অ্যামনেস্টি ইন্ডিয়ার প্রাক্তন প্রধান আকর প্যাটেলকে আমেরিকা সফরের অনুমতি দিল দিল্লির আদালত। শুধু তাই নয়, তাঁর বিরুদ্ধে লুকআউট নোটিস প্রত্যাহারের জন্যও সিবিআইকে আদালত নির্দেশ দিয়েছে। একইসঙ্গে, সিবিআই ডিরেক্টরকে লিখিতভাবে প্যাটেলের কাছে ক্ষমা চাইতে নির্দেশ দিল। আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাক্তন অ্যামনেস্টি প্রধানের বক্তৃতা দেওয়ার কথা আছে। সেই জন্য তিনি ব্যাঙ্গালোর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বুধবার আমেরিকায় যাচ্ছিলেন। সেই সময় তাঁকে অভিবাসন দফতরের আধিকারিকরা বাধা দেন। প্যাটেলকে জানানো হয়, তাঁর বিরুদ্ধে লুকআউট সার্কুলার জারি আছে। ২০১৯ সালে অ্যামনেস্টির বিরুদ্ধে একটি মামলায় এই সার্কুলার জারি করা হয়েছে। সেই সময় আকর প্যাটেলই অ্যামনেস্টি ইন্ডিয়ার প্রধান ছিলেন।
এর প্রেক্ষিতে দিল্লির অতিরিক্ত মুখ্য মেট্রোপলিটান ম্যাজিস্ট্রেট পবন কুমারকে প্রাক্তন অ্যামনেস্টি প্রধানের আইনজীবী তনবির আহমেদ মির পরিষ্কার জানিয়ে দেন, নাগরিক অধিকার আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দ্বারা পরিচালিত হতে পারে না। শুধু তাই নয়, তাঁর মক্কেল আকর প্যাটেল সিবিআইয়ের জন্য বিমানে উঠতে পারেননি। তাঁর বিমানের টিকিট কাটতে খরচ হয়েছে ৩ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। ওই টাকাটা সিবিআই অফিসার হিমাংশু বহুগুনাকে দিতে হবে। কারণ, তিনিই লুকআউট সার্কুলার জারি করেছেন। উভয়পক্ষের বক্তব্য শোনার পরই আদালত, সিবিআইকে ক্ষমা চাইতে নির্দেশ দিয়েছে।
এই নির্দেশ এমন একটা দিনে এল, যখন রাশিয়াকে রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার পরিষদ থেকে ছেঁটে ফেলতে উদ্যোগ নিয়েছে মার্কিন লবি। শুধু তাই নয়, ভারত বারবার রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোটদানে বিরত থাকায় মার্কিন হুমকির মুখেও পড়েছে। দ্বিমেরু বিশ্ব রাজনীতিতে আমেরিকা-রাশিয়ার পাল্লায় ওজনের তারতম্যের সুযোগে এতদিন নিরপেক্ষ রাজনীতির ঘোড়া ছুটিয়েছে নয়াদিল্লি। কিন্তু, ইউক্রেন যুদ্ধকে হাতিয়ার করে আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় রাশিয়াকে কার্যত কোণঠাসা করে দিয়েছে আমেরিকা। বর্তমান পরিস্থিতিতে পাল্লাভারী ওয়াশিংটনের চশমাতেই বরাবর গণতন্ত্র আর মানবাধিকার দেখেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। রুশ অস্ত্র আর পিঠচাপড়ানিতে বলীয়ান নয়াদিল্লি মোদী জমানায় অ্যামনেস্টির কাজকর্ম মোটেও ভালো চোখে দেখছিল না।
আরও পড়ুন- একা মন্দিরে রক্ষে নেই, অযোধ্যায় ‘পুষ্পকরথ’ ওঠানামার জন্য বিমানবন্দর বানাতে নির্দেশ যোগীর
পূর্বতন সরকারগুলোর চেয়ে এক্কেবারে আনকোরা অবস্থান নিয়ে অ্যামনেস্টির আর্থিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত হয়েছে বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার। শুধু তাই নয়, একধাপ এগিয়ে অ্যামনেস্টি ইন্ডিয়ার অ্যাকাউন্টের ওপরও ক্ষমতা প্রয়োগের চেষ্টা করেছে। তার মধ্যেই আবার প্রাক্তন অ্যামনেস্টি প্রধান আকর প্যাটেলকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যেতে বাধাদান। যে মানবাধিকারের নাগপাশে এখন রাশিয়া ফেঁসে আছে, সাম্প্রতিক অতীতে সেই রাশিয়া থেকেই একের পর এক অস্ত্র কেনার হিড়িকে উজ্জীবিত ভারতও ফেঁসে যেতে পারত অ্যামনেস্টির ঘটনায়।
অবশ্যই নিমরাজি অবস্থান না-নিলে। কারণ, রাশিয়ার সঙ্গে লেনদেন করলে, ভারতকে আর্থিক নিষেধাজ্ঞার বন্ধনীতে রাখা হবে কি না, তা নিয়ে আমেরিকা এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। সামরিক অস্ত্রে অত্যন্ত শক্তিশালী রাশিয়ার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিতে আমেরিকাকে নানা কৌশল করতে হয়েছে। ভারতের ক্ষেত্রে তেমন প্রয়োজন পড়বে না মার্কিন প্রশাসনের। প্রাক্তন অ্যামনেস্টি প্রধানের ইস্যুতে কেন্দ্রের অবস্থান যে আমেরিকার ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে দিত, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
Read story in English