তৃতীয় লিঙ্গের সুমনা প্রামানিক লোক আদালতের বিচারকের আসনে বসতে চলেছেন, জাতীয় মানবাধিকার সংগঠনের চিফ পেট্রন পদ পেয়েছেন রূপান্তরকামী মেঘ সায়ন্তন ঘোষ। ৩৭৭ ধারা খারিজ করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে সমকাম অপরাধ নয়, তবু যেন কাটছে না আঁধার। আইনি সিলমোহর মিললেও সমাজিক সিলমোহর যে এখনও বিশ বাঁও জলে তা স্পষ্ট করে দিয়েছে সাম্প্রতিক এক ঘটনা। কার্যত জোর করে যৌন পছন্দ বদলে ফেলার চেষ্টায় বেআইনি কার্যকলাপের নজির মিলেছে খোদ রাজধানীতেই।
সমকামীদের ক্রমাগত ইলেক্ট্রিক শক থেরাপি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে দিল্লির এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। সংবাদ সংস্থার এক রিপোর্ট অনুযায়ী, ওই চিকিৎসক 'জেনেটিক মেন্টাল ডিসঅর্ডার'-এর কারণেই এমন কার্যকলাপ চালিয়ে যেতেন বলে মনে করা হচ্ছে। অভিযুক্তের ওই চিকিৎসকের নাম পি কে গুপ্তা। জানা গিয়েছে, এমন অদ্ভুত চিকিৎসা পদ্ধতির অবলম্বন করায় বহুদিন আগেই তাঁকে সাসপেন্ড করে দেয় দিল্লি মেডিক্যাল কাউন্সিল (DMC)। এরপরও এমন ক্রিয়াকলাপ চালিয়ে যেতেন তিনি। সম্প্রতি দিল্লি আদালতে ডেকে পাঠানো হয়েছে তাঁকে।
ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে খোদ DMC। অভিযোগে জানানো হয়, সমকামীদের 'সারিয়ে তুলতে' হরমোনাল কিছু ট্রিটমেন্ট এবং শক থেরাপি দিতেন ওই চিকিৎসক। অভিযোগ অনুযায়ী, ২০১৬-তে তাঁকে সাসপেন্ড করে DMC, তবে এরপরও ডাক্তার হিসেবেই নিজের পরিচয় অব্যাহত রাখতেন গুপ্তা।
আরও পড়ুন: লোক আদালতের বিচারকের পদে বসে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন রূপান্তরকামীর
এ বিষয়ে মেট্রোপলিটন জেলা শাসক অভিলাষ মালহোত্রা জানিয়েছেন, অভিযোগ থেকে জানা গিয়েছে, DMC থেকে সাসপেন্ড হওয়া সত্ত্বেও ডাঃ গুপ্ত চিকিৎসক হিসাবে দিল্লিতে এই ভয়ানক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছিলেন। প্রসঙ্গত, তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি মেডিক্যাল কাউন্সিলের বিধিনিষেধকে অস্বীকার করছেন। এর শাস্তি স্বরূপ এক বছর পর্যন্ত জেলও হতে পারে তাঁর।
কোর্ট জানিয়েছে, চিকিৎসকরা 'কনভার্সন থেরাপি' হিসাবে যে প্রক্রিয়া চালিয়ে থাকেন, তা চিকিৎসা বিজ্ঞানে বা আইনিভাবে স্বীকৃত হয় না। কনভার্সন থেরাপি একটি অত্যন্ত অযৌক্তিক বিষয়। কিন্তু কী এই কনভার্সন থেরাপি? এই প্রক্রিয়ায় সমকামী বা উভকামী ব্যক্তিদের স্পিরিচুয়াল, মেডিক্যাল এবং সাইকোলজিক্যাল বেশ কিছু প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় এবং ওই ব্যক্তিকে কার্যত জোর করেই বিসমকামী জীবনযাপনে অভ্যস্ত করে তোলা হয়।
মনে রাখতে হবে যে, যৌন পছন্দ কখনও নির্দিষ্ট হতে পারে না, বা তা কারও ইচ্ছেমতোও নির্ধারিত হয় না। পাশাপাশি ৩৭৭ ধারাও বর্তমানে খারিজ করে ঘোষণা করা হয়েছে, ভারতীয় আইন অনুযায়ী সমকাম কখনই অপরাধ নয়। কাজেই সমকাম বা রূপান্তরকামীদের নিয়ে কপালে ভাঁজও আর কাম্য নয়।