সরকারি খাতা-কলমে সে ‘মৃত’। ফলে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ বাবদ সেই মৃতের পরিবার পেয়েছে অর্থ। বোন পেয়েছে রেলে চাকরি। ২০১০ থেকে ২০২০ অবধি দিব্য চলছিল। কিন্তু রহস্য দানা বাঁধে পাসপোর্ট নবীকরণে আবেদনকারীর নাম দেখে। চক্ষু কপালে ওঠে রেলকর্তাদের। জানা গিয়েছে, ২০১০ সালে জ্ঞানেশ্বরী দুর্ঘটনায় ‘মৃত’ অমৃতাভ চৌধুরী বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত। রয়েছে গাড়ি, প্যান কার্ড এবং পাসপোর্ট। প্রতি বছর নিয়ম করে আয়কর জমা দেন তিনি।
তাহলে সরডিহার সেই ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনায় কে মৃত? এখানেই রহস্যের জট খুলেছে। সিবিআই তদন্তে জানা গিয়েছে, ডিএনএ রিপোর্ট জাল করে জ্ঞানেশ্বরী-কাণ্ডে নিজেকে মৃত দেখিয়েছেন অমৃতাভ চৌধুরী। এযাবৎকাল নিয়েছেন সকল সুযোগ-সুবিধা। তবে শুধু অমৃতাভ নয়, এই ঘটনায় জড়িত তাঁর বাবা মিহির চৌধুরীও। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের ভিজিলেন্স বিভাগের তরফে সিবিআইয়ের কাছে প্রতারণার মামলা দায়ের করা হয়েছে। সেই অভিযোগ পেয়েই জোড়াবাগানের বাড়ি থেকে বাবা-ছেলেকে আটক করেছে সিবিআই।
গত দু’দিন ধরে নিজাম প্যালেসে চলেছে এই দুই জনের জিজ্ঞাসাবাদ। যদিও সিবিআইয়ের দ্বারস্থ হওয়ার আগে অমৃতাভের অফিসে হানা দিয়েছিল রেলের দল।কিন্তু সেই সময় চোখ এড়িয়ে পালিয়ে যান তিনি। পরে শনিবার উত্তর কলকাতার বাড়ি থেকে এই দুজনকে আটক করে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা।
যদিও, সংবাদমাধ্যমের সামনে অমৃতাভ দাবি করেছেন, ‘তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। পুরোটাই চক্রান্ত। সুদ-সহ রেলের ক্ষতিপুরণের টাকা ফিরিয়ে দেবেন তিনি।‘ কিন্তু এত কিছুর পর প্রশ্ন উঠছে, এমন একটা সংবেদনশীল ঘটনায় ডিএনএ রিপোর্ট জাল হল কীভাবে? সিবিআই সূত্রে খবর, রেলের ভিতরের কেউ যুক্ত না থাকলে এভাবে ১০ বছর ঘাপটি মেরে থাকা যায় না। চিকিৎসক থেকে রেলকর্মী, প্রত্যেকের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হবে। আরও একজোড়া প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে তদন্তকারীদের মনে।
জ্ঞানেশ্বরী দুর্ঘটনা দক্ষিণ-পূর্ব রেলের অধীনে হয়েছিল। তাহলে অভিযুক্তের বোন কীভাবে পূর্ব রেলে চাকরি পেল? ডিএনএ রিপোর্ট ম্যাচ করিয়ে অমৃতাভের দেহ হিসেবে অজ্ঞাতপরিচয় যে দেহ তুলে দেওয়া হয়েছিল পরিবারের হাতে, তাঁর পরিচয় কী? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই বাবা-ছেলেকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন তদন্তকারীরা।