে গত চারদিন ধরে খালিস্তান সমর্থক অমৃতপাল সিং এবং তার সংগঠন ওয়ারিস পাঞ্জাব দে-এর বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযান চলছে। এদিকে, অমৃতপাল সিং সম্পর্কিত একটি ভিডিও সামনে এসেছে, যাতে তাকে টোল প্লাজা্র কাছেই গাড়ির পিছনের সিটে বসে থাকতে দেখা যায়।
শনিবার (১৮ মার্চ) অমৃতপাল সিংয়ের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে পুলিশ। এরপর পুলিশ তাকে কয়েক কিলোমিটার ধাওয়া করে, যদিও সে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। এরপর মার্সিডিজ গাড়ি রেখে পালিয়ে যান অমৃতপাল সিং। এরপর একটি ব্রেজা গাড়ি ও বাইক ব্যবহার করেন। সিসিটিভি ফুটেজের যে ছবি সামনে এসেছে তাতে অমৃতপালকে গোলাপি পাগড়িতে দেখা যাচ্ছে।পুলিশ জানায়, অমৃতপাল সিংকে পালাতে সাহায্য করেছে এমন চারজনকে আটক করা হয়েছে।
পাঞ্জাবের আইজিপি সুখচাইন সিং বলেছেন, আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। জনগণের সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে। অমৃতপালের ব্রেজা গাড়িটি উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। এর আগে মুখ্যমন্ত্রী মান বলেছিলেন, এই ঘটনায় কাউকে রেহাই দেওয়া হবে না।
মঙ্গলবার পাঞ্জাব সরকার জানিয়েছে, অমৃতপাল সিংয়ের বিরুদ্ধে জাতীয় নিরাপত্তা আইন জারি করা হয়েছে। তাকে খুঁজে বের করতে ব্যাপক অভিযান চালানো হচ্ছে। মঙ্গলবার পাঞ্জাব গোয়েন্দাদের একটি দল অমৃতপাল সিংয়ের বাড়িতে পৌঁছেছেন।
ওয়ারিস পাঞ্জাব দে-এর সঙ্গে যুক্ত প্রায় ১৫৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অমৃতপাল সিংয়ের বিরুদ্ধে চলমান অভিযানের মধ্যে মঙ্গলবার পাঞ্জাব হরিয়ানা হাইকোর্টে এক শুনানি হয়। শুনানিতে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আদালত বলেন, ৮০ হাজার সেনা কী করছে? এখন পর্যন্ত অমৃতপাল সিং পলাতক। এটা পাঞ্জাব পুলিশের গোয়েন্দা ব্যর্থতা।
বর্বোরোচিত তাণ্ডব চোখ কপালে তুলেছিল পাঞ্জাব পুলিশের। গত মাসে, অমৃতপাল সিং তলোয়ার, লাঠি ও বন্দুক নিয়ে সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে অমৃতসরের আজনালা থানায় চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন। পরদিনই আদালতের নির্দেশে অমৃতপাল সিংয়ের সহযোগী লাভপ্রীত সিং ‘তুফান’কে মুক্তি দেওয়া এই সময় অমৃতপালের ‘ঘনিষ্ঠ’ মুক্ত করতে পুলিশের সঙ্গে তার সংঘর্ষও হয়।
এই পুরো বিষয়টি কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলিকে হতবাক করেছে এবং তখন থেকেই ‘ওয়ারিস পাঞ্জাব দে’ সংস্থার প্রধান অমৃতপাল সিং তদন্তকারী সংস্থার র্যাডারে রয়েছেন। অমৃতপাল সিং খোলাখুলিভাবে খালিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদী ধারণাকে সমর্থন করার কথা বলেছেন।
অমৃতপাল সিং অমৃতসর জেলার জল্লুপুর খেদা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ২০১২ সালে কাজের জন্য দুবাই গিয়েছিলেন এবং সেখান থেকে সম্প্রতি ভারতে ফিরে আসেন। এখন তিনি খালিস্তানি সমর্থক দীপ সিধুর সংগঠন ‘ওয়ারিস পাঞ্জাব দে’-এর প্রধান। সম্প্রতিক পথ দুর্ঘটনায় মারা যান দীপ সিধু। কৃষক আন্দোলনের সময় লাল কেল্লার হিংসার ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত ছিলেন তিনি। অমৃতপাল সিং, একজন স্বঘোষিত খালিস্তানি সমর্থক, পৃথক শিখ রাষ্ট্রের দাবি করে আসছে এই সংগঠন এবং একাধিক উস্কানিমূলক বক্তব্যও নাম জড়ায় তার।