সংসদে পাস হয়েছে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল। কিন্তু, নয়া আইন ঘিরেই আপাতত উত্তাল দেশ। ধর্মের ভিত্তিতে সংশোধিত নাগিকত্ব আইন তৈরির অভিযোগ করছেন বিক্ষোভকারীরা। পাল্টা সিএএ সমর্থনে প্রচারে গেরুয়া শিবির। কিন্তু, অস্বস্তির কাঁটা থেকেই যাচ্ছে। ধর্মের উল্লেখ থাকায় সিএএ-কে মোদী-শাহ জুটির মেরুকরণ রাজনীতির হাতিয়ার বলে দাবি করছে বিরোধী শিবির। এই পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য শাসক শিবিরের মানসিকতাকেই দায়ি করছেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ সুভাষ কাশ্যপ।
বিলের ধর্মের উল্লেখ থাকলে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। তাই ওই বিলে নির্দিষ্ট কোনও ধর্মের নাম উল্লেখের বদলে 'নিপীড়িত সংখ্যালঘুদের' কথা বলা থাকলেই সম্পূর্ণ বিষয়টি স্পষ্ট করা যেত বলে মনে করেন কাশ্যপ। দু'বছর আগেই নাগরিকত্ব সংশোধন বিল বিষয়ক যৌথ সংসদীয় কমিটিকে সতর্ক করে নিজের মতামত জানিয়েছিলেন সুভাস কাশ্যপ।
সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও লোকসভার প্রাক্তন সচিব কাশ্যপের কথায়, 'প্রতিবেশী তিন রাষ্ট্রের সংখ্যালঘু হিসাবে ৬টি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষের কথা বলা হয়েছে সিএএ-তে। সেই সব ধর্মের উল্লেখের কোনও প্রয়োজনই ছিল না। কেবল নিপীড়িত সংখ্যালঘু শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করলেই ওই আইনের উদ্দেশ্য সাধন সম্ভব ছিল।'
ক্যাব নিয়ে যৌথ সংসদীয় কমিটির রিপোর্ট চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রকাশ করা হয়। সেখানে কাশ্যপের দেওয়া পরামর্শের উল্লেখ থাকলেও তাঁর নাম ব্যবহার করা হয়নি। মানা হয়নি জেপিসি-কে দেওয়া তাঁর সতর্কতা। কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রক জানিয়েছিল, কেবল 'নিপীড়িত সংখ্যালঘু' ব্যবহার করলে পরবর্তীক্ষেত্রে বহু সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। বিলের প্রকৃত উদ্দেশ্য ব্যহত হবে।
আরও পড়ুন: এনআরসি + সিএএ = নাগরিকত্ব হলে আপনি কোথায় দাঁড়িয়ে?
সপ্তম, অষ্টম ও নবম লোকসভার সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব সামলেছেন সুভাষ কাশ্যপ। তিনি মনে করেন, সংসদের উভয় কক্ষে ক্যাব পাস হয়েছ। রাষ্ট্রপতিও তাতে সিলমোহর দিয়েছেন। বিলটি আইনে পরিণত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ওই আইনে বদলের দু'টি উপায় রয়েছে। প্রথমত- আদালতের নির্দেশ, দ্বিতীয়ত- সংসদে সংবিধান সংশোধন।
সিএএ প্রতিবাদে দেশজুড়ে বিক্ষোভ চলছে। ছড়িয়ে পড়ছে হিংসা, প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। রাজধানী থেকে উত্তরপ্রদেশ, জারি করতে হচ্ছে ১৪৪ ধারা। বন্ধ রাখতে হচ্ছে ইন্টারনেট পরিষেবা। এই পরিস্থিতির তীব্র নিন্দা করেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ সুভাষ কাশ্যপ। তাঁর মতে, 'সংসদে বিল পাস হয়েছে। সংসদের প্রাধান্য় সংসদীয় গণতন্ত্রে মানতেই হহবে। আন্দোলন চলতে পারে, কিন্তু হিংসাশ্রয়ী আন্দোলনে কোনও লাভ নেই। আইনে বদল আনতে হলে তারও নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে।'
আরও পড়ুন: নয়া নাগরিকত্ব আইন ১১ মাস আগের ক্যাব থেকে কোথায় আলাদা?
ষষ্ঠদশ লোকসভায় সংশোধিত নাগরিত্ব বিল বিষয়ক যৌথ সংসদীয় কমিটির সদস্য ছিলেন আসাম থেকে নির্বাচিত প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ সুস্মীতা দেব। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে তিনি জানান, 'কাশ্যপের পরামর্শ মানেনি বিজেপি। এই আইনকে বিজেপি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাদের রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করতে চেয়েছে।'
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে ক্যাব লোকসভায় পেশ করা হয়েছিল। তখন বিলটি যৌথ সংসদীয় কমিটির কাছে পাঠানো হয়। ২০১৯-এর জানুয়ারিতে জেপিসি ক্যাব নিয়ে তাদের রিপোর্ট জমা দেয়। সেই মাসে বিলটি লোকসভায় পাস করিয়ে দেন মোদী সরকার। কিন্তু, রাজ্যসভায় বিলটি আটকে ছিল। এরই মধ্যে ষষ্ঠদশ লোকসভার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে ক্যাব বিলটি তামাদি হয়ে যায়। সপ্তদশ লোকসভায় বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ফেরে মোদী সরকার। চলতি মাসেই সংসদের শাতকালীন অধিবেশনে বিলটি সংসদের উভয় বয় কক্ষে পাস হয়। পরে ক্যাব আইনে পরিণত হয়।
Read the full story in English