দুই দলিত কিশোরী ও এক মুসলিম কিশোরের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় রাজস্থানে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। বারমের জেলার স্বরূপ কা তালা গ্রামে গত শুক্রবার একটি খেজুর গাছে ৩ জনের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। কী কারণে এমন ঘটনা ঘটল, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধন্দ। ত্রিকোণ প্রেমের জেরেই কি দুই কিশোরী ও এক কিশোর আত্মঘাতী হয়েছে, নাকি ঘটনার পেছনে অন্য কোনও কারণ রয়েছে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে দুই দলিত কিশোরীকে বাড়ি থেকে অপহরণ করে ধর্ষণ ও খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন মৃত এক কিশোরীর বাবা।
তিনি জানিয়েছেন, অন্য এক আত্মীয়ের মেয়ের সঙ্গে বৃহস্পতিবার রাতে তাঁদের বাড়িতে ঘুমোচ্ছিল তাঁর মেয়ে। মাঝরাতে দেখেন, ওই দুই কিশোরী নিখোঁজ। পরের দিন সকালে গ্রামের খেজুর গাছে তাদের ঝুলন্ত দেহ দেখতে পাওয়া যায়। দুই কিশোরীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে প্রথমে ধর্ষণ ও পরে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওই কিশোরীর বাবার। তবে এই অভিযোগ নিয়েও তৈরি হয়েছে ধন্দ। দুই কিশোরীর পাশেই পরিবারের বাকি সদস্যরা ঘুমোনো সত্ত্বেও, কীভাবে তাঁদের নজর এড়িয়ে দুই কিশোরীকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হল, সে ব্যাপারে অবশ্য কোনও সদুত্তর মেলেনি।
দুই দলিত কিশোরীরর সঙ্গে এক মুসলিম কিশোরেরও মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। গোটা ঘটনার পিছনে ওই কিশোরের হাত থাকতে পারে মনে করছে কিশোরীর পরিবার। ওই কিশোর প্রায়শই তাঁর বাড়ির পাশে ঘোরাফেরা করত বলে এক বছর আগে গ্রামের পঞ্চায়েত বৈঠকে ওই কিশোরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন বলে জানিয়েছেন ওই কিশোরীর বাবা। ওই কিশোরের স্বভাবচরিত্র ভাল নয় বলেও দাবি করেন তিনি। গ্রামে প্রায়ই ওই কিশোর ও তার সাঙ্গোপাঙ্গোরা গোলমাল পাকাতো বলে তাঁর অভিযোগ।
আরও পড়ুন,মেয়ের কবরটা ওরা পুড়িয়ে দেবে কি না, সংশয়ে কাঠুয়া কন্যার মা
তবে ত্রিকোণ প্রেমের জেরেই দুই দলিত কিশোরী ও এক মুসলিম কিশোরের এহেন পরিণতি বলে মনে করছে গ্রামবাসীদের একাংশ। দুই কিশোরী ও ওই কিশোরের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্কের কথা স্বীকার করেছেন গ্রামবাসীদের অনেকে। দুই কিশোরীর সঙ্গে ওই কিশোরের মেলামেশাতে কিশোরীর পরিবারের থেকে আপত্তি ছিল বলে দাবি করেছেন হামির খান নামে এক গ্রামবাসী। গ্রামবাসীদের সুরেই কার্যত সুর মিলিয়েছেন কিশোরের পরিজনরাও। সুমের খান নামে কিশোরের এক আত্মীয় বলেন, ‘‘আদপে কী হয়েছে তা জানি না। তবে ওই দুজনের সঙ্গে ওর ভাল সম্পর্ক ছিল। ’’নিশ্চয়ই সম্পর্কের জন্যই ও এই পদক্ষেপ করতে বাধ্য হয়েছে।’’
এদিকে কারণ সম্পর্কে কিছু বলতে না পারলেও ছেলে যে আত্মহত্যাই করেছে, সে ব্যাপারে একপ্রকার নিশ্চিত কিশোরের বাবা।
অন্যদিকে গ্রামের যে খেজুর গাছ থেকে তিনজনের ঝুলন্ত দেহ মিলেছে, সেখানে ৪ জনের পায়ের ছাপ মিলেছে বলে দাবি করেছেন কয়েকজন গ্রামবাসী। তাহলে কি চতুর্থ কেউ ঘটনার সময়ে হাজির ছিল? এ ব্যাপারে আঙুল উঠেছে কিশোরের এক বন্ধুর দিকে। যদিও সেই বন্ধুর ভাই এ সন্দেহ উড়িয়ে দিয়েছে।
তবে পুলিশের দাবি, কোনও চতুর্থ ব্যক্তির পায়ের ছাপ ঘটনাস্থল থেকে মেলেনি। তাদের বক্তব্য, ‘‘তদন্ত চলাকালীন গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন ওই দুই কিশোরীর সঙ্গে কিশোরের সম্পর্ক ছিল। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট সহ অন্যান্য পুলিশ রিপোর্ট থেকে মনে হচ্ছে এটি আত্মহত্যারই ঘটনা।’’
এ ঘটনায় অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করা হয়েছে। ঘটনার জেরে এলাকায় দলিত ও মুসলিমদের মধ্যে অবিশ্বাসের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে।