গত ৩০ আগস্ট প্রথমবার কলের জল পড়তে দেখেন বছর-৭৬-এর আনজারিয়া যাদব। তার মতো, পুরো গ্রাম জানত কাকে ধন্যবাদ জানাতে হবে। কারণ দীর্ঘদিন ধরেই জল সমস্যায় জেরবার গ্রামের মানুষ। যাদবের কথায়, "এটি ডিএম সাহেবের জন্য’ই সম্ভব হয়েছে। বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত ট্যাঙ্কারগুলির ওপরই নির্ভর করতে হত তাদের। যা জনপ্রতি ১৫-৩০ লিটার জল সরবরাহ করত, গ্রামের প্রায় ১ কিলোমিটার দূরে একটি ছোট জলাশয় রয়েছে। বিশেষ প্রয়োজনে সেটাই ছিল ভরসা। আইএএস দিব্যা মিত্তল সেপ্টেম্বরে জেলায় বদলি হয়ে আসার পরে উদ্যোগ নিয়েছিলেন ঘরে ঘরে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার। তা সফল হওয়ার পরই দু'দিন আগে জেলা শাসক দিব্যা মিত্তলকে মির্জাপুর থেকে সরিয়ে বাস্তির জেলা শাসক করা হয়। এখন তাকে ওয়েটিংয়ে রাখা হয়েছে।
৩০ অগাস্ট, পাইপ লাইনের কাজ শেষ হওয়ার পর জল অবশেষে গ্রামে পৌঁছালে আইএএস দিব্যা মিত্তল "জল পুজান" আয়োজন করেছিলেন। এর মাত্র কয়েকদিন পরে, ১ সেপ্টেম্বর, আইএএস অফিসারকে রাজ্য সরকার ওয়েটিংলিস্টে রাখার আগে পূর্ব ইউপির বাস্তি জেলায় বদলি করে। অতিরিক্ত মুখ্য সচিব (নিয়োগ ও কর্মী), দেবেশ চতুর্বেদী, বদলির বিষয় নিয়ে কোন মন্তব্য করেননি।
সেই দিনের পর মিত্তাল টুইট করেছিলেন: “আজ আমার হৃদয় ভরে গিয়েছে গ্রামের মানুষগুলির মুখে হাসি ফোটাতে পেরে। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরও গ্রামের মানুষ পানীয় জল থেকে বঞ্চিত ছিলেন… প্রথমবার যখন সেখানে গিয়েছিলাম, তখন গ্রামবাসীদের বোতল থেকে জল খাওয়ার মত পরিস্থিতি ছিল না। ট্যাঙ্কারের মাধ্যমে জল দেওয়ার জন্য আধার কার্ড ব্যবহার করতে হত। লোকেরা তাদের মেয়েদের এই গ্রামে বিয়ে দিতে চাইত না। কিন্তু গতকাল সেটা বদলে গেছে। নয় মাসের পরিশ্রমের পর, আমাদের টিম সকল চ্যালেঞ্জকে হারিয়ে গ্রামে জল পরিষেবা পৌঁছে দিয়েছে। আজ, 'হর ঘর জল' স্কিমের মাধ্যমে, গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে সরাসরি পরিষ্কার, নিরাপদ জল সরবরাহ করার জন্য পাইপযুক্ত সংযোগ চালু করা হয়েছে"।
স্থানীয় বিজেপি নেতা বিপুল সিং, দলের জেলা সহ-সভাপতি, মিত্তাল সম্পর্কে অভিযোগ করে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে একটি চিঠি লিখেছিলেন। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সঙ্গে বলার সময়, সিং বলেছিলেন, “লাহুরিয়া গ্রামে যুগ যুগ ধরে জলের সমস্যা রয়েছে। 'হর ঘর জল যোজনা'-এর অধীনেই প্রধানমন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রী এখানে প্রকল্প চালু করেছিলেন এবং গ্রামে জল পৌঁছেছে। এই প্রকল্পটি অবশেষে বাস্তবায়িত হয়েছে এবং গ্রামে গ্রামে জল পৌঁছানোর দায়িত্ব জেলা শাসকের। কিন্তু উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সরকারের তরফে কাউকে আমন্ত্রণ জানাতে হত। এটাই প্রটোকল, সংস্কৃতি। স্থানীয় বিধায়ক, সাংসদ এবং অন্যদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি”।
মির্জাপুর জেলার নবনিযুক্ত ডিএম প্রিয়াঙ্কা নিরঞ্জন তড়িঘড়ি করে দায়িত্ব নিয়েছেন। এর পাশাপাশি দু-একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশ নেন। ডিএম দিব্যা মিত্তল জেলায় অনেক বড় পরিবর্তনমূলক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। অভিযোগের জন্য আলাদা ডেস্ক ছিল, কোন কাজই তিনি ফেলে রাখতে পছন্দ করতেন না। আর ঠিক সেই কারণেই কি বদলি উঠেছে প্রশ্ন।