করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময় লকডাউনের কারণে দেশের অন্যতম প্রধান শহরগুলিতে আটকে পড়েছিলেন পরিযায়ী শ্রমিকরা। এর মধ্যে কংগ্রেস মুম্বই শহরে আটকে পড়া পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরার ব্যবস্থা করতে ট্রেনের টিকিট পৌঁছে দিয়েছিল কংগ্রেস, অন্য দিকে দিল্লি সরকার বাসের ব্যবস্থা করেছিল শ্রমিকদের বাড়ি ফেরাতে। সোমবার সংসদে এই দুই বিষয়ের সমালোচনা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি । তিনি বললেন, এই দুই সিদ্ধান্তের ফলেই ভুগতে হয়েছিল।
সংবাদসংস্থা এএনআই এর খবর অনুসারে সোমবার সংসদে মোদি বলেন, করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময় পরিযায়ী শ্রমিকদের মুম্বই ছাড়ার জন্য টিকিট জুগিয়েছিলেন আপনারা (কংগ্রেস)। আবার দিল্লি সরকার পরিযায়ী শ্রমিকদের শহর ছাড়তে বলেছিলেন, বাসেরও ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। তার ফলেই পঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডের মতো রাজ্যগুলিতে দ্রুত কোভিড ছড়িয়ে পড়েছিল। অর্থাৎ সংসদে ঘুরিয়ে কংগ্রেস ও দিল্লির আপ সরকারের ঘাড়ে কোভিড সংক্রমণ বৃদ্ধির দোষ চাপালেন মোদি।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর এহেন যুক্তিকে কোন ভাবেই মানতে নারাজ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। একটি টুইটে তিনি লিখেছেন, “দেশ আশা করে করোনার সময় যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী সহানুভূতিশীল হবে”। সোমবার দিল্লির আপ এবং মহারাষ্ট্রের শিবসেনা-কংগ্রেস জোটের তীব্র সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা কোভিডের প্রথম ঢেউ কালে বারবার সতর্ক করেছিলেন, লোকেরা যেখানে আছে সেখানেই থাকুক তা না হলে এই ভাইরাস দ্রুত হারে ছড়িয়ে পরতে পারে, ঠিক তখনই মুম্বইয়ের ওপর চাপ কমাতে কংগ্রেস নেতারা মুম্বইয়ের স্টেশনগুলিতে দাঁড়িয়ে বিনামূল্যে ট্রেনের টিকিট বিতরণ করেছিলেন এবং তাদের মুম্বই ছেড়ে যেতে উৎসাহিত করেছিলেন যাতে মহারাষ্ট্রের উপর বোঝা কমানো যায়। প্রধানমন্ত্রীর এহেন বক্তব্যের বিরুদ্ধে এবার সরব বিরোধী দলগুলি।
তাঁর গতকালের এই বিবৃতি প্রসঙ্গে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল টুইটারে পোস্ট করেছেন “প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা। দেশটি আশা করে যে প্রধানমন্ত্রী কোভিডের কারণে যারা কষ্টের মুখোমুখি হয়েছেন এবং যারা প্রিয়জনকে হারিয়েছেন তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হবেন। জনগণের কষ্ট নিয়ে রাজনীতি করা প্রধানমন্ত্রীর শোভা পায় না”। মুম্বইতে, কংগ্রেস নেতা এবং মহারাষ্ট্রের রাজস্ব মন্ত্রী বালাসাহেব থোরাট বলেছেন “কেন্দ্র তার দায় থেকে দূরে সরে গেছে এবং যার ফল ভুগতে হয়েছে পরিযায়ী শ্রমিকদের"। তিনি আরও বলেন লকডাউনটি "প্রস্তুতি ছাড়াই" আরোপ করা হয়েছিল। এবং তার মারাত্মক ফল ভুগতে হয়েছে পরিযায়ী শ্রমিকদের”।
এনসিপি নেতা এবং রাজ্যের মন্ত্রী নবাব মালিক বলেছেন, “নমস্তে ট্রাম্প ইভেন্টের (ফেব্রুয়ারি ২০২০) মাধ্যমে কোভিড ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য মোদিজি দায়ী। মোদিজি দেশে কোভিড নিয়ে এসেছেন। তিনি যদি সময়মতো আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল সীমিত করতেন তবে কোভিড ভারতে এভাবে ছড়িয়ে পড়ত না”।
কংগ্রেস নেতা ও মন্ত্রী অশোক চ্যাভান দাবি করেন, "করোনা ব্যবস্থাপনায় তার ব্যর্থতা ঢাকতে এবং পাঁচটি রাজ্যের নির্বাচনের দিকে নজর রাখতে" "মিথ্যা অভিযোগ করছেন প্রধানমন্ত্রী”। শিবসেনা সাংসদ প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী টুইট করে লিখেছেন। “লকডাউন ঘোষণার মাত্র ৪ ঘণ্টার মধ্যে ট্রেন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, শ্রমিকরা কীভাবে ঘরে ফিরবেন তার কোন চিন্তাভাবনা না করেই এমন সিদ্ধান্ত শ্রমিকদের বিপদের মধ্যে ফেলেছিল, বিষয়টি মানবিক ভাবে বিবেচনা করা উচিত ছিল”।
মুম্বই কংগ্রেসের প্রধান ভাই জগতাপ প্রশ্ন তোলেন “করোনা ভাইরাস ভারতে এলো কী করে, এপ্রসঙ্গে তিনি রাহুল গান্ধীর বক্তব্য টেনে এনে বলেন, রাহুল গান্ধী আগেই বলেছিলেন আন্তর্জাতিক বিমান বন্ধ করে দেওয়া হোক কিন্তু তা করা হয়নি”।