"কাদম্বিনী মরিয়া প্রমাণ করিল, সে মরে নাই...!" কিন্তু গল্পের চরিত্রের মতো বাস্তব জীবনে জীবিত থাকার প্রমাণ দিয়েও বেঁচে থাকতে নাভিশ্বাস উঠছে এক যুবকের। কাগজে কলমে তিনি মৃত। অথচ জীবিত সেই ব্যক্তি গত দুমাস ধরে বিভিন্ন সরকারি দফতরে চক্কর কাটছেন নিজের জীবিত হওয়ার প্রমাণ দেওয়ার জন্য। মধ্যপ্রদেশের চান্দেরি তহসিলের বাসিন্দা ২৪ বছরের ওই যুবকের দুর্ভোগের শেষ নেই। কেউ মুখ তুলে চাইছে না। নিরুপায় হয়ে গ্রাম প্রধানের একটি শংসাপত্র নিয়ে দোরে দোরে ঘুরছেন তিনি।
পেশায় শ্রমিক শিবকুমারের এই কাহিনী অবাক করা হলেও সত্যি। ২০১৮ সালে রাজ্য সরকারের মুখ্যমন্ত্রী জনকল্যাণ সম্বল যোজনায় নিজের নাম নথিভুক্ত করার কথা ভাবেন তিনি। এই প্রকল্পে আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষদের সরকারি সাহায্য প্রদান করা হয়। প্রথমে কোও সমস্যা হয়নি নাম তুলতে। প্রকল্পে নাম তোলার পর তাঁর সন্তান হয়। সেইসঙ্গে ১৮ হাজার টাকা পান সরকারের তরফে। কিন্তু গত মার্চে ব্লক অফিসে নিজের কন্যাসন্তান জন্মের পর গেলে জানতে পারেন, তিনি না কি মৃত!
শিবকুমার বলেছেন, "এক আধিকারিক আমাকে বলেন, সরকারি নথি অনুযায়ী ২০১৯ সালে আমার মৃত্যু হয়েছে। আমি তো চমকে যাই। আমি তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করি, আমিই শিবকুমার। কিন্তু কেউ শোনেনি। এরপর আমাকে উচ্চ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে শংসাপত্র আনতে বলা হয়, তাহলেই সরকারি সাহায্য পাওয়া যাবে বলে জানানো হয়।" এরপর গ্রাম প্রধানের কাছ থেকে একটি চিঠি তিনি জোগাড় করেন। তাতে লেখা, যে তিনি জীবিত। সেই থেকে চিঠি নিয়ে বিভিন্ন সরকারি দফতরে চক্কর কাটছেন তিনি।
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে শিবকুমার বলেছেন, গ্রাম যোজনা সহায়ক সন্তোষ রাও তাঁর কাছে আসেন এবং জানতে চান যদি তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয় তাহলে তার জন্য পাওয়া সরকারি সাহায্য কি তিনি নিতে ইচ্ছুক? "রাও আমাকে বলেন, আমি সরকারের কাছ থেকে ২ লক্ষ টাকা সাহায্য পাব আর তার থেকে অর্ধেক টাকা নিজের জন্য রেখে দিতে পারব। কিন্তু আমি রাজি হইনি", জানিয়েছেন শিবকুমার।
এই প্রসঙ্গে চান্দেরি তহসিলের এসডিএম দেবেন্দ্র সিং জানিয়েছেন, ২০১৯ সালের অক্টোবরে সাহায্যপ্রার্থীদের একটি ফিজিক্যাল ভেরিফিকেশন করা হয়। তখনই ক্লার্কের ভুলে শিবকুমারকে মৃত দেখানো হয়েছে। কিন্তু গ্রাম যোজনা সহায়ক যে প্রস্তাব শিবকুমারকে দিয়েছিলেন সে প্রসঙ্গে আধিকারিক অভিযোগ উড়িয়ে বলেছেন, "ক্লার্ক বা গ্রাম যোজনা সহায়ক এতে যুক্ত নয় বলেই প্রাথমিক ভাবে অনুমান। যদিও এই অভিযোগের তদন্ত হচ্ছে।"