আদালতের নির্দেশকে থোড়াই কেয়ার। বিহার সরকাররের বিরুদ্ধে জেডি (ইউ) সাংসদের এক নিকট আত্মীয়ের সংস্থাকে ১৬০০ কোটি টাকার চুক্তি পাইয়ে দেওয়ার মত মারাত্মক অভিযোগে হুলস্থূল কাণ্ড। অভিযোগের মুখে, আরজেডি-জেডি(ইউ) রাজ্য সরকার। পাটনা হাইকোর্টের আদেশকে একপাশে সরিয়ে রেখে ক্ষমতাসীন জেডি(ইউ)-এর এক সাংসদের আত্মীয়দের মালিকানাধীন একটি কোম্পানিকে রাজ্য জুড়ে জরুরি পরিষেবা প্রদানকারী অ্যাম্বুলেন্স চালানোর চুক্তি আরও পাঁচ বছরের জন্য পুনর্নবীকরণ করেছে বিহার সরকার। প্রথমবারের মতো চুক্তিতে এমন কিছু শর্ত তুলে ধরা হয়েছে যাকে কাজে লাগিয়ে চুক্তি আরও তিন বছর বাড়ানো যেতে পারে।
জানা গিয়েছে চলতি বছর ৩১ মে জরুরী স্বাস্থ্য পরিষেবার অংশ হিসাবে বিনামূল্যে রোগীদের সহয়তা প্রদানকারী অ্যাম্বুলেন্স (১০২) এর জন্য ২,১২৫ টি অ্যাম্বুলেন্স রাজ্যজুড়ে চালানোর জন্য ১৬০০ কোটি টাকার চুক্তি সরকারের তরফে দেওয়া হয়, পাটনার পশুপতিনাথ ডিস্ট্রিবিউটরস প্রাইভেট লিমিটেডকে (পিডিপিএল)। এই সংস্থার মালিক জাহানাবাদের সাংসদ চন্দেশ্বর প্রসাদের এক আত্মীয়। অ্যাম্বুলেন্সগুলি গুরুতর রোগী, গর্ভবতী মহিলা এবং শিশুকে বিনা মূল্যে নিকটস্থ সরকারি হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়। পিডিপিএলের সংস্থায় রয়েছেন, সাংসদের ছেলে সুনীল কুমার, সুনীল কুমারের স্ত্রী নেহা রানী সহ অনেকেই।
পশুপতিনাথ ডিস্ট্রিবিউটরস প্রাইভেট লিমিটেডকে এই নিয়ে টানা দ্বিতীয় বারের জন্য রাজ্যজুড়ে বিনামূল্যে অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবার চুক্তি প্রদান করা হয়। এটাও দেখা গিয়েছে পশুপতিনাথ ডিস্ট্রিবিউটরস প্রাইভেট লিমিটেড একমাত্র দরদাতা হিসাবে হাজির ছিল। প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে, পিডিপিএল এবং সম্মান ফাউন্ডেশন, একটি কনসোর্টিয়াম হিসাবে, প্রায় ৬৫০টি অ্যাম্বুলেন্স চালানোর জন্য ৪০০ কোটি টাকার চুক্তি পেয়েছিল। তবে এবার, সম্মান বিভিজি ইন্ডিয়া লিমিটেড, আরও দুই সংস্থার টেন্ডার জমা দেয়। তার মধ্যে রয়েছে জিকুইটজা হেলথ কেয়ার লিমিটেড, মুম্বাই; এবং জিভিকে ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট, সেকেন্দ্রাবাদ।
আরও পড়ুন: < সেনাবাহিনীতে আধুনিকীকরণ! তিন বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় সাধনে বড় ভাবনা >
২০২২ সালের জুলাইয়ে, তিন আরজেডি বিধায়ক, মুকেশ কুমার রোশন, ঋষি কুমার এবং ভাই বীরেন্দ্র, বিহারের তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিজেপির মঙ্গল পান্ডেকে একটি চিঠি লিখে অনিয়মের অভিযোগ করেছিলেন। তবে ৯আগস্ট, ২০২২-এ, নীতীশ কুমার বিজেপির সঙ্গে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করেন এবং আরজেডি এবং অন্যান্য ছয়টি দলের মহাজোট গড়েন। তেজস্বী প্রসাদ যাদব ডেপুটি সিএম এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী হন এবং সেই অভিযোগ কার্যত ঠাণ্ডাঘরে চলে যায়। তেজস্বী যাদবের কাছ থেকে এবিষয়ে কোন মন্তব্য পাওয়া যায় নি। সাংসদ চন্দেশ্বর প্রসাদ চন্দ্রবংশীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেছিলেন: "এটি আমার আত্মীয়দের সংস্থা এবং এতে আমার কোনও ব্যক্তিগত বক্তব্য বা অংশ নেই।"
পক্ষপাতিত্বের অভিযোগের মধ্যে তার আত্মীয়ের ব্যবসায় পরপর দ্বিতীয় মেয়াদে রাজ্য সরকারের চুক্তি পাওয়ার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি বলেন “আমরা সবাই নীতীশ কুমারকে চিনি, তিনি কোন পক্ষপাতিত্ব করেন না PDPL একটি প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি যেটি পেট্রোলিয়াম, মদ ব্যবসা এবং পরিবহন ব্যবসায় পরিচিত নাম এবং সংস্থা তার যোগ্যতায় চুক্তিটি পেয়েছিল। আমরা এখন অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবায় প্রতিষ্ঠিত।” অনিয়মের এই অভিযোগ গড়ায় আদালত পর্যন্ত। এবিষয়ে এখনও কোন নিষ্পত্তি হয় নি। এই বিষয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, 'সুপ্রিম কোর্টের আদেশ হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেনি বরং অন্যান্য দিক বিবেচনা করতে বলেছে। এই পরিস্থিতিতে, আমরা A-G-এর মতামত চেয়েছি এবং PDPL-কে অস্থায়ী চুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যদি হাইকোর্ট অন্যথায় নির্দেশ দেয়, আমরা সেই অনুযায়ী মেনে চলব।”