উত্তরাখণ্ড হিমবাহ বিপর্যয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ৩১। রবিবারের বিপর্যয়ের পর থেকে শুরু হয়েছে উদ্ধারকাজ। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সঙ্গে উদ্ধারকাজে হাত লাগিয়েছে ভারতীয় সেনা, আইটিবিপি এবং বায়ু সেনা। মঙ্গলবার ধস সরিয়ে আর ৫ জনের দেহ উদ্ধার হলে এখনও পর্যন্ত ৩১ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। এদিকে, পিটিআই সুত্রে খবর চামোলির তপোবন সুড়ঙ্গে ৩১ জন শ্রমিক আটকে থাকার প্রাথমিক খবর মিলেছে। কিন্তু ধ্বংসস্তুপ যত সরবে, তত বাড়তে পারে আটক শ্রমিকের সংখ্যা।
এদিকে, এই বিপর্যয় প্রসঙ্গে মঙ্গলবার রাজ্যসভায় বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘কেন্দ্র-সহ রাজ্যের সবক’টি সংস্থা বিপর্যয়ের ওপর নজর রেখেছে। সমন্বয় রেখেই উদ্ধারকাজ চলছে। প্রধানমন্ত্রীজি নিজে কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন। উত্তরাখণ্ডকে সব ধরনের সাহায্যের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।‘ এদিন এই বিপর্যয়ে মৃতদের শ্রদ্ধা জানাতে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়েছে রাজ্য সভায়।
এদিন সকালে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তিবেন্দ্র সিং রাওয়াত আকাশপথে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন। তিনি খোঁজ নিয়েছেন উদ্ধারকাজের। কথা বলেন আইটিবিপি, এনডিআরএফ-এর জওয়ানদের সঙ্গে। এখন পর্যন্ত ১৭০ জন নিখোঁজ থাকার খবর মিলেছে। জানা গিয়েছে, প্রায় ২০০০ মিটার লম্বা তপোবন সুড়ঙ্গে আটকদের উদ্ধারে চেষ্টায় তাঁরা। জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটা ব্যারেজ সম্পূর্ণ জলে ধুয়ে গিয়েছে। এমনটাও সুত্রের খবর।
উত্তরাখণ্ডের ধস বিপর্যয়ের কারণ কি হিমবাহ ভেঙে পড়া? নাকি অন্য কোনও কারণ রয়েছে। ঘটনার পর এখনও বিশেষজ্ঞরা তথ্যতালাশ করার আগেই ভিন্ন মত উঠে আসছে। নয়া প্রমাণ অনুযায়ী, হিমবাহ ভেঙে পড়া নয়, কয়েক লক্ষ টন তুষার পর্বতের ঢাল বেয়ে নেমে আসাতেই বিপত্তি ঘটেছে। দুর্ঘটনার পর উপগ্রহ চিত্রে ধরা পড়েছে এই তথ্য। চামোলির রেনি গ্রামের কাছে পাহাড় থেকে প্রচুর পরিমাণে বরফ ঢাল বেয়ে নেমে আসে। যার জেরে ভূমিধস হয়।
দেরাদুনের ওয়াদিয়া ইনস্টিটিউট অফ হিমালয়ান জিওলজির গবেষক সন্তোষ রাই জানিয়েছেন, “প্রাথমিক তদন্তে উপগ্রহ চিত্রে ধরা পড়েছে। এই বন্যার অন্যতম কারণ হিমবাহ ভেঙে পড়া নয়, বরং প্রচুর পরিমাণ বরফ গলে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নিচে পড়ে। আমরা বিজ্ঞানীদের দুটি দল পাঠিয়েছি। তখন আরও নির্ভুল তথ্য পাওয়া যাবে। উপগ্রহ চিত্রে আরও ধরা পড়েছে, ফেব্রুয়ারি ২ তারিখ উপত্যকায় কোনও বরফ ছিল না। কিন্তু ৫-৬ তারিখ প্রচুর তুষারপাত হয়েছে। তারপর ৭ তারিখ নতুন করে তুষারপাত হয়। যার ফলে পাহাড়ের ঢাল বেড়ে বরফ নিচে নামতে শুরু করে। নিচে নামার সময় বরফের গতি বেড়ে যায়, তারপর জল আর মাটির সঙ্গে মিশে ধসের সৃষ্টি করে।”
দুর্ঘটনার কারণ খুঁজতে ইসরোর বিজ্ঞানী, সেনা আধিকারিক এবং আইটিবিপির আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠকে বসেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী ত্রিবেন্দ্র সিং রাওয়াত। তাঁর দাবি, ইসরোর বিজ্ঞানীরা তাঁকে যে ছবি দেখিয়েছেন তাতে কোনও হিমবাহ দেখা যাচ্ছিল না, যেখান থেকে হিমবাহ ভাঙা শুরু হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। সেখানে ফাঁকা পাহাড়ই দেখা দিয়েছে। তবে তিনি এটাও জানান, ওই ছবিতে পাহাড়ের মাথায় কিছু একটা লক্ষ্য করা গিয়েছে। সেগুলো জমে থাকা তুষার বলেই মনে করা হচ্ছে। পাহাড়ের ঢাল বেয়েই সেগুলো হুড়মুড়িয়ে নেমে আসায় হড়পা বানের সৃষ্টি হয় ঋষিগঙ্গা এবং ধৌলিগঙ্গায়।