শিলিগুড়ি, ২৮ জুন: গত বছর মোর্চার জঙ্গি আন্দোলনের আগুনের আঁচ প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী সোনাদা ও গয়াবাড়ি স্টেশনের। যেখানে ট্রেনের আওয়াজ শুনলেই অহংকারে বুক ফুলত এলাকাবাসীর। তাঁরা ছিলেন সারা পৃথিবীর নজরবন্দি। ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের প্রতিবেশী। তাঁদের সে দিন নেই। এখন সে সবই কেবল স্মৃতি। এখন, পোড়োবাড়ির টিনের শব্দ ঘুম ভাঙায় পাহাড়বাসীর।
কুঝিকঝিক শব্দ,বাঁশির আওয়াজ সবটাই এখন অতীত। শ্মশানের নিস্তব্ধতা। ২০১৭ সালের জুলাইয়ের বিভীষিকা বয়ে নিয়ে চলেছে দার্জিলিং পাহাড়ের ঐতিহ্যবাহী এই দুটি স্টেশন।
আন্দোলনের আগুনে আক্ষরিক অর্থেই পুড়ে গেছে স্টেশন (ফোটো- ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা)
গত বছর ৮জুন গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পাহাড়। ৮ জুলাই ও ১৩ জুলাই পরপর সোনাদা ও গয়াবাড়ি স্টেশনে অগ্নিসংযোগ করা হয়। পুড়ে ছাই হয়ে যায় প্রায় ১৩৭ বছরের পুরোনো টিনের বাড়ি। এরপর থেকে বেহাল অবস্থায় পড়ে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী দুই স্টেশন। আর এই পোড়া, ভাঙা স্টেশনের ছবি তুলে নিয়ে যাচ্ছেন বিদেশি পর্যটকেরা। এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে ব্যাপক ক্ষোভ জন্মেছে স্থানীয়দের মধ্যে। সোনাদার বাসিন্দা রেখা সুব্বা বলেন, ‘ঐতিহ্যবাহী স্টেশন গুলি এভাবে পড়ে রয়েছে। এতে পর্যটকদের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে।'
পড়ে আছে ভাঙাচোরা স্টেশনঘর (ফোটো- ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা)
বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সোসাইটির সদস্যরা। ডিএইচআর ইন্ডিয়া সাপোর্ট গ্রুপের সেক্রেটারি জেনারেল রাজ বসু বলেন, 'সোনাদা ও গয়াবাড়ি স্টেশন বিশ্ব ঐতিহ্য। শীঘ্রই স্টেশন গুলির পুরোনো ঐতিহ্য ফেরানো দরকার।' উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলের জেনারেল ম্যানেজার সঞ্জীব রায় বলেন,'ইউনেসকোর প্রতিনিধিরা পাহাড়ে সমীক্ষা করছে। জুলাইয়ের শেষে তারা রিপোর্ট দিলেই কাজ শুরু হবে'।
১৮৮১ সালে গঠিত হয় দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে ( ডিএইচআর)। ১৯৯৯ সালে ইউনেসকো ডিএইচআরকে হেরিটেজ তকমা দেয়।
তবে দার্জিলিং থেকে কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরে অক্সফোর্ডশায়ারে ঐতিহ্যবাহী গয়াবাড়ি স্টেশনের অস্তিত্ব বজায় রেখেছেন ব্রিটিশ বংশোদ্ভুত রেলকর্মী আদ্রিয়ান শুটার। দুটি বগি নিয়ে স্টিম ইঞ্জিন ছুটে বেড়ায় আদ্রিয়ানের বাগানে। তাঁর এই ব্যক্তিগত রেলওয়ের নাম 'বিচেস লাইট রেলওয়ে'।