'পদ্ধতিগত ত্রুটি'! কেরলে কর্তব্যরত অবস্থা মহিলা চিকিৎসক খুনের ঘটনায় পুলিশ প্রশাসনকে তীব্র ভর্ৎসনা করল কেরল হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার বিচারপতি দেবান রামচন্দ্রন এবং কাউসার এডাপ্পাগাথের ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যের পুলিশ প্রধানকে হেফাজতে থাকা আসামীদের হাসপাতালে চিকিৎসায় নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত প্রোটোকল তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন।
পাশাপাশি প্রোটোকল তৈরি না হওয়া পর্যন্ত, আদালত পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে যে আইনগতভাবে যতটা সম্ভব সমস্ত হাসপাতালগুলিতে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা যাতে ভবিষ্যতে এই ধরণের ঘটনা না ঘটে। রাজ্যের পুলিশ প্রধান অনিল কান্থ, এদিন আদালতে হাজির হয়ে বেঞ্চকে জানিয়েছেন, যে রাজ্য শিল্প সুরক্ষা বাহিনীর জওয়ানদের হাসপাতালে মোতায়েন করার। আগামী ২৩ মে আদালত বিষয়টি বিবেচনা করবে। চিকিৎসা চলাকালীন ছুরি হাতে ঝাঁপিয়ে একের পর এক কোপ, খুন মহিলা চিকিৎসক, রাজ্যজুড়ে চিকিৎসকদের বিক্ষোভ অব্যাহত। এই ঘটনায় কার্যত পুলিশ প্রশাসনের একাংশকে দুষেছেন চিকিৎসক সমাজের একাংশ।
মত্ত অবস্থায় চিকিৎসকের ওপর ধারালো ছুরি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েই একের পর এক কোপ। কর্তব্যরত অবস্থায় কেরলে এক মহিলা চিকিৎসকের মৃত্যুর ঘটনায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে। জানা গিয়েছে মত্ত অবস্থায় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে হাতাহাতিতে আহত হন বছর ৪২-এর সন্দীপ। তিনি পেশায় একজন শিক্ষক। হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য তাকে নিয়ে আসা হয়। সেই সময় ওই মহিলা চিকিৎসক একাই কর্তব্যরত ছিলেন। চিকিৎসা চলাকালীন হঠাৎ করেই ওই মহিলা চিকিৎসকের ওপর ছুরি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি। প্রাণ বাঁচাতে রোগীকে ধাক্কা মেরে দৌড়ে বাইরে বেরিয়ে এলেও শেষ রক্ষা হয় নি। এই ঘটনায় চার পুলিশকর্মীও গুরুতর আহত হয়েছেন। মহিলা ওই চিকিৎসকের নাম ডাঃ বন্দনা দাস।
মহিলা চিকিৎসক খুনের ঘটনায় শহরজুড়ে চিকিৎসকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান তারা। অন্যদিকে ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন এমন ঘটনাকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলেও উল্লেখ করেছেন। রাজ্য জুড়ে চিকিৎসকরা বিক্ষোভের হুঁশিয়ারি দিয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর বছর ৪২-এর সন্দীপ, পুয়াপল্লি চেরুকারকোনামের বাসিন্দা। তিনি পেশায় একজন শিক্ষক। মত্ত অবস্থায় প্রথমে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তার বিবাদ হয়। এ সময় তিনি আহতও হন, পরে পুলিশ তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। পায়ের ক্ষতের চিকিৎসার সময় হঠাৎ করেই মহিলা চিকিৎসকের ওপর ওই ব্যক্তি কাঁচি এবং একটি ছুরি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
হামলার সময় ঘরে একাই ছিলেন মহিলা চিকিৎসক। পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, হামলার সময় রোগী ও চিকিৎসক ঘরে একাই ছিলেন। রোগী তাকে আক্রমণ করার সঙ্গে সঙ্গে তিনি তার জীবন বাঁচাতে বাইরে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশ কর্মীরা তাকে ধরার চেষ্টা করলে সে তাদেরও আক্রমণ করে। এ ঘটনায় চার পুলিশ কর্মী ও আহত হয়েছেন। হামলার পরে, পুলিশ ওই মহিলা চিকিৎসককে তিরুবনন্তপুরমের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানেই মৃত্যু হয় ওই মহিলা চিকিৎসকের।
কেরালায় এক মহিলা চিকিৎসককে খুনের ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা রুজু করেছে হাইকোর্ট। আদালত রাজ্যের পুলিশ প্রধানকে ১১ মে বৃহস্পতিবার এই বিষয়ে আদালতে একটি রিপোর্ট দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছে। এই ঘটনায় আদালত কেরল সরকার ও পুলিশকে কড়া সমালোচনা করেছে। বিচারপতি দেবন রামচন্দ্রন এবং বিচারপতি কাউসার ইদাপ্পাগাথের ডিভিশন বেঞ্চ বলেছে, ‘চিকিৎসকদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে না পারলে হাসপাতাল চালু রাখার দরকার নেই’।