গত ১০ দিন ধরে আন্দোলন করছেন কৃষকরা। ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (MSP) এবং অন্যান্য একাধিক বিষয়ে আইনি গ্যারান্টি সহ তাদের দাবি জানিয়ে কৃষকরা হরিয়ানার সীমান্তে বিক্ষোভ করছে। ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত কৃষকরা বেশ কয়েকবার দিল্লিতে মিছিল করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু প্রতিক্ষেত্রেই পুলিশ তাদের বাধা দিয়েছে। কৃষকরা ফের বুধবার সকালে দিল্লির দিকে মিছিল করার চেষ্টা করেছিল, যার জবাবে নিরাপত্তা বাহিনী কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে এবং রাবার বুলেটও ছুড়েছিল। যাতে মৃত্যু হয় এক প্রতিবাদী কৃষকের।
কৃষক আন্দোলন কিভাবে শুরু হয়েছিল?
১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে পাঞ্জাবের হাজার হাজার কৃষক প্রতিবাদ জানাতে দিল্লি পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন। রাজ্যের কৃষক সংগঠনগুলি দিল্লি চলো ডাক দিয়েছে। এই প্রতিবাদ ন্যূনতম সহায়ক মূল্য অর্থাৎ MSP সংক্রান্ত। MSP-এর পাশাপাশি, স্বামীনাথন কমিশনের রিপোর্ট কার্যকর করা, লখিমপুর খেরি দুর্ঘটনায় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার মতো আরও অনেক দাবিতেও অনড় কৃষকরা।
১২ ফেব্রুয়ারি রাতে, কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রী এবং কৃষক সংগঠনগুলির মধ্যে একটি বৈঠক হয়েছিল, যেখানে এমএসপি সহ অনেকগুলি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। তবে ফসলের ন্যূনতম সমর্থন মূল্য নিশ্চিত করার বিষয় নিয়ে কোন সমাধানসূত্র মেলেনি। এরপর সরকার ও কৃষকদের মধ্যে চার দফা আলোচনা হলেও কোনো সমাধান হয়নি।
একদিকে কৃষক ও সরকারের মধ্যে আলোচনা যেমন একদিকে চলতে থাকে, অন্যদিকে দিল্লির দিকে পদযাত্রার করে কৃষকরা তাঁদের আন্দোলনের ঝাঁঝ বাড়িয়েছে। হরিয়ানা পুলিশ দাবি করেছে যে ১৩ ফেব্রুয়ারি বিক্ষোভকারী কৃষকরা শম্ভু সীমান্তে ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করেছিল। এর পাশাপাশি, বিক্ষোভকারীরা হরিয়ানা পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছোঁড়ে, যার জবাবে পুলিশ জলকামান এবং কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এই ঘটনায় প্রায় ২ ডজন পুলিশ কর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে। অন্যদিকে, কৃষক নেতা সারওয়ান সিং পান্ধের দাবি করেছেন যে শম্ভু ও খান্নাউরি সীমান্তে পুলিশি তাণ্ডবে প্রায় ৬০ জন কৃষক আহত হয়েছেন।
২২-বছর-বয়সী কৃষক শুভকরন সিং-এর মৃত্যু , আন্দোলনকে এক অন্যরূপ দিয়েছে। তাঁকে "শহীদ" ঘোষণা করার দাবি ওঠে সংগঠনের তরফে। বুধবার থেকে তার মৃতদেহ হাসপাতালে পড়ে রয়েছে। ভারতী কিষাণ ইউনিয়নের (সিধুপুর) সভাপতি জগজিৎ সিং ডাল্লেওয়াল এবং কিষাণ মজদুর সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক সর্বান সিং পান্ধের রাজ্য সরকারের কাছে সিংকে "শহীদ" ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন : < Satya Pal Malik On Modi: ‘মুখ বন্ধ করতে এজেন্সিকে কাজে লাগাচ্ছে মোদী সরকার’, হাসপাতালে শুইয়ে ক্ষোভ প্রাক্তন রাজ্যপালের >
সম্মিলিত কিষাণ মোর্চা (SKM) পাঞ্জাব-হরিয়ানা সীমান্তে প্রতিবাদী কৃষকের মৃত্যুর ঘটনায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে এবং হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খট্টর এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল ভিজের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার দাবি জানিয়েছে। আগামী সপ্তাহে ট্রাক্টর মিছিল করার ঘোষণা করেছেন কৃষক নেতারা। এদিকে কৃষক নেতা সারওয়ান সিং পান্ধরের বক্তব্য প্রকাশ্যে এসেছে। তিনি বলেছেন যে 'শুভকরন সিং-য়ের মৃত্যু নিয়ে আমরা পাঞ্জাব সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছি'।
মৃত কৃষক শুভকরণ সিং সম্পর্কে কৃষক নেতা সারওয়ান সিং পান্ধের বলেছেন যে শুভকরণের মৃত্যুর পর পাঞ্জাব সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে। তিনি হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ৩০২ (খুন) ধারায় মামলা দায়েরের দাবি জানিয়েছেন। শুধু তাই নয়,তিনি বলেন, শুভকরন সিংকে 'শহীদ' মর্যাদা দেওয়া উচিত পাঞ্জাব সরকারের। পান্ধের আরও বলেন, শুভকরন সিংয়ের পরিবারের সঙ্গে ক্ষতিপূরণ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তার পোস্টমর্টেমের জন্য একটি বোর্ড গঠন করে ভিডিওগ্রাফি করা হবে। কৃষক নেতা সারওয়ান সিং পান্ধের আরও বলেন, ১৪ ঘণ্টার বেশি হয়ে গেছে কিন্তু পাঞ্জাব সরকার কোনো প্রতিক্রিয়া জানায় নি। সেই কারণেই হাসপাতালে পড়ে আছে শুভকরন সিংয়ের মৃতদেহ।