দিল্লি হিংসায় এক সম্প্রদায়ের পক্ষ অবলম্বন এবং আরএসএস ও পুলিশের বিরুদ্ধে লাগাতার সমালোচনার দায়ে দু'টি বৈদ্যুতিন সংবাদ মাধ্যমকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করল কেন্দ্র। মালায়ালাম বৈদ্যুতিন সংবাদ মাধ্যম এশিয়ানেট নিউজ ও মিডিয়া ওয়ান নিউজকে শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে ৪৮ ঘন্টার জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক। তবে, এই ঘোষণার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ফের দেখা যাচ্ছে এশিয়ানেট নিউজ। প্রসঙ্গত, এই সংবাদ মাধ্যমটি পরোক্ষে পরিচালনা করেন বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ রাজীব চন্দ্র শেখর।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে যে, এই দুই বৈদ্যুতিন সংবাদ মাধ্যমেই দিল্লি হিংসার খবর পরিবেশনার সময় উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এক সম্প্রদায়ের পক্ষ অবলম্বন করেছে। এছাড়াও বারংবার হিংসার জন্য দায় চাপানো হয়েছে দিল্লি পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা ও আরএসএসের উপর। মিডিয়া ওয়ান নিউজের বিরুদ্ধে মন্ত্রকের নির্দেশে বলা হয়েছে, 'হিংসার জন্য আরএসএসের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, নিষ্ক্রিয়তার দায়ে কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে দিল্লি পুলিশকে। পাশাপাশি সিএএ সমর্থনকারীদের ভাঙচুরের ভিডিও উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে দেখানো হয়েছে। তাই এই টিভি চ্যানেলটিকে ৪৮ ঘন্টার জন্য নিষিদ্ধ করা হল।'
এশিয়ানেট নিউজ ও মিডিয়া ওয়ান নিউজ চ্যানেল ১৯৯৫ সালের কেবল টিভি আইনের নিয়ম লংঘন করেছে বলে নির্দেশে জানিয়েছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রক দু'টি চ্যানেলকেই কারণ দর্শানোর নোটিস জারি করে। ৩রা মার্চের মধ্যে চ্যানেল কর্তৃপক্ষের জবাব পর্যালোচনা করা হয়। তারপরই 'নিষিদ্ধ' ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুন: অ্যাসিডে পুড়েছে স্বামী-সন্তানের দেহ, ভয়ঙ্কর স্মৃতির ‘ধ্বংসাবশেষে’ শোকাতুর দিল্লি
এই নির্দেশের পরই তুমুল বিতর্ক শুরু হয়। প্রশ্ন ওঠে মোদী সরকার কী সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ করছে? কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর বলেন, 'মোদী সরকার সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতাকে সমর্থন করে।' মিডিয়া ওয়ানের সম্পাদক সি এল থমাস কেন্দ্রীয় সরকারের এই পদক্ষেপকে 'সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতায় বৃহৎ আক্রমণ' বলে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, 'ভারতের ইতিহাসে এই ধরনের ঘটনা ঘটেনি। জরুরি অবস্থায় সংবাদ মাধ্যমের উপর কিছু বিধিনিষেধ ছিল। কিন্তু, বর্তমানে দেশে জরুরি অবস্থা চলছে না। দেশের অ্যন্যান্য সংবাদ মাধ্যম যাতে সরকারের সমালোচনা না করে সেই সতর্কবার্তাই এই দুই চ্যানেল নিষিদ্ধ করে তুলে ধরা হল।'
মিডিয়া ওয়ান চ্যানেলটি 'মধ্যমাম ব্রডকাস্টিং লিমিটেড'র মালিকানাধীন, যা জামাত-ই-ইসলামি সমর্থিত। অন্যদিকে, এশিয়ানেট নিউজ পরোক্ষে পরিচালনা করেন রাজীব চন্দ্রশেখর। রাজীব রাজ্যসভার বিজেপি সাংসদ। প্রসঙ্গত, শুক্রবার সন্ধ্যায় নিষিদ্ধ ঘোষণা হলেও শনিবার সকাল থেকেই ফের দেখা যাচ্ছে এশিয়ানেট নিউজ চ্যানেলটি। কেন্দ্রীয় পদক্ষেপ প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি রাজীব চন্দ্রশেখর। তবে, এশিয়ানেটের সম্পাদক এম জি রাধাকৃষ্ণণ বলেন, 'কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে এখনই আমরা কিছু মন্তব্য করব না। সার্বিক আলোচনার পর সিদ্ধান্ত জানাব।'
এই প্রথম নয়। ২০১৬ সালে পুলওয়ামা জঙ্গি হামলার গোপনীয় তথ্য় প্রকাশ্যে আনায় মোদী সরকার এনডিটিভি-কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। তবে, কেন্দ্রীয় পদক্ষেপের বিরুদ্ধে চ্যানেল কর্তৃপক্ষ সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানান। আদালত কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের উপর স্থগিতাদেশ জারি করে।
Read the full story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন