Advertisment

ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধে আন্তর্জাতিক মঞ্চে মুখ খুলল ভারত, কান পেতে শুনল তামাম বিশ্ব

সন্ত্রাসী সংগঠন হামাসের হামলার জবাবে গত ১৮ দিন ধরে গাজায় লাগাতার বোমাবর্ষণ করছে ইজরায়েলের সেনাবাহিনী।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
India at UN Security Council on Israel-Hamas war, israel Hamas war, Israel Hamas conflict, un security council, india at un security council, Ambassador R. Ravindra, india sends aid to palestine"

ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধে আন্তর্জাতিক মঞ্চে মুখ খুলল ভারত, কান পেতে শুনল তামাম বিশ্ব

ইজরাইল-হামাস যুদ্ধ নিয়ে বিশ্বের কাছে তার অবস্থান তুলে ধরে ভারত জানাল বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ভারত গভীরভাবে চিন্তিত। ইজরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলমান যুদ্ধ নিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে প্রথমবারের মত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ভারত। রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের রাষ্ট্রদূত আর.রবীন্দ্র বলেন, "ইজরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলমান যুদ্ধে নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি এবং ব্যাপক হারে সাধারণ মানুষের মৃত্যু নিয়ে ভারত গভীরভাবে উদ্বিগ্ন” । তিনি আরও বলেন, "ইজরায়েলে ৭ই অক্টোবরের সন্ত্রাসবাদী হামলা মর্মান্তিক এবং আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে সেই হামলার নিন্দা জানাই। আমাদের প্রধানমন্ত্রী প্রথম বিশ্বনেতাদের মধ্যে একজন যিনি প্রাণহানির ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন এবং নিরীহ সাধারণ মানুষের মৃত্যুতে তাঁদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন ও ইজরায়েলকে এই কঠিন সময়ে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে’।

Advertisment

'নারী শিশুদের রক্ষা করতে হবে'

রবীন্দ্র বলেন, "ইজরায়েলের সন্ত্রাসবাদী হামলার ঘটনায় তখন আমরা এই সংকটের সময়ে ইজরায়েলের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছি। তিনি বর্তমান সংঘাতে সাধারণ মানুষের মৃত্যুর ঘটনাকে গুরুতর এবং ক্রমাগত উদ্বেগের বিষয় বলে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন যে সকল পক্ষকে অবশ্যই নিরীহ সাধারণ মানুষদের রক্ষা করতে হবে, বিশেষ করে মহিলা ও শিশুদের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে”।

তাঁর বক্তৃতায়, রবীন্দ্র ইজরায়েল এবং হামাসের মধ্যে চলমান যুদ্ধের মধ্যে গাজা  উপত্যকায় সাধারণ লোকদের জন্য মানবিক সাহায্য পাঠানোর জন্য ভারতের প্রচেষ্টার  উপরও জোর দিয়ে বলেন, ‘ভারত ইতিমধ্যে গাজায় ৩৮ টন খাদ্যসামগ্রী এবং অত্যাবশ্যক  চিকিৎসা সরঞ্জাম পাঠিয়েছে। ভারত বরাবরই আলোচনার মাধ্যমে ইজরাইল-প্যালেস্তাইন সমস্যা সমাধানের কথা বলেছে। ভারত এই চ্যালেঞ্জিং সময়ে প্যালেস্তানি সাধারণ মানুষকে  মানবিক সহায়তা প্রদান করবে। দুই দেশের মধ্যে আলোচনা পুনরায় শুরু করার জন্য অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি করার জন্য সম্ভাব্য সব প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানাবে। ভারত ইজরায়েল-প্যালেস্তানি সংঘাতের একটি ন্যায্য, শান্তিপূর্ণ এবং স্থায়ী সমাধানের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।"  

ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধ দিনের পর দিন ভয়ঙ্কর আকার নিচ্ছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রসংঘের মঞ্চ থেকে সন্ত্রাসবাদের কড়া সমালোচনা করে মার্কিন বিদেশ সচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদের প্রতিটি কাজই বেআইনি ও অযৌক্তিক। এর পাশাপাশি তিনি ইরানকে  সতর্ক করে বলেন, ‘যুদ্ধে মার্কিন নাগরিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হলে আমেরিকা ছেড়ে কথা বলবে না’।

অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন আরও বলেছেন যে সন্ত্রাসবাদের সমস্ত কাজই বেআইনি এবং  অন্যায্য। হামাস সহ অনান্য জঙ্গি গোষ্ঠীকে  মদত তাদের অস্ত্র, অর্থায়ন ও প্রশিক্ষণ প্রদানকারী দেশগুলোর নিন্দা করে তাদের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন তিনি। তিনি তাঁর ভাষণে বলেন, ‘আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে ৭ অক্টোবর হামাসের হাতে নিহত ১৪০০ জনেরও বেশি লোকের মধ্যে ৩০ জনেরও বেশি রাষ্ট্রসংঘের সদস্য দেশগুলির নাগরিক ছিল। নিহতদের মধ্যে অন্তত ৩৩ জন মার্কিন নাগরিক রয়েছেন। প্রেসিডেন্ট বাইডেন এই সঙ্কটের শুরু থেকেই তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করেছেন, ইজরায়েলের আত্মরক্ষা অধিকার রয়েছে। সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে ইজরায়েলের পাশে  থেকে সব ধরণের সাহায্যের বার্তা দিয়েছে আমেরিকা।   

এদিকে ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধ নিয়ে এবার কড়া মন্তব্য করলেন রাষ্ট্রসংঘ প্রধান। তিনি বলেন, গাজায় ইজরায়েলের ক্রমাগত বোমাবর্ষণ অত্যন্ত উদ্বেগজনক। পাশাপাশি গুতেরেস বলেছেন যে তিনি গাজায় আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘনের জন্য অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। যুদ্ধবিরতির রাষ্ট্র সংঘের প্রধানের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে ইজরায়েল। হামাসকে ধ্বংস করার তাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে ইজরায়েল ঘোষণা করেছে যে গাজার যুদ্ধ কেবল নিজের জন্য নয় বরং 'মুক্ত বিশ্বের জন্য একটি যুদ্ধ'।  

আইডিএফ প্রধান হার্জি হালেভি একটি মিডিয়া ব্রিফিংয়ে বলেছেন যে তার বাহিনী "আক্রমণের জন্য প্রস্তুত।" ইজরায়েলের বিদেশমন্ত্রী এলি কোহেন রাষ্ট্রসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ইজরায়েল-গাজা সংঘাত নিয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেছেন, ৭ই অক্টোবর সমগ্র মুক্ত বিশ্বের জন্য একটি সতর্কবার্তা। তিনি বলেন, 'উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সতর্কবার্তা। সেদিন, হামাস এবং ইসলামিক জিহাদের ১৫০০ এরও বেশি জঙ্গি দক্ষিণ দিক থেকে ইজরায়েলে অনুপ্রবেশ করেছিল। ১৪০০-এর বেশি নিরীহ নাগরিককে হত্যা করেছে।  এই হামলায় ৪০০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।  তিনি বলেন, “এই হত্যাকাণ্ড ISIS এর চেয়েও নিষ্ঠুর-বর্বর।  

হামাস-ইজরায়েলের যুদ্ধে রাষ্ট্রসংঘের প্রধান আন্তোনিও গুতেরেস নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে বলেছেন যে হামাস 'কারণ ছাড়া' ইসরায়েল আক্রমণ করেনি। তার মন্তব্যে ক্ষুব্ধ ইজরায়েল। অবিলম্বে রাষ্ট্রসংঘ প্রধানের পদত্যাগ ও তার এই মন্তব্যের জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছে।

মঙ্গলবার রাষ্ট্রসংঘ প্রধান আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, সশস্ত্র সংঘাতে কোন পক্ষই আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের ঊর্ধ্বে নয়। তিনি ইজরায়েলি বাহিনীর যেভাবে হামাস-শাসিত গাজা উপত্যকায় "নিরবিচ্ছিন্ন বোমাবর্ষণ" করে চলেছে তা  নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। গুতেরেস বলেন, “সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পশ্চিম এশিয়ার পরিস্থিতি আরও সংকটজনক হয়ে উঠছে। গাজায় যুদ্ধপরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হচ্ছে এবং যুদ্ধ পুরো অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এই সংকটময় সময়ে, আমি সকলের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি যে সংঘাত বৃদ্ধি পাওয়ার আগেই তা পরিত্যাগ  করুন।"

গুতেরেস বলেছেন যে তিনি গাজায় আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘনের জন্য অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। জাতিসংঘের প্রধান অবিলম্বে যুদ্ধবিরতিরও আবেদন জানান।

Israel-Palestine clash
Advertisment