শহরে একই দিনে ডেঙ্গিতে মৃত্যু হল দুজনের। মৃতদের একজন উত্তর কলকাতার উল্টোডাঙার গৌরীবাড়ির বাসিন্দা এবং অন্যজন দক্ষিণ কলকাতার বিজয়গড়ের বাসিন্দা। রবিবার দুপুরে এমআর বাঙ্গুর হাসপাতালে মারা যান আশুতোষ কলেজের ২১ বছর বয়সী ছাত্রী মৌ মুখোপাধ্যায়। জানা গিয়েছে, শনিবার জ্বর গায়ে হঠাৎই মাথা ও চোখের যন্ত্রণায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন ওই তরুণী। এরপর মাঝরাতে বাঘাযতীন স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখান থেকে এমআর বাঙ্গুর হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয় তাঁকে। সেখানেই রবিবার দুপুরে মৃত্যু হয় মৌ-এর।
একই দিনে বিকেলে সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয় ঝুমা অধিকারী নামে বছর ৩৪-এর এক মহিলার। শুক্রবার থেকে উত্তর কলকাতার জে বি রায় আয়ুর্বেদিক হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল তাঁর। কিন্তু, সেখানে যথাযথ চিকিৎসা পাওয়া যাচ্ছিল না বলেই অভিযোগ ঝুমার পরিবারের। শনিবার বিকেলে আয়ুর্বেদিক হাসপাতাল থেকে ঝুমাদেবীকে নিয়ে উত্তর কলকাতার দুই বেসরকারি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত ওদিন রাতে সল্টলেকের এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ঝুমাকে। রবিবার সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।
আরও পড়ুন: শহরে ফের ডেঙ্গির হানা, মৃত এগারো বছরের বালক
যদিও রবিবারের এই দু'টি মৃত্যু যে আদতে ডেঙ্গির জেরেই হয়েছে, সেকথা মানতে নারাজ রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর। এ দিকে এলাইজা পদ্ধতিতে রক্ত পরীক্ষায় উভয়ের রক্তেই মিলেছে ডেঙ্গির ভাইরাস। অথচ কারও ক্ষেত্রেই ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ হিসেবে ডেঙ্গির উল্লেখ নেই। তবে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পরপর দুটি মৃত্যুতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন চিকিৎসকরা। তাঁদের কথায়, শহরের বড় অংশের ডেঙ্গি রোগীর ক্ষেত্রেই চিকিৎসকরা দেখছেন, সমস্যা চট করেই গুরুতর আকার ধারণ করছে এবং আচমকা এতটাই বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে যাচ্ছে, যে তাঁদেরও বিশেষ কিছু করার থাকছে না।
অন্যদিকে চলতি মাসের ১১ তারিখে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয় আরুশ দত্ত নামে বছর এগারোর এক বালক। কয়েকদিন ধরে জ্বরে ভোগার পর আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসা শুরু হয় তার। পরদিন ভোরেই মৃত্যু হয় ওই কিশোরের৷ এক্ষেত্রে ডেথ সার্টিফিকেটে ডেঙ্গির কথা উল্লেখ করেছিলেন চিকিৎসকরা৷ বলার অপেক্ষা রাখে না, ক্রমশ জটিল হচ্ছে রাজ্যে ডেঙ্গু পরিস্থিতি। আশঙ্কাজনক ভাবেই বাড়ছে ডেঙ্গিতে মৃতের সংখ্যা। এতে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে পুরকর্মী থেকে চিকিৎসক, প্রত্যেকের কপালেই।
প্রসঙ্গত, কলকাতা পুরসভার সংযোজিত এলাকার বেশ কিছু বরোয় কেএমডিএ-র ফাঁকা জমিই ডেঙ্গির আঁতুড়ঘর বলে মনে করছেন পুরকর্তারা। ইতিমধ্যেই পুর কমিশনার নিজে প্রতিটি বরোয় গিয়ে সকলের সঙ্গে বৈঠক করছেন। ওই বরোর চেয়ারম্যান এবং কর্মীদের সঙ্গে ডেঙ্গির হাল-হকিকত নিয়ে আলোচনা করেন তিনি। পুলিশ এবং সিটিসি-র সদস্যেরাও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। এই ফাঁকা জমিগুলি থেকে আগাছা ছেঁটে জল পরিষ্কার করার কাজ সম্পন্ন করার মতো পর্যাপ্ত পুরকর্মী নেই বলে জানানো হয়েছে। এদিন ডেঙ্গি বিষয়ক একাধিক আলোচনা উঠে আসে বৈঠকে। তবে কি শুধুমাত্র কথাই সার? এমনটাই প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে।