দু'দিনে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউজের বাইরে শান্তিপূর্ণ মিছিলের ওপর কাঁদানে গ্যাস এবং রবারের গুলি ছুড়ল পুলিশ। মার্কিন সময় সোমবার রাতে (ভারতে মঙ্গলবার সকাল) হোয়াইট হাউজের বাইরে বড়সড় জনসমাবেশ হয় গত সপ্তাহে পুলিশি হেফাজতে জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর প্রতিবাদে। লাফায়েট স্কোয়ারের এই মিছিলের ওপর পুলিশের অভিযান শুরু হয় সন্ধ্যা সাতটার কার্ফুর ঠিক আগেই।
সেই একই সময় হোয়াইট হাউজের ভেতরে রোজ গার্ডেনে সংক্ষিপ্ত ভাষণ দিচ্ছিলেন মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প, যাতে তিনি বলেন যে যেসব রাজ্যের গভর্নররা হিংসা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছেন না, সেসব রাজ্যে সেনাবাহিনী পাঠানো হবে। এরপর হোয়াইট হাউজের সামনে থেকে মিছিলকারীদের জোর করে সরিয়ে দেওয়া হলে হোয়াইট হাউজ থেকে হেঁটে বেরিয়ে আসেন ট্রাম্প। গন্তব্য, সেন্ট জন'স এপিস্কোপাল চার্চ, যেখানে মার্কিন সময় রবিবার সন্ধ্যায় আগুন লাগিয়ে দেয় কিছু বিক্ষোভকারী। ওই গির্জার সামনে দাঁড়িয়ে বেশ কিছু বিতর্কিত ছবিও তোলান ট্রাম্প।
গত এক সপ্তাহ ধরে দাবানলের মতো বিক্ষোভ ছড়িয়েছে আমেরিকার শহর থেকে শহরে, এমনকি ইউরোপের কিছু দেশেও। প্রতিবাদের কেন্দ্রে প্রয়াত ৪৬ বছর বয়সী কৃষ্ণাঙ্গ মার্কিন নাগরিক জর্জ ফ্লয়েড, যিনি ২৫ মে মিনেয়াপোলিস শহরে চার পুলিশ আধিকারিকের হাতে গ্রেফতার হওয়ার সময় মারা যান। পুলিশ ডাকেন এক মুদির দোকানের মালিক, যিনি সন্দেহ করেছিলেন যে নকল ২০ ডলারের নোট দিয়ে জিনিস কিনেছেন ফ্লয়েড।
আরও পড়ুন: ট্রাম্প সম্পর্কে নীরব জুকারবার্গ, প্রতিবাদে সরব ফেসবুকের কর্তাব্যক্তিরা
দোকানের মালিকের ডাকে সাড়া দিয়ে পুলিশ এসে ফ্লয়েডকে তাঁর গাড়ি থেকে গ্রেফতার করে। রাস্তার ধারে নিয়ে গিয়ে ফুটপাথের কিনারায় বসতে বলা হয় তাঁকে। কয়েক মিনিট পর পুলিশের গাড়ির দিকে হেঁটে যাওয়ার সময় আচমকা পড়ে যান ফ্লয়েড, এমনটাই জানা গিয়েছে। তারপরেই তাঁকে মাটিতে চেপে ধরে তাঁর গলার ওপর হাঁটু গেড়ে বসে এক পুলিশকর্মী। "আমি নিশ্বাস নিতে পারছি না," একথা বলে বারবার তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ জানাতে থাকেন ফ্লয়েড, এবং জ্ঞান হারান অল্পক্ষণ পরেই। তাঁর পড়ে যাওয়ার পর থেকে আন্দাজ ন'মিনিটের মধ্যে মৃত্যু হয় জর্জ ফ্লয়েডের।
পুলিশ দাবি করে যে ফ্লয়েড গ্রেফতারিতে "বাধা" দিয়েছিলেন, কিন্তু ঘটনার ভিডিও ফুটেজ অন্য কথা বলছে। এক বেসরকারি সংস্থা দ্বারা প্রকাশিত সাম্প্রতিকতম ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বলা হয়েছে, "যান্ত্রিক উপায়ে শ্বাসরোধের" ফলে মৃত্যু হয় ফ্লয়েডের।
Police in Washington, D.C. used tear gas and rubber bullets on peaceful protesters to clear them away from St. John's church, which suffered a small fire Sunday night, near the White House.
President Trump then walked to the church for a photo op. https://t.co/QrdVmtcfUA pic.twitter.com/BLjECrOYCM
— NPR Politics (@nprpolitics) June 1, 2020
সোমবার সন্ধ্যায় হোয়াইট হাউজে দাঁড়িয়ে ট্রাম্প ফ্লয়েডের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন যে তাঁর পরিবার যাতে বিচার পায়, তা নিশ্চিত করবে দেশের সরকার, তবে একথাও যোগ করেন যে "শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদীরা উন্মত্ত জনতার নীচে চাপা পড়ে যাবে", এমনটা হতে দিতে পারে না আমেরিকা।
আরও পড়ুন: আন্টিফা- যে গোষ্ঠীকে ট্রাম্প সন্ত্রাসবাদী বলে ঘোষণা করতে চান
রাষ্ট্রপতি বলেন, "গত কয়েকদিনে আমাদের দেশকে গ্রাস করেছে কিছু পেশাদার নৈরাজ্যবাদী, হিংস্র জনতা, অগ্নি সংযোগকারী, লুটেরা, অপরাধী, দাঙ্গাবাজ, আন্টিফা, এবং অন্যান্য। একাধিক রাজ্য এবং স্থানীয় প্রশাসন তাদের নিজস্ব এলাকা নিরাপদ রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে... এগুলি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের চিহ্ন নয়। এগুলি অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসের চিহ্ন। নিরপরাধ মানুষের প্রাণহানি এবং নির্দোষের রক্তপাত হলো মানবতা-বিরোধী কুকর্ম, ঈশ্বরের বিরুদ্ধে অপরাধ।"
ট্রাম্প আরও বলেন, "সেই কারণেই রাষ্ট্রপতি হিসেবে আমি অবিলম্বে পদক্ষেপ নিচ্ছি যাতে হিংসা বন্ধ করা যায়, এবং আমেরিকায় নিরাপত্তা ও সুরক্ষা ফিরিয়ে আনা যায়। সমস্ত যুক্তরাষ্ট্রীয় সম্পদ - সামরিক এবং অসামরিক - ব্যবহার করে আমি দাঙ্গা, লুঠতরাজ, অগ্নিকান্ড বন্ধ করতে চাই, এবং আইনের পথে চলা মার্কিন নাগরিকদের অধিকার বজায় রাখতে চাই।" এরপরই তিনি যোগ করেন যে "কোনও শহর বা রাজ্য যদি তাদের নাগরিকদের জীবন এবং সম্পত্তি সুরক্ষিত রাখার উদ্দেশ্যে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে অস্বীকার করে", তবে তিনি "মার্কিন সেনাবাহিনীকে কাজে লাগিয়ে দ্রুত সমস্যার সমাধান" করে দেবেন।
টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ট্রাম্পের এই ভাষণের সময় নেপথ্যে প্রায়শই বিস্ফোরণের আওয়াজ শোনা যায় বলে খবর।
এরপর তাঁর উচ্চপদস্থ সহকারীদের নিয়ে সেন্ট জন'স গির্জার দিকে হেঁটে যান ট্রাম্প। গির্জার বাইরে দাঁড়িয়ে হাতে একটি বাইবেল নিয়ে তিনি বলেন, "আমাদের দেশ মহান। দুনিয়ার সবচেয়ে মহান দেশ।" এর বিপরীতে রয়েছেন সেই ট্রাম্প, যিনি রবিবারের প্রতিবাদ চলাকালীন হোয়াইট হাউজের নিজস্ব গোপন বাঙ্কারে লুকিয়েছিলেন বলে খবরে প্রকাশ।
Tonight the President of the United States used the American military to shoot peaceful protestors with rubber bullets & tear gas them.
For a photo op.
This is a horrifying use of presidential power against our own citizens, & has no place anywhere, let alone in America. Vote.
— Hillary Clinton (@HillaryClinton) June 2, 2020
সোমবার তিনিই প্রতিবাদী মিছিলের ওপর হামলা চালানোর নির্দেশ দেন, এই অভিযোগ ওঠার পর সমালোচিত হয়েছেন ট্রাম্প। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন সেক্রেটারি অফ স্টেট হিলারি ক্লিনটন দেশের মানুষের কাছে আসন্ন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দেওয়ার আবেদন জানিয়ে বলেন যে "আমাদের নিজেদের লোকের ওপর রাষ্ট্রশক্তির ভয়াবহ প্রয়োগ" ঘটছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন