রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিপ্তে জি-২০ তালিকাভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বিভাজন স্পষ্ট হতে শুরু হয়েছে। গত বছর বালিতে অনুষ্ঠিত জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে পশ্চিমী দেশগুলির বিদেশমন্ত্রীরা খোলাখুলি রাশিয়ার সমালোচনা করেন। রাশিয়ার প্রতি পশ্চিমী দেশগুলির মনোভাব এখনও বিশেষ পাল্টায় নি। দিল্লিতে বিদেশমন্ত্রীদের নিয়ে আয়োজিত সম্মেলনে এই মত বিরোধের ছবি আরও স্পষ্ট হয়েছে। ভারতে আয়োজিত জি-২০ বিদেশমন্ত্রীদের বৈঠকে আমেরিকা ও রাশিয়া-চিন সহ পশ্চিমী বিশ্বের দেশগুলির মধ্যে বিভাজন দেখা দিয়েছে।
ভারত এই বৈঠকে সম্প্রীতি বজায় রাখার চেষ্টা করেছে। রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধের পর এক বছরেরও বেশি সময় হয়ে গেছে। এদিকে দুই দেশের মধ্যে কেউই কোন ধরনের চুক্তি করতে প্রস্তুত নয়। এরপর এতদিন পর্যন্ত পশ্চিমের যে দেশগুলো এখন পর্যন্ত ‘নিরপেক্ষ’ অবস্থানে ছিল যেমন জাপান, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স এখন তারাও প্রকাশ্যে ইউক্রেনের সমর্থনে পাশে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে চিন রাশিয়াকে সমর্থন করছে। এভাবে জি-২০ তালিকাভুক্ত দেশগুলি মেরুতে বিভক্ত হয়ে যেতে শুরু করেছে। তবে ভারতসহ বাকি দেশগুলো এখনও রাশিয়া-ইউক্রেনে শান্তি ফিরিয়ে আনতে মরিয়া।
রাশিয়া অভিযোগ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সব দেশকে সস্তা জ্বালানি উৎস ছেড়ে দিতে বাধ্য করছে। অন্যদিকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে বিশ্বে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টির অভিযোগ তুলেছে আমেরিকা। জলবায়ু পরিবর্তন, এবং সামাজিক নিরাপত্তা সমস্যা, বৈষম্য, কৃষি, পর্যটন, দুর্নীতি, সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন, মাদক পাচার, খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি, বিঘ্নিত প্রযুক্তির মতো সমস্যা মোকাবেলায় দেশগুলো একসঙ্গে কাজ করবে এই লক্ষ্যে G-20 গঠিত হয়েছিল। তবে গত এক বছর ধরে ‘রাশিয়া-ইউক্রেন’ যুদ্ধ পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে দিয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে সামিটেও।
ভারত এই বছর G20 গ্রুপের সভাপতিত্ব করছে। সে কারণেই গোটা বিশ্বের নজর ভারতের অবস্থানের দিকে। রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে চলমান উত্তেজনা কীভাবে দূর করা যায়। সেদিকেই লক্ষ্য সব দেশেরই। তবে ভারত শুরু থেকেই দুই দেশের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চালিয়েছে। যুদ্ধ থামানোর চেষ্টা করে আসছে। এখন রাশিয়ার বিরুদ্ধে ‘আমেরিকার প্রকাশ্য বিরোধিতা’ উত্তেজনা বাড়াচ্ছে। পাশাপাশি জি-২০ বিদেশমন্ত্রীদের নিয়ে আলোচনার মাঝেই চিন-ভারত চলমান সীমান্ত সংঘাত নিয়ে দুই দেশের বিদেশমন্ত্রী পর্যায়ের এক বৈঠকও হয়। যদিও সেই বৈঠকে তেমন কোন সমাধান সূত্র সামনে আসেনি।
চিনা বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার প্রসঙ্গে জয়শঙ্কর বলেছেন, “জি২০ ফ্রেমওয়ার্কের বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু বৈঠকের মূল বিষয় ছিল ভারত ও চিনের মধ্যে চলমান সীমান্ত বিরোধ। দুদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের তিক্ততা এবং সীমান্ত সমস্যা নিয়েই চলেছে আলোচনা।” এই বৈঠকে চিনা বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্করকে জানিয়েছেন, দুপক্ষেরই এই সমস্যা গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত এবং সেই মত পদক্ষেপ করা উচিত। যদিও জি২০ মঞ্চে এই নিয়ে আলোচনা করতে ততটা আগ্রহী নয় বলেই জানিয়েছেন চিনা বিদেশমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, “দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে সীমান্ত সমস্যা নিয়ে উপযুক্ত স্থানে আলোচনা করা উচিত।”
অন্যদিকে জি-২০ বিদেশমন্ত্রীদের নিয়ে আয়োজিত সম্মেলনে ভাষণ কালে মোদী বলেন, “‘গ্লোবাল সাউথের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছে ভারত।“আমাদের সকলকে অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে বহুপাক্ষিকতা আজ সংকটের মধ্যে রয়েছে। তিনি আরও বলেছেন, “গত কয়েক বছরে, আর্থিক সংকট, জলবায়ু পরিবর্তন, মহামারী, সন্ত্রাসবাদ এবং যুদ্ধ স্পষ্টভাবে দেখায় যে বিশ্বশাসন ব্যবস্থা তার উদ্দেশ্য পালনে ব্যর্থ হয়েছে। আমাদের এটাও স্বীকার করতে হবে যে এই ব্যর্থতার করুণ পরিণতি সবচেয়ে বেশি ভোগ করছে উন্নয়নশীল দেশগুলি। প্রধানমন্ত্রী মোদী আরও বলেছেন যে এই বৈঠকের উদ্দেশ্য হল ঐক্য, উদ্দেশ্য এবং কর্মের ঐক্যের উপর জোর দেওয়া। তিনি বলেন, লক্ষ্য অর্জনে একত্রিত হওয়ার চেতনাও এই বৈঠকে প্রতিফলিত হবে।
প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, ‘আজ সারা বিশ্বের চোখ G-20- সম্মেলনের দিকে। উন্নয়ন থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক স্থিতিস্থাপকতা, আর্থিক সহায়তা, দুর্নীতি ও সন্ত্রাসবাদ থেকে মুক্তি, খাদ্য ও জ্বালানি সংকটের মতো চ্যালেঞ্জ কমানোর ব্যাপারে বিশ্বের একাধিক দেশ এই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। G-20 অবশ্যই এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় পুরোপুরি সক্ষম, এটা আশা করা যায়।