ইরানের উপর বড় ধরনের হামলা চালিয়েছে ইজরাইল। ইরানের ইসফাহান শহর বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছে বলেই দাবি মার্কিন সংবাদ মাধ্যমের। ইরান তার আকাশসীমায় সমস্ত বিমান নিষিদ্ধ করেছে।
ইরানের ওপর বড় ধরনের হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। মার্কিন সংবাদ মাধ্যম এমনটাই দাবি করেছে। ইরানের ইসফাহান বিমানবন্দরের কাছে একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গিয়েছে। ১৪ এপ্রিল হামলার বিরুদ্ধে পাল্টা জবাব দিয়েছে ইজরাইলও। এপ্রিলের শুরু থেকেই দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানের দূতাবাসে হামলা চালিয়েছে ইজরাইল। এর পরে, ১৪ এপ্রিল ইরান ইজরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিয়েছে এবং এখন ইজরাইল সেই হামলার জবাব দিতে আসরে নেমেছে।
মার্কিন কর্মকর্তারা দাবি করেছেন যে ইজরায়েল ইরানের একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে। অন্যদিকে ইরান বলছে যে তারা একাধিক ইজরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্রকে ধ্বংস করেছে।
ইরান শুরু থেকেই ইজরায়েলকে হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছে। ইরান ঘোষণা করেছে সেদেশের উপর হামলার ভয়ঙ্কর পরিণতি ভুগতে হবে ইজরায়েলকে। মার্কিন সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে ইজরাইল তিনটি ড্রোন দিয়ে ইসফাহান বিমানবন্দরের কাছেই হামলা চালিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন এটা ইজরাইলের একটা কৌশল। তারা ইরানের প্রতিক্রিয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। ইরান প্রতিশোধ নিলে ইসরাইল ও আমেরিকা আবারও ইরানে হামলার সুযোগ পাবে। মার্কিন সংবাদ মাধ্যমের রিপোর্ট অনুসারে হামলার পর ইরান তার আকাশসীমায় সব ধরনের বিমানের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে। এলাকায় আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
এখন পর্যন্ত ইরানের ৯টি স্থানকে টার্গেট করার খবর পাওয়া গিয়েছে। হামলার পর ইরান তার কর্মকর্তাদের জরুরি বৈঠক ডেকেছে। ইজরায়েলে ইরানের হামলার পর ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, আমরা অবশ্যই এই হামলার জবাব দেব। হামলার এক সপ্তাহ পর ইজরাইল ইরানের উপর হামলার পালটা জবাব দিয়েছে। তবে ইরান এখনও পর্যন্ত কোন হতাহতের খবর প্রকাশ্যে আনেনি।
ইরান ও ইজরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা চরমে। ইরানের ৩০০টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার পর, ইজরায়েলি সেনাবাহিনীও ইরান, সিরিয়া এবং ইরাকে শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিশোধ নিয়েছে। মার্কিন কর্মকর্তারা ইরানের অভ্যন্তরে ইজরায়েলের হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মার্কিন প্রশাসনের সূত্রকে উদ্ধৃত করে সিএনএন জানিয়েছে, ইজরাইল ইরানের অভ্যন্তরে একটি লক্ষ্যবস্তুতে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে। অন্যদিকে ইরান বিবৃতি জারি করে বলেছে, দেশে কোন বিদেশি হামলা হয়নি। ইরান বলেছে যে তারা আকাশে একটি সন্দেহজনক বস্তু দেখে তাদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও সক্রিয় করেছে।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের ইসফাহান শহরের বিমানবন্দরের কাছে ৩টি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গিয়েছে। যেখানে এসব বিস্ফোরণ ঘটেছে তার কাছে ইরানের একটি সেনা ঘাঁটিও রয়েছে। ইসফাহান শহরের কাছে ইরানের যুদ্ধবিমানও মোতায়েন রয়েছে। জানা গিয়েছে বিস্ফোরণের পর সরকারি অফিসের কাঁচও ভেঙে যায়।
ইজরায়েলি কর্মকর্তারা এই হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এদিকে ইজরায়েলের হামলার আশঙ্কায় সিরিয়া থেকে ইরান তাদের সামরিক কমান্ডার ও হিজবুল্লাহ কমান্ডারদের সরিয়ে নিয়েছে বলে খবর পাওয়া গিয়েছে। ইসরায়েলের হামলার আশঙ্কায় ইরান তাদের বিমানবাহিনীকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে।
ইজরায়েলে শনিবারের হামলার পরপরই, ভারত "গুরুতর উদ্বেগ" প্রকাশ করে একটি বিবৃতি জারি করে এবং "অবিলম্বে উত্তেজনা কমানোর" আহ্বান জানায় । এমইএ অনুসারে ১৮ হাজারের বেশি ভারতীয় ইজরায়েলে কর্মরত। পাশাপাশি ইরানে বিদেশী জনসংখ্যার একটা বড় অংশ ভারতীয়। এই সংখ্যাটা প্রায় ৪হাজারের বেশি। ইজরায়েলি পাল্টা হামলার ক্ষেত্রে তাদের নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। পাশাপাশি ইরান ও ইজরায়েল উভয়ের সঙ্গেই নয়াদিল্লির কৌশলগত সম্পর্ক রয়েছে। উভয় দেশের সংকটে ভারত কূটনৈতিক কারণে কোন একটি পক্ষকে বেছে নিতে পারবে না।
পশ্চিম এশিয়ায় ব্যাপক সংঘাত ভারতের জন্য একেবারেই ভাল খবর নয়। ভারত তার অপরিশোধিত তেলের ৮০ শতাংশ এই অঞ্চল থেকে আমদানি করে। দুদেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির কারণে তেল সরবরাহ প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং পাশাপাশি বাড়তে পারে অপরিশোধিত তেলের দামও।