Advertisment

‘পদ্মবিভূষণে সম্মানিত’ ORS-এর জনক, প্রয়াত কিংবদন্তী চিকিৎসককে বিরাট সম্মান কেন্দ্রের

ল্যানসেট জার্নাল বিংশ শতকের ‘সম্ভাব্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা অগ্রগতি’ বলে ORS-এর উদ্ভাবনকে অভিহিত করে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

বিশিষ্ট চিকিৎসক দিলীপ মহলানবিশ

প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রাক্কালে পদ্ম পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। এবার ২৬ জনকে ‘পদ্ম পুরস্কারে’ ভূষিত করা হয়েছে। ওআরএস-এর জনক দিলীপ মহলানবিশকে পদ্মবিভূষণ সম্মান দিল কেন্দ্রীয় সরকার। অন্যদিকে, চিকিৎসা ক্ষেত্রে অবদানের জন্য আন্দামান ও নিকোবরের ডঃ রতন চন্দ্র কর এবং আদিবাসি এলাকায় উল্লেখযোগ্য কাজের জন্য গুজরাটের মহিলা সমাজকর্মী হিরাবাই লোবিকে পদ্মশ্রী দিয়ে সম্মানিত করা হয়েছে। জব্বলপুরের ডাঃ মুনীশ্বর চন্দ্র দাভার দরিদ্র এবং সমাজের পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর চিকিৎসার জন্য চিকিৎসার ক্ষেত্রে (সাশ্রয়ী স্বাস্থ্যসেবা) ‘পদ্মশ্রী’ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে।  

Advertisment

উল্লেখ্য, গত ১৬ অক্টোবর ৮৮ বছর বয়সে প্রয়াত হন বিশিষ্ট চিকিৎসক দিলীপ মহলানবিশ । নুন, চিনি এবং অন্য ফ্লুইড দিয়ে তিনি ORS তৈরি করেছিলেন। ৭১-এর বাংলাদেশ যুদ্ধের সময় কলেরা বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে মহামারীর মোকাবিলা করেছিলেন এই বিশিষ্ট চিকিৎসক। রোগীদের ডিহাইড্রেশনের সমস্যা মোকাবেলায় বিশ্বব্যাপী ওআরএস ব্যবহার করা হয়। ওআরএসকে '20 শতকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা আবিষ্কার' হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। ওআরএস তৈরি করে চিকিৎসা ক্ষেত্রে সাড়া ফেলে দেন বাঙালি চিকিৎসক ডাঃ দিলীপ মহলানবিশ ২৬ জানুয়ারির প্রাক্কালে পদ্ম পুরস্কার প্রাপকদের নাম ঘোষণা করা হয়। তালিকায় দিলীপ মহলানবিশ পদ্মবিভূষণে সম্মানিত করার সিদ্ধান্ত হয়।

ডাঃ মহলানবিশ ১২ নভেম্বর ১৯৩৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কলকাতা ও লন্ডনে পড়াশোনা করেন। পরে তিনি কলকাতার জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর মেডিকেল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং-এ যোগ দেন। সেখানে তিনি ওরাল রিহাইড্রেশন থেরাপি নিয়ে গবেষণা করেন।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশ যুদ্ধ শুরু হলে পূর্ব পাকিস্তান থেকে লাখ লাখ উদ্বাস্তু ভারতে আসতে শুরু করে। শরণার্থী শিবিরগুলোতে পানীয় জল ও স্যানিটেশনের সমস্যা দেখা দেয়। এ কারণে বহু মানুষ অসুস্থ হতে শুরু করেছে। কলেরা ও ডায়রিয়া দাবানলের ছড়াতে থাকে। তখন মহলানবিশ ও তার সঙ্গীরা বনগাঁয় একটি ক্যাম্পে তৈরি করে অসুস্থদের সেবাদানের কাজ শুরু করেন। কলেরা এবং ডায়েরিয়া আক্রান্তদের উপর তিনি এই তরল ORS প্রয়োগ করেছিলেন। আর তা রীতিমতো ম্যাজিকের মতো কাজ করে। বাংলাদেশ যুদ্ধের সময় বনগাঁর একটি রিফিউজি ক্যাম্পে মেডিক্যাল সুপারভাইজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ দিলীপ মহলানবিশ। তাঁর গবেষণা থেকে ডাঃ মহলনোবিশ জানতে পেরেছিলেন যে নুন এবং চিনির মিশ্রণ শরীরে জলের পরিমাণ বজায় রাখতে সাহায্য করে।

যদিও শুরুতে ডা: মহলানবিশের তৈরি ওআরএস নিয়ে বিশ্বের চিকিৎসকদের মনে কিছুটা সংশয় ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে কলেরা এবং ডায়রিয়ার মতো রোগের চিকিৎসায় ওআরএসের ব্যবহার উপকারী প্রমাণিত হয়। ২৯শে জুলাই ভারতে ‘ওআরএস দিবস’ হিসেবে পালিত হয়। এটি কতটা কার্যকর প্রমাণিত হয়েছিল তা প্রমাণ করে যে মেডিকেল জার্নাল দ্য ল্যানসেট ওআরএসকে '20 শতকের চিকিৎসাক্ষেত্রে সবচেয়ে ‘গুরুতপূর্ণ আবিষ্কার' বলে উল্লেখ করেছে।

১৯৭৫ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত, ডাঃ মহলানবিশ আফগানিস্তান, মিশর এবং ইয়েমেনে কলেরা নিয়ন্ত্রণের প্রচারাভিযানে অংশগ্রহণ করেন। এরপর তিনি WHO-এর প্রচার অভিযানেও যুক্ত হন। ৮০-এর দশকে, ডাঃ মহালানবিশ ‘ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগের’ বিরুদ্ধে লড়াইয়ের গবেষণায় WHO-এর পরামর্শদাতা হিসেবেও কাজ করেছিলেন। ২০২২ সালে, ডাঃ মহালানবিশ এবং ডাঃ নাথানিয়েল এফ. পিয়ার্স কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়-এর তরফে পলিন পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়। এটি শিশুরোগের ক্ষেত্রে ‘নোবেল পুরস্কারের’ সমতুল্য বলেই গন্য করা হয়। গত বছরের ১৬ ইএম বাইপাসের ধারে এক বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই বিশিষ্ট চিকিৎসক। বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। সূত্রের খবর, দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্য জনিত সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। ল্যানসেট জার্নাল বিংশ শতকের ‘সম্ভাব্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা অগ্রগতি’ বলে ORS-এর উদ্ভাবনকে অভিহিত করে।

padma-award Dilip Mahalanobis Padma Vibhushan
Advertisment