মরশুমের শুরুটা কিন্তু ভালোই হয়েছিল। কিন্তু শেষে এসে বর্ষা বেশ হতাশই করল এ বছর। গত একমাসে সারা দেশ জুড়েই দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বৃষ্টিপাত একেবারে ঘটায়নি বললেই চলে। আবহাওয়া দফতরের হিসেব বলছে এটি গত ১৭ বছরের মধ্যে শুষ্কতম বর্ষাকাল।
সেপ্টেম্বর ১৯ পর্যন্ত নেওয়া রেকর্ড বলছে জুন মাস থেকে সারা দেশের গড় বৃষ্টিপাতের মাত্রা ৭৫০.৫ মিমি। স্বাভাবিকের থেকে প্রায় ১০ শতাংশ কম। জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারা দেশের স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের গড় পরিমাণ ৮৩৪.৫ মিমি। বৃষ্টিপাতের এই ঘাটতি হয়েছে শুধুমাত্র সেপ্টেম্বর মাসেই। জুন জুলাই আগস্টের বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল স্বাভাবিক গড় বৃষ্টিপাতের কাছাকাছিই। চলতি মাসের বাকি দশ দিনে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হলে নতুন রেকর্ড তৈরি হবে। বিগত ১৭ বছরের মধ্যে এটিই হবে শুষ্কতম বর্ষাকাল।
আরও পড়ুন, বন্যার পর শুখা, ভোগান্তির শেষ নেই কেরালার
আশ্চর্যের ব্যাপার, কেরালাতেও একই ঘটনা। জুন জুলাই এবং আগস্ট মাসে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ স্বাভাবিক থাকলেও সেপ্টেম্বরের বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুবই কম। স্বাভাবিকের চেয়ে ৯৩.৫ শতাংশ কম। বন্যা পরবর্তী কেরালা রীতিমতো ভুগছে বৃষ্টিহীনতায়। সেপ্টেম্বরে কেরালায় স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের গড় ১৩৫.৯ মিমি। অথচ ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সেখানে গড়ে ৮.৮মিমি বৃষ্টি হয়েছে।
ভারতের রাজ্য এবং অঙ্গরাজ্য মিলিয়ে ৩৬টি আবহাওয়া দফতর রয়েছে। এদের মধ্যে ১২টিতেই বৃষ্টিপাতের ঘাটতি নথিভুক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছে গুজরাত, বিহার, ঝাড়খণ্ড, রাজস্থানের পশ্চিমাংশ, কর্ণাটকের উত্তরাংশ, হরিয়ানা এবং গোটা উত্তরপূর্ব ভারত। যদিও বৃষ্টিপাতের ঘাটতি, দেশের চাষ বাসের কাজে খুব একটা ক্ষতি করতে পারেনি। বিহার, ঝারখন্ড এবং উত্তর পূর্ব ভারত ছাড়া অধিকাংশ রাজ্যেই জুন-জুলাই মাসে খারিফ ফসল বোনার কাজ সম্পন্ন হয়ে যায়। গুজরাত এবং কর্ণাটকের কিছু অংশে সেই সময়ে বৃষ্টিপাতের সামান্য ঘাটতি ছিল, তাই কিছু ক্ষেত্রে ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে ২০১৫ সালের পর থেকে খরা পরিস্থিতি তৈরি হয়নি এখনও।
গুজরাতে তুলো চাষ সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায় আছেন কৃষিবিশেষজ্ঞরা। সাধারণত এই সময়টা হচ্ছে বীজ ফেটে তুলো বেরোনোর সময়। সব মিলিয়ে খারিফ শস্যে গত দু'বছরের মতো ভালো ফলন হওয়ার সম্ভাবনা যেমন নেই, আবার ২০১৪-১৫ এর মতো ভয়াবহ পরিস্থিতিও নয়। অন্যদিকে সয়াবিনের ফলন গত বছরের তুলনায় এ বছর ভালো হয়েছে।
অন্যদিকে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, ঝাড়খণ্ড এবং পশ্চিমবঙ্গের গাঙ্গেয় ভূমি জুড়ে বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দফতর। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বঙ্গোপসাগরের তৈরি হওয়া নিম্নচাপের প্রভাবে ২১ থেকে ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে মধ্য উপদ্বীপ অঞ্চল এবং উত্তর পশ্চিম ভারতে বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে।