এ রাজ্য়ে চিকিৎসকের অভাব রয়েছে বলে বিধানসভায় জানালেন মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। ডাক্তারি পাশ করার পর সরকারি হাসপাতালে তিন বছর চিকিৎসা করা দূরে থাক কোনও গ্রামে যেতে চান না অধিকাংশ চিকিৎসক। কেন্দ্রীয় সরকার ও ইন্ডিয়ান মেডিক্য়াল কাউন্সিলের ভ্রান্ত নীতি এর জন্য় দায়ী বলে অভিযোগ করলেন মুখ্য়মন্ত্রী। পাশাপাশি তিনি জানিয়ে দেন, বামেদের আমল থেকে কয়েকগুণ বাজেট বরাদ্দ বেড়ছে রাজ্য়ের স্বাস্থ্য় ক্ষেত্রে।
শুক্রবার বিধানসভায় সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের সংখ্য়া নিয়ে জানতে চেয়েছিলেন তৃণমূলের বিধায়ক সমীর কুমার জানা। জবাব দিচ্ছিলেন স্বাস্থ্য় দফতরের প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। সেই সময়ে বাম বিধায়ক সমর হাজরা বলতে থাকেন সুপার স্পেশ্য়ালিটি হাসপাতালের শুধু তকমাই রয়েছে। এমনকি প্রাথমিক স্বাস্থ্য় কেন্দ্রগুলোতে কিচ্ছু হয় না। এই অতিরিক্ত প্রশ্ন শুনে ক্ষুব্ধ মুখ্য়মন্ত্রী নিজেই প্রশ্নের জবাব দিতে শুরু করেন। তিনি বলেন, “বামফ্রন্ট সরকারের ৩৪ বছরে কত বাজেট ছিল! ২০১০-১১তে বাজেট ছিল ৮৯৯ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮তে বেড়ে হয়েছে ৫৫৩০ কোটি টাকা। রাজ্য়ে স্বাস্থ্য় দফতরকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। ২৮ হাজার বেড বাড়ানো হয়েছে। ২৯ টা মেডিক্য়াল কলেজ আছে। ৪৩ টা মাল্টি সুপার হাসপাতাল। ৩০৭ এসএনসিইউ নতুন করে তৈরি হয়েছে। আপনাদের সময়ে ছিল মাত্র ৬টা।’’
রাজ্য় যে চিকিৎসক নিয়ে সংকটে ভুগছে তা মুখ্য়মন্ত্রীর এদিনের বক্তব্য়ে পরিষ্কার। মুখ্য়মন্ত্রী বলেন, “ডাক্তার তৈরি করতে হয়। চিকিৎসা কি ডাক্তার ছাড়া আর কেউ করতে পারে? চিকিৎসকের অভাব আছে। এটা মাথায় রাখবেন। আড়াই হাজার চিকিৎসক নেওয়া হবে বলে বিজ্ঞপ্তি দিলে ২ হাজার চিকিৎসক আসেন ইন্টারভিউ দিতে। কিন্তু কাজে যোগ দেন মাত্র ১ হাজার- দেড় হাজার। চিকিৎসক পাওয়া যাচ্ছে না। এটা বড় ক্রাইসিস।’’ কেন রাজ্য়ে চিকিৎসকের এই সংকট তীব্র হয়েছে? তারও কারণ বলেছেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। তাঁর দাবি, “এই সঙ্কটের জন্য় কেন্দ্রীয় সরকারে ভুল নীতি দায়ী। একইসঙ্গে দায়ী ইন্ডিয়ান মেডিক্য়াল কাউন্সিলের ভুল নীতিও।’’ এব্যাপারে নিট পরীক্ষাকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘‘আঞ্চলিক ছেলেরা ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পাচ্ছে না। তারা বঞ্চিত হচ্ছে।’’ তিনি আরও বলেন, “একজন ডাক্তার তৈরি করতে ৩০ লক্ষ টাকা খরচ হয়। সেই ডাক্তারদের আমরা বলছি তিন বছর এখানে থাকতে। কখনও কখনও তারা আদালতের নির্দেশ নিয়ে বাইরে চলে যাচ্ছে। ২ বছর কাজ করে বাইরে চলে যাচ্ছে। বেসরকারি হাসপাতালে চলে যাচ্ছে। যে ডাক্তার তৈরি হচ্ছে তারা গ্রামে যেতে চায় না। তারা সার্ভিস দিতে চায় না। অনেক কম ডাক্তার আছে যারা গ্রামে যেতে চায়। শুধু বিল্ডিং তৈরি করলেই হয় না। পরিকাঠামো, ল্য়াবেরটরি করতে হয়। ডাক্তার, নার্স আসবে কোথা থেকে সেটা ভাবতে হয়।’’ মুখ্য়মন্ত্রীর আবেদন, “আপনাদের ছেলেমেয়েদের ডাক্তার তৈরি করুন।’’
বিরোধী বিধায়করা হৈ হট্টগোল শুরু করলে ক্ষিপ্ত মুখ্য়মন্ত্রী বলেন, ’’দাঁড়ান বেশি কথা বলবেন না। আপনাকে জানতে হবে। কেন আপনার সরকার করেনি। এটা রাজনৈতিক যুদ্ধ করার জায়গা নয়।’’ তাঁর দাবি, এখানে বিহার, ঝাড়খন্ড, ওড়িশা, নেপাল, বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসা করাতে আসেন রোগীরা।
মুখ্য়মন্ত্রী এদিন অন্য় এক প্রসঙ্গে দাবি করেন, ’’সারা দেশে ১২ হাজার কৃষক আত্মহত্য়া করেছেন। এরাজ্য়ে একজন কৃষকও আত্মহত্য়া করেননি।’’ যদিও বিরোধী বিধায়করা এই দাবি মানতে নারাজ।
মমতার অভিযোগ পশ্চিমবঙ্গ পুলিশকে প্রয়োজনীয় তথ্য দেয় না কেন্দ্র। তার ফলে অপরাধীদের ধরা যায় না। আধারকার্ড করেও যে উগ্রপন্থী আটকানো যাচ্ছে না, তার উদাহরণ দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কয়েকদিন আগে দুই চিনা নাগরিক নকল আধারকার্ড দেখিয়ে হোটেল বুকিং করে শিলিগুড়িতে। তারা বিমান যাত্রাও করেছিল ওই আধার কার্ড দেখিয়েই।