মণিপুরে দুই মহিলাকে বিবস্ত্র প্রকাশ্যে ঘোরানোর ঘটনার তদন্তে নেমে চার অভিযুক্তকে ইতিমধ্যেই হেফাজতে নিয়েছে সিবিআই। চার অভিযুক্তকে সোমবার মণিপুরের থৌবালের বিশেষ আদালতে তোলা হয়। সিবিআই তাদের ২ অগাস্ট পর্যন্ত চার অভিযুক্তকে তাদের হেফাজতে নেয়।
প্রায় ৩ মাসের বেশি সময় জাতিগত হিংসায় জ্বলছে মণিপুর। মেইতি এবং কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষে প্রায় ১৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মাঝেই দুই মহিলাকে গণধর্ষণ ও তাঁদের বিবস্ত্র করে ঘোরানোর ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। ভিডিও কাণ্ডে দেশ জুড়ে নিন্দার ঝড় বয়ে যায়। গত ৪ মে মণিপুরের কাংপোকপি জেলায় ভিডিওটি রেকর্ড করা হয়।
বিষয়টি নিয়ে সরব হন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। থৌবালের বিশেষ আদালতে চার অভিযুক্তের শুনানি চলাকালীন আদালতের আদেশের বিশদ বিবরণ দেখায় যে কীভাবে চার অভিযুক্ত যৌন নিপীড়নের ঘটনায় যুক্ত হয়েছিলেন। আদালত অভিযুক্তদের বিচার বিভাগীয় হেফাজতে চেয়ে পুলিশের একটি আবেদনের শুনানি করছিল। সেই সময় আদালতের আদেশে সেদিনের ঘটনা এবং প্রসিকিউশনের অভিযোগে বিভিন্ন অভিযুক্তের ভূমিকার বিবরণ রয়েছে। এতে বলা হয়েছে যে ৪ মে বিকাল তিনটে নাগাদ "অজানা দুর্বৃত্তরা কুকি গ্রামে প্রবেশ করে। বাড়ি ঘড় ভাংচুর করে। সংখ্যাটা প্রায় ৯০০-১০০০।
এর মধ্যেই তাদের হত্যা করা হবে এই ভয়ে, তিন নির্যাতিতার, একজন ভাই ও বাবাকে নিয়ে জঙ্গলের দিকে পালিয়ে যান। পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। কিন্তু থানায় যাওয়ার পথে তাদের পথ আটকায় জনতা। তাদের পুলিশি হেফাজত থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়। অভিযুক্তদের একজন সেই সময় বাজারে বন্ধুর সঙ্গে মদ্যপান করছিলেন। হট্টোগোল থেকে তিনি সেদিকে এগিয়ে যান। ভিড়ের মধ্যে অভিযুক্তরা দেখেছে, কীভাবে লোক দুই মহিলার কাপড় ছিঁড়ে দেয়। আদেশে বলা হয়েছে অপর এক অভিযুক্ত জীবন তার মোবাইল স্মার্টফোন বের করে তার মোবাইল ফোন থেকে আদিবাসী মহিলাদের নগ্ন প্যারেডের ভিডিও রেকর্ড করেন। জীবন তার খুড়তুতো ভাইয়ের সঙ্গে (যাকে গ্রেফতারও করা হয়েছে) ভিডিওটি শেয়ার করেন।
ঘটনার আগে, অরুণ "তার নিজের বাড়িতে স্থানীয় তিন ভাইয়ের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ সেরে বাইরে বেরিয়ে আসেন, তখন তিনি "একটি বিশাল জনতাকে দেখেন যারা" থানার ভিতরে প্রবেশ করছে। আদেশে বলা হয়েছে যে তিনি "শুধু দূর থেকে দৃশ্যটি দেখেছিলেন", কিন্তু "কিছু মিনিট পরে, জনতা থানা থেকে বেরিয়ে এলে তিনিও ভিড়ের মধ্যে মিশে কাছাকাছি কুকি গ্রামের দিকে এগিয়ে যান"। এরই মধ্যে অভিযুক্ত তার স্ত্রীর কাছ থেকে ফোন পান। তারপর তিনি বাড়ির দিকে রওনা দেওয়ার সময় একটি ড্রেনে দুটি লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। ঠিক সেই সময় তিনি দেখেন দু’ই বিবস্ত্র মহিলা ছুটে আসছেন। সঙ্গে সঙ্গে সে তাদের দিকে ঢিল ছুঁড়তে থাকে। আক্রমণের শিকার হয়ে, দুই মহিলা তাদের ছেঁড়া জামাকাপড় তুলে নিয়ে… পালিয়ে যায়”।