সুস্থতার পথে দেশ। কমেছে সংক্রমণ, নিউনর্মালের পথে আবারও খুলেছে অফিস, আদালত, স্কুল। শিথিল করা হয়েছে বিধিনিষেধ। ওমিক্রন প্রথম গত বছর ডিসেম্বরে প্রথম ভারতে দেখা দেয়। মাত্র দু সপ্তাহের মধ্যেই ওমিক্রন তাঁর ধ্বংসলীলা চালিয়েছে। প্রচণ্ড সংক্রামক হলেও ওমিক্রনের ভয়াবহতা বা মারণ ক্ষমতা ছিল অনেকটাই কম। ওমিক্রনে আক্রান্তের মধ্যে অনেকেই খুব বেশি ভোগেননি। ফলে সাধারণ জনমানসে একটা ধারণা হয়েছিল যে কোভিডের ভোগান্তি কম হওয়ায় শরীরেও হয়তো খুব বেশি ক্ষতি করেনি ভাইরাস। কিন্তু এই ধারণাই পাল্টে দিয়েছে নতুন গবেষণার তথ্য। গবেষণায় উঠে এসেছে মৃদু উপসর্গের কোভিডেও অল্প হলেও ক্ষতি হয়েছে আক্রান্তের মস্তিষ্কে। ফলে এখন শুধু ফুসফুস নয়। ডেল্টা-ওমিক্রন মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে আপনার স্নায়ুতন্ত্রকেও।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির তরফে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। কোভিডের কারণে মস্তিষ্কে কতটা প্রভাব পড়ছে মূলত তা নিয়েই গবেষণা করা হয়েছিল। কোভিড সংক্রমণের আগে এবং পরে দুই সময়েই আক্রান্তদের মস্তিষ্ক স্ক্যান করা হয়েছিল। সেই তথ্যের ভিত্তিতেই হয়েছে গবেষণা। যাঁদের উপর গবেষণা করা হয়েছিল তাঁদের অধিকাংশই মৃদু উপসর্গের কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলেন। সোমবার নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে গবেষণাপত্রটি। গবেষকরা জানিয়েছেন, গোটা গবেষণায় দেখা গিয়েছে কোভিডের ফলে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এবং অনেক ক্ষেত্রে তা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে বহুগুনে।
গবেষকরা জানাচ্ছেন, অন্তত এক বছর বয়স বাড়লে যে ধরনের পরিবর্তন হয় মস্তিষ্কের, কোভিড রোগীদের ক্ষেত্রে প্রায় ততটাই পরিবর্তন হয়েছে। গ্রে ম্যাটারের (grey matter) ক্ষেত্রে এবং মস্তিষ্কের কোষেরও (tissue) ক্ষতি হয়েছে বলে ধরা পড়েছে গবেষণায়। গন্ধ চেনার ক্ষেত্রে সাহায্য করে মস্তিষ্কের এমন অংশের ক্ষতি ধরা পড়েছে। করোনার ফলে মানুষের মস্তিষ্কে বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে বলে সতর্ক করলেন বিজ্ঞানীরা। একই সঙ্গে বিভিন্ন স্নায়বিক রোগের সম্ভাবনাও অনেকটা বেড়ে যায় বলে প্রমাণ মিলেছে। গবেষকদের দাবি, সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, কিছু কিছু কোভিড রোগীর শ্বাসযন্ত্রের গুরুতর সমস্যা ধরাই পড়েনি। উলটে বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে নিউরোলজিক্যাল ডিজঅর্ডার।
গবেষকদের মতে, মহামারীর প্রভাবে অনেক সময়ই মানুষের স্নায়ুতন্ত্র, মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইতিহাসেও এই উদাহরণ রয়েছে। জ্যান্ডির দাবি, ১৯১৮ সালে স্প্যানিশ ফ্লু’র দাপট ছিল। তার পর ১৯২০-৩০ সালে ‘এনসেফেলাইটিস লেথারজিকা’ মহামারীর আকার নেয়। সেই সময় এই সব রোগে আক্রান্ত যারা হয়েছিল, তাদের ক্ষেত্রেও অনেকেরই মস্তিষ্কের বিকার ঘটতে দেখা গিয়েছিল। আবার করোনার ক্ষেত্রেও সে রকমই হচ্ছে। ফুসফুসে সংক্রমণ নিয়ে ভরতি হওয়া রোগী দ্রুত ‘অ্যাকিউট ডিসেমিনেটেড এনসেফালোমেলিটিস’-এর শিকার হচ্ছেন।
এটি ব্রেন ড্যামেজ (brain damage) বলেই জানাচ্ছেন গবেষকরা। অনেক ক্ষেত্রেই ওই রোগীদের মানসিক ক্ষমতা (mental ability) এবং জটিল কাজ (complex task) করার ক্ষেত্রেও সমস্যা লক্ষ্য করা গিয়েছে বলে জানিয়েছেন গবেষক দলের প্রধান Gwenaelle Douaud.যদিও এই ক্ষতি মেরামত হয়ে যাবে বলেই আশা করছেন তাঁরা। যদিও মৃদু উপসর্গের রোগীদের ক্ষেত্রেই এই সমস্যা হওয়ায়, বিষয়টি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন গবেষকরা।
গবেষণার জন্য ভরসা করা হয়েছে United Kingdom Biobank-এর তথ্যের উপর। কোভিড শুরুর আগে থেকেই ব্রিটেনের একাধিক বাসিন্দার মস্তিষ্কের এমআরআই-এর (mri) তথ্য ছিল। ৫১ থেকে ৮১ বছর বয়সী ৪০১ জনের উপর গবেষণা চলে। যাঁদের কোভিড হয়েছিল। তাঁদের ফের আরেকবার ব্রেন স্ক্যান (brain scan) করা হয়। সংক্রমণের অন্তত পাঁচ মাস পর এই স্ক্যান হয়েছিল। এদের সঙ্গে তুলনা করে দেখা হয় ৩৮৪ জনের রিপোর্ট, যাঁদের কোভিড হয়নি। আরও কিছু কিছু বিষয় খতিয়ে দেখে গবেষণা করেন তাঁরা।