ব্রাজিলে তাণ্ডব, উদ্বিগ্ন মোদী। ব্রাজিলের ভয়াবহ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। টুইটারে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা ডি সিলভাকে ট্যাগ করে তিনি লিখেছেন, "রাজধানী ব্রাসিলিয়ায় গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানে দাঙ্গা, নাশকতার এই হিংসাত্মক বিক্ষোভে আমি উদ্বিগ্ন। গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যকে সকলের সম্মান করা উচিত। প্রধানমন্ত্রী আরও লিখেছেন, আমরা ব্রাজিল সরকারের প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছি”।
সোমবার মধ্যরাতে ব্রাজিলের কংগ্রেস(সংসদ), সুপ্রিম কোর্টে ঢুকে পড়ে তাণ্ডব চালাতে শুরু করে সেদেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি বলসোনারোর কয়েকশ সমর্থক। উত্তপ্ত রাজধানী ব্রাসিলিয়া। গত সপ্তাহে, বিক্ষোভকারীরা পুলিশ ব্যারিকেড ভেঙ্গে কংগ্রেস (সংসদ ভবন), রাষ্ট্রপতি ভবন এবং সুপ্রিম কোর্টে প্রবেশ করে প্রেসিডেন্ট হিসেবে লুইজ ইনাসিও লুলা ডি সিলভার শপথ গ্রহণের প্রতিবাদ জানায়।
গত বছরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা একই রকম কাজ করে, গত বছর ৬ জানুয়ারি ইউএস ক্যাপিটল বর্বোরোচিত আক্রমণের সাক্ষী থাকে। ব্রাজিলে দু’মাস আগে হওয়া রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ভোটে বামপন্থী লুই ইনাসিও লুলা দা সিলভার কাছে পরাজিত হয় প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি বলসোনারো। এর পর থেকেই বলসোনারোর কয়েকশ উন্মত্ত সমর্থক। দেশ জুড়ে তান্ডব চালাতে থাকে।
রাজধানী ব্রাসিলিয়ায় অবস্থিত কংগ্রেস ভবন, সুপ্রিম কোর্ট এবং রাষ্ট্রপতি ভবনে ঢুকে পড়ে কয়েকশ বলসোনারো সমর্থক। কড়া পুলিশি নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেদ করে ভিতরে ঢুকে কার্যত তাণ্ডব চালাতে শুরু করে তারা। সেই ভিডিও ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। তাদের সামলাতে হিমশিম খেতে হয় পুলিশকে। উন্মত্ত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জের পাশাপাশি কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটাতে হয় পুলিশকে।
হামলাকারীদের অনেকেরই হাতে ছিল দেশের সবুজ-হলুদ পতাকা। উন্মত্ত জনতার একটি দল হাউসের স্পিকারের চেয়ারে বসে পড়ে।বিক্ষোভকারীদের কিছু ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হচ্ছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে ‘দাঙ্গাবাজরা’ কংগ্রেস ভবনে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে প্রবেশ করে দরজা-জানালা ভাঙছে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, তারা একই সঙ্গে সংসদ সদস্যদের অফিসে ঢুকে ভাঙচুর করছে। একইসঙ্গে ব্যানারও টানানোর চেষ্টা করেন।
গত ৩০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত পুনঃনির্বাচনে বলসোনারো তার প্রতিপক্ষ দা সিলভার কাছে পরাজিত হন, যার পরে তাঁর কয়েকশো সমর্থক সারা দেশে কার্যত প্রতিবাদ দেখাতে শুরু করে। নির্বাচনের ফলাফলকেও অস্বীকার করে। পরবর্তীকালে, বামপন্থী নেতা লুইজ ইনাসিও লুলা ডি সিলভা ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বামপন্থী নেতা লুইজ ইনাসিও লুলা ডি সিলভার কাছে পরাজিত হন জাইর বলসোনারো। বোলসোনারো দীর্ঘদিন ধরে তার পরাজয় মেনে নেননি, অন্যদিকে তার সমর্থকরাও লুলার বিরোধিতা করছেন।
মলার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বিডেন।একটি টুইটে, বিডেন জোর দিয়ে বলেন, ‘ব্রাজিলের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলির ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে’।
প্রেসিডেন্ট বিডেন টুইট বার্তায় বলেন, ‘আমি গণতন্ত্রের উপর হামলা এবং একই সঙ্গে ব্রাজিলকে অশান্ত করার চেষ্টার তীব্র বিরোধীতা করছি। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে এবং ব্রাজিলের জনগণের ইচ্ছার অবমূল্যায়ন কোন ভাবেই বরদাস্ত করা হবেনা’।
রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ব্রাজিলের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানে হামলার নিন্দা করেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘ব্রাজিলের জনগণ এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের ইচ্ছাকে সম্মান করতে হবে। গুতেরেস এক টুইট বার্তায় বলেছেন ‘আমি ব্রাজিলের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের উপর হামলার নিন্দা জানাই। ব্রাজিলের জনগণ এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের ইচ্ছাকে সম্মান করতে হবে। গণতন্ত্রের ওপর আমার পূর্ণ বিশ্বাস আছে। ব্রাজিল একটি মহান গণতান্ত্রিক দেশ’।