Advertisment

রাজধানীতেই 'লুকিয়ে আছে' দিল্লির শেষ জীবিত হাতি লক্ষ্মী

দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সঙ্গে দেখা করে পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিয়ে পলাতক ইউসুফ জানান, তিনি এবং তাঁর লক্ষ্মী এই রাজধানী ছেড়ে কোথাও যায়নি। কোথায় ছিলেন তাঁরা?

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিয়ে প্রিয় লক্ষ্মীকে লুকিয়ে ছিলেন তাঁর মাহুত ইউসুফ। এক্সপ্রেস ফোটো- প্রবীণ খান্না

দু'মাস ধরে তন্ন তন্ন করে খোঁজার পর অবশেষে দিল্লিতেই পাওয়া গেল সেই 'বিতর্কিত' হাতিটিকে। গত জুলাই থেকেই 'নিখোঁজ' হাতিটিকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। কিন্তু সেই নিখোঁজ গজের সন্ধান যে খোদ রাজধানীতেই মিলবে, এমনটা ভাবতেই পারেন নি দিল্লি পুলিশ এবং বন্যপ্রাণ সংরক্ষণের অধিকর্তারা।

Advertisment

ঠিক কী হয়েছিল?

লক্ষ্মী ছিল দিল্লির শেষ জীবিত হাতি। তার নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের আইনানুসারে গত ৬ জুলাই বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ আধিকারিকরা হাতিটিকে বাজেয়াপ্ত করার খবর চাউর হতেই বছর পঁয়ত্রিশের লক্ষ্মীকে নিয়ে যমুনার তীর থেকেই কার্যত উধাও হয়ে যান মাহুত ইউসুফ আলি (৪৫)। প্রায় দু'মাস বাদে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সঙ্গে দেখা করে পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিয়ে পলাতক ইউসুফ জানান, তিনি এবং তাঁর লক্ষ্মী এই রাজধানী ছেড়ে কোথাও যান নি এই দু'মাসে। ইউসুফ বলেন, "জুলাইয়ের ৬ তারিখের পর আমরা লুকিয়ে থাকি। আমি লক্ষ্মীকে যমুনা নদীর তীরে যে বন, সেখানেই লুকিয়ে রাখি। কিছুদিন পর আমি আমার এক বন্ধুর ফার্মহাউসে নিয়ে যাই লক্ষ্মীকে। তখন থেকেই লক্ষ্মী সেখানে আছে। আমি প্রতি সন্ধ্যাবেলা ওকে নিয়ে বেরোতাম এক-দু ঘন্টার জন্য।"

publive-image দিল্লির পথে 'লক্ষ্মী'কে নিয়ে মাহুতবেশে ইউসুফ। ছবি: প্রবীণ খান্না, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

লক্ষ্মীর প্রতি ভালোবাসা থেকেই গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ইউসুফ নিজেও পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে লুকিয়ে থাকতেন। এমনকি নিজের ফোন নম্বরও পরিবর্তন করেছেন। 'লক্ষ্মীর মাহুত' বলেন, "আমি কখনও সখনও বাইরে আসতাম লক্ষ্মীর খাবার কেনার আর পরিবারের সঙ্গে দেখা করার জন্য। খুব কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে কেটেছে সেই সময়। আমাকে সবরকম ভাবে খেয়াল রাখতে হয়েছে লক্ষ্মীর। আমার ঘরে খাবার না থাকলেও, লক্ষ্মীর জন্য আমি খাবারের ব্যবস্থা করতাম। প্রতিদিন প্রায় ৫০০ লিটার জল, আখ এবং জোয়ার আনতাম।"

publive-image আদালতের নির্দেশানুসারে লক্ষ্মীকে বাজেয়াপ্ত করতে চান বন্যপ্রাণী আধিকারিকেরা। ছবি: প্রবীণ খান্না, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

চোরাশিকারীদের হাতে যখন একের পর এক গজহত্যা হচ্ছে, সেই সময়ে দাঁড়িয়ে ইউসুফ আলি বলেন, "আদালত যা সিদ্ধান্ত নেবে আমি মেনে নেব সব। লক্ষ্মীর সঙ্গে আমার একটা আত্মিক যোগ আছে। যদি আদালতের রায় বন্যপ্রাণী বিভাগের পক্ষে যায় তবে আমাকে ওকে ফিরিয়ে দিতে হবে। রায়দানের আগে অবধি লক্ষ্মী আমার কাছেই থাকবে। ওকে দিল্লির বাইরে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমার অনুমতির প্রয়োজন। আশা করি আদালত এই বিষয়টি বুঝবে।" প্রসঙ্গত, ইউসুফের নামে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫৩ ধারার (সরকারী কর্মচারীকে দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়ার জন্য হামলা) এবং ১৮৬ ধারা (জনসাধারণের কাজকর্ম পরিচালনায় সরকারী কর্মচারীকে বাধা দেওয়া) অধীনে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রয়েছে।

পরিবেশমন্ত্রকের বিধি ২০০৮ অনুসারে হাতি রাখার জন্য খাদ্য, স্বাস্থ্য, উপযুক্ত স্থান এবং পানীয় জলের অভাবের মতো বিষয়ের নির্দেশিকা লঙ্ঘনের অভিযোগে ইউসুফের 'লক্ষ্মী'কে বাজেয়াপ্ত করতে চায় বন্যপ্রাণ দফতর। তবে তাদের অভিযোগ, ইউসুফের বাড়িতে গেলে সেখানে আধিকারিকদের আক্রমণ করা হয়। এরপরেই জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা করা হয় ইউসুফ আলির বিরুদ্ধে। কিন্তু ইউসুফের পাল্টা অভিযোগ, আধিকারিকেরাই তাঁর বাড়িতে এসে হামলা করেন। এমনকি তাঁর স্ত্রী-র মাথাও ফাটিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ 'লক্ষ্মীর পরিচারকের'।

Read the full story in English

delhi
Advertisment