গত মাসের ২৩ তারিখ হরিদ্বার থেকে মিছিল শুরু করেছিলেন ওঁরা। গান্ধী জয়ন্তীর দিন ট্রলি-ট্র্যাক্টরের কনভয় নিয়ে হাজার হাজার কৃষক দেশের রাজধানীতে ঠোকার চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন তাঁরা। একাধিক দাবি ছিল তাঁদের। ন্যূনতম সহায়তা মূল্য স্থির করা, জ্বালানির দাম কমানো সহ বিভিন্ন দাবি তুলে কৃষকরা স্থির করেছিলেন কিষান ঘাটে মিছিল শেষ করবেন তাঁরা।
পূর্ব উত্তরপ্রদেশের গোণ্ডা, বস্তি, গোরখপুরের মত জায়গা থেকে শুরু করে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের আখ উৎপাদনকারী এলাকা থেকে কৃষকরা মিছিলে যোগ দেন। রাজধানীগামী জাতীয় সড়ক কার্যত কৃষকদের দখলে চলে যায়। ঝামেলার আশঙ্কা করেছিল পুলিশ। তাই আগেভাগেই পাঁচজনের বেশি একজায়গায় জড় হতে পারবেন না, এ নির্দেশ জারি করা হয়েছিল। নিষেধাজ্ঞা জারি হয় অ্যামপ্লিফায়ার, লাউডস্পিকার এবং সমজাতীয় জিনিসপত্র ব্যবহারেও।
কৃষকদের দাবি
কৃষকদের প্রথম দাবি স্বামীনথন কমিটির সুপারিশ কার্যকর করতে হবে। ২০০৪ সাল থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে এই কমিটি চারটি রিপোর্ট জমা দেয়। যে রিপোর্টগুলিতে কৃষকদের বৃদ্ধির ব্যাপারে আলোকপাত করা হয়েছিল। কমিশনের পর্যবেক্ষণছিল জমি, জল থেকে শুরু করে প্রযুক্তি, বাজার প্রভৃতি বিষয়ের উপর কৃষকদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ। আন্দোলনকারী কৃষকদের দাবি, স্বামীনাথন কমিটির সুপারিশ রূপায়িত হলে ক্ষুদ্র কৃষকরা নিরাপত্তা পাবেন এবং ন্যূনতম সহায়ক মূল্য স্থিরীকৃত হবে।
ডিজেলের দাম হ্রাস
মুম্বইতে পেট্রোলের দাম ৯০ টাকা প্রতি লিটার ছুঁয়েছে। দিল্লিতে ডিজেলের দাম ৭৮.৬৯ টাকা প্রতি লিটার। পেট্রোল-ডিজেলের এই ভয়াবহ মূল্যবৃদ্ধিতে গত কয়েক মাসে কৃষকদের লাভের পরিমাণ ক্রমশ হ্রাস হচ্ছে। গোদের উপর বিষফোঁড়ার মত উত্তরপ্রদেশ সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোয় আরও সমস্যায় পড়েছেন কৃষকরা। কৃষকরা এ সমস্যার মোকাবিলায় সরকারের পদক্ষেপ চান। সঙ্গে দিনের বেলায় অন্তত ৬ ঘণ্টা একনাগাড়ে বিদ্যুৎ পরিষেবারও দাবি তুলেছেন তাঁরা।
পরিবেশ ট্রাইবুনালের ফতোয়া
জাতীয় পরিবেশ ট্রাইবুনাল যে ১০ বছরের বেশি পুরনো ডিজেল চালিত বাহন বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে, তাও ব্য়াপক সংকটের মুখে ফেলেছে বলে অভিযোগ কৃষকদের। নতুন ট্র্যাক্টর বা ট্রাক কেনার মত পর্যাপ্ত অর্থ তাঁদের নেই বলে জানিয়ে তাঁদের দাবি এই বাহন বাতিলের নির্দেশ হয় নাকচ করতে হবে, নয়তো তাঁদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
কৃষিঋণ মকুব
মহারাষ্ট্রের কৃষকদের লং মার্চের সময়ে দাবি উঠেছিল কৃষিঋণ মকুবের। এই কৃষকদেরও তরফ থেকেও একই দাবি তোলা হয়েছে। খরা-বন্যায় ক্ষতি বা শস্যের ফলন না হওয়ার মত ঘটনার জেরে কৃষক আত্মহত্যার মত ঘটনা প্রচুর ঘটেছে। মিছিলের দাবি একবার সম্পূর্ণ কৃষিঋণ মকুব করা হোক।
আখচাষিদের বকেয়া
সরকারের কাছে আখচাষিদের বকেয়া মেটানোর দাবিও তোলা হয়েছে। ২০১৭-১৮ কৃষিবর্ষে দেশে ৩২ মিলিয়ন টন আখ উৎপাদিত হয়, যেখানে দেশের প্রয়োজন মাত্র ২৫ লক্ষ টন। এর ফলে চিনির দাম পড়ে যায় ব্যাপকভাবে। এ মাসের গোড়ায় উত্তরপ্রদেশ সরকার আখ উৎপাদকদের বকেয়া মেটানোর উদ্দেশ্যে চিনিকগুলির জন্য ৫৫৩৫ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল, যেখানে বকেয়ার পরিমাণ এখন প্রায় ১০ হাজার কোটিতে পৌঁছেছে।